চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃবাংলাদেশ জাতীয় দলের ওপেনার সৌম্য সরকারের বিয়ের অনুষ্ঠান গত বুধবার দিবাগত রাতে খুলনা ক্লাবে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনায় মাঝে ছেদ ঘটেছিল ৪০ মিনিটের, বিয়ের অনুষ্ঠানে বরপক্ষের সাতটি মোবাইল সেট চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটে গেল হুলুসথুলুস কান্ড। চুরির প্রতিবাদ করায় সৌম্য সরকারের মেজো দাদা (ভাই) ইনকাম ট্যাক্সের ডেপুটি কমিশনার প্রনব কুমার সরকারকে খুলনা ক্লাবের কর্মচারীরা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এ সময় চোরের পক্ষ হয়ে ক্লাবের কয়েকজন কর্মচারী ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে। বর-এর আত্মীয়-স্বজনদের উপর ক্লাবের কর্মচারীরা দফায় দফায় হামলা চালায়। পরে অবশ্যই চোরচক্রের দু’জনকে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোর্পদ করা হয়। আটক দু’জন হচ্ছে ঢাকার শ্যামপুরের সিরাজুল ইসলামের ছেলে রাসেল (২৭) ও ভাষানটেকের আব্দুল মান্নানের ছেলে সেলিম (৩০)।
খুলনা থানার এস আই টিপু সুলতান জানান, রাতে গণধোলাইয়ের শিকার দু’জন থানা হাজতে রয়েছে। তাদের নামে মামলা প্রক্রিয়াধীন। বাদী হচ্ছেন সৌম্য পরিবারের সদস্য সুখময় সরকার। রাসেলের নামে শ্যামপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। দু’জনেই চিহ্নিত চোর চক্রের সদস্য। সৌম্যর বিয়ে অনুষ্ঠানে তারা চুরি করার জন্য ঢাকা থেকে খুলনা আসে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রায় পাঁচশ’ বরযাত্রী নিয়ে সৌম্য সরকার খুলনা ক্লাবে প্রবেশ করেন। এ সময় তিনটি মোবাইল ফোন চুরি হয়। রাত ১০টার দিকে মালা বদলের আগে আরও চারটি মোবাইল ফোন চুরির ঘটনা ঘটে। সৌম্যর বাবা ও বন্ধু অলিসহ বর যাত্রীদের সাতটি মোবাইল সেট চুরি হওয়ার ঘটনায় হট্টগোল শুরু হলে মালাবদল বন্ধ হয়ে যায়। পরে দুই চোরকে ধরে গণধোলাই দেয়া হয়।
সৌম্য সরকারের মামা স্বদেশ কুমার সরকার বলেন, ভিড়ের মধ্যে গেট থেকে ঢোকার সময় দ্বীনবন্ধু মিত্রের মোবাইল চুরি হয়। এরপর সৌম্যর বাবা, বন্ধু অলিসহ বর যাত্রীদের ৭টি মোবাইল চুরি হয়। চোরদের হাতেনাতে ধরে ফেললে খুলনা ক্লাবের কর্মচারীরা আমাদের ওপর হামলা করেন।
সৌম্যর বাবা কিশোরী মোহন সরকার বলেন, ‘খুলনা ক্লাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো না। নিরাপত্তা টিম সক্রিয় থাকলে এই ধরনের ঘটনা ঘটতো না। নিরাপত্তা টিমের দুর্বলতার কারণে বরযাত্রীদের কয়েকজনকে হেনস্থা হতে হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোবাইল ফোন চুরি হওয়ার পর হারানো মোবাইল নম্বরে কল দেন সৌম্যের স্বজনরা। তখন একজনের কাছে মোবাইল বেজে ওঠে। তাকে আটক করে তল¬াশি করে তার কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। পরে পুলিশ ও ক্লাব কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন লোকজন সৌম্যের অভিভাবকদের সাথে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন।
খুলনা সদর থানার ওসি আসলাম বাহার বুলবুল বলেন, মোবাইল চুরিকে কেন্দ্র করে খুলনা ক্লাবের স্টাফ ও বরযাত্রীর লোকদের সাথে ঝগড়া হয়েছে। সেখানে কাউকে মারধরের ঘটনা ঘটেনি, তবে ভিড়ের মধ্যে কারো গায়ে একটু ধাক্কা লাগতে পারে। দুই চোর থানায় আটক আছে। তাদের কাছ থেকে মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হচ্ছে।
খুলনা ক্লাবের সভাপতি প্রফেসর ডাঃ কাজী হামিদ আসগর বলেন, “চুরিকৃত মোবাইল সেট উদ্ধার হয়েছে; চোরেরা বহিরাগত। অতিথিদের সাথে ঢুকে পড়েছিল। তবে সৌম্যের দাদা’র লাঞ্ছিত হয়েছেন অভিযোগ সত্য নয়। চোর ধরে তারা গণপিটুনি দিয়ে মেরেই ফেলবে, এ সময় ক্লাবের স্টাফরা না মেরে পুলিশে সোপর্দের পরামর্শ দিয়েছে মাত্র।”
প্রসঙ্গত, খুলনার মেয়ে প্রিয়ন্তি দেবনাথ পূজার সাথে খুলনা ক্লাবেই সাতপাকে বাধা পড়লেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার সৌম্য সরকার। গত বুধবার রাতে জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করলেন এই তারকা ক্রিকেটার। প্রিয়ন্তি দেবনাথের বাবা গোপাল দেবনাথ প্রবাসী ব্যবসায়ী এবং মা মাধবী দেবনাথ গৃহিণী। তাদের বসবাস খুলনা শহরের টুটপাড়া এলাকায়। পূজা বর্তমানে ও লেভেল হায়ার সেকেন্ডারিতে (এইচএসসি) পড়ছেন ঢাকার একটি কলেজে। তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট।