সমালোচনার মুখে স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা থেকে প্রয়াত মো. আমির হামজার নাম বাদ পড়েছে। তাকে বাদ দিয়ে শুক্রবার নতুন তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
আমির হামজাকে বাদ দিয়ে নতুন করে কাউকে ‘সাহিত্য’ ক্ষেত্রে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়নি। সংশোধিত তালিকা অনুযায়ী এবার ৯ জন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন। আগের তালিকা অনুযায়ী ১০জন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ১টি প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২২ দেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে পদক পাচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী, শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা (বীর বিক্রম), আবদুল জলিল, সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, মরহুম মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস ও মরহুম সিরাজুল হক।
চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলাম এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। সাহিত্যে মো. আমির হামজা এবং স্থাপত্যে মরহুম স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। এবার প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিডব্লিউএমআরআই) এ পুরস্কার পাচ্ছে।
পুরস্কার ঘোষণার পরপরই দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আমির হামজাকে নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়। তিনি ১৯৭৮ সালে মো. শাহাদাত হোসেন ফকির নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার মামলার এক নম্বর আসামি ছিলেন। ওই মামলায় যে ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল তাদের মধ্যে আমির হামজা একজন।
তবে গণমাধ্যমের কাছে খুনের মামলার আসামি হওয়ার কথা স্বীকার করলেও সেই মামলায় আমির হামজার দণ্ড পাওয়ার কথা অস্বীকার করেন তার বড় ছেলে মো. আলী মর্তুজা।
আর তার অপর ছেলে খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান জানান, ৮০র দশকে তাদের এলাকায় একটি মারামারিকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড হয়। সেখানে তার বাবাসহ এলাকার একাধিক মানুষের নামে মামলা হয়। ওই মামলায় তিনি (আমির হামজা) কয়েকবছর কারাগারে ছিলেন। পরে বেকসুর খালাস পান।
এটিকে স্থানীয় গ্রামীণ রাজনীতির এটি একটি অংশ হিসেবে দাবি করে আছাদুজ্জামান বলেন, ‘গ্রামে এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কারা জীবনেও কবি আমির হামজা প্রচুর লেখালেখি করেন।’
সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে সরকার। পরে শুক্রবার সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। যেখানে সাহিত্য ক্যাটাগরিতে আমির হামজার নাম বাদ দিয়ে বাকি ৯ ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পুরস্কার। সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। স্বাধীনতা পুরস্কারের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ৫ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেট মানের ৫০ গ্রামের স্বর্ণপদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।