বগুড়ার শিবগঞ্জে পোনা মাছ ব্যবসায়ী শিমুল মিয়াকে হাত-পা ভেঙে হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে প্রধান আসামি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও বিহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম ‘করোনা নাটক’ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রিপোর্টে নেগেটিভ এলেও তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন হত্যাকাণ্ডের আগে থেকেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন।
তবে মহিদুলের গ্রেফতারের দাবিতে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে বিহার বন্দরে শত শত মানুষ মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন।
মামলার বাদী নিহত শিমুলের ভাই বিহার ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রায়হান আলী যুগান্তরকে জানিয়েছেন, তার ভাইকে অনৈতিক কাজে ব্যবহার ও দলে নিতে ব্যর্থ হয়ে হত্যা করা হয়েছে। মহিদুল চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা করেছেন।
তিনি আরও জানান, মহিদুল চেয়ারম্যান হত্যার দায় থেকে বাঁচতে করোনা আক্রান্তের নাটক করছেন এবং টাকা দিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় রিপোর্ট করেছেন। মামলাটি তদন্তে পিবিআইয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর আবদুস সবুর যুগান্তরকে জানান, আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
পুলিশ ও এজাহার সূত্র জানায়, পোনা মাছ ব্যবসায়ী শিমুল মিয়া বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ইউনিয়নের মোন্নাপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে। তিনি গত ২১ ডিসেম্বর একটি ধর্ষণ মামলায় হাজিরা দিতে বগুড়ার আদালতে যান।
বাড়ি ফেরার পথে বগুড়া সদরের টেংরা বন্দরে সিএনজি অটোরিকশা থেকে নামেন। তখন ইউপি চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা তাকে টেনেহিঁচড়ে মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করে। দুর্বৃত্তরা মারপিট করে তার হাত-পা ভেঙে ফেলে।
এতে তিনি জ্ঞান হারালে মৃত ভেবে তাকে বস্তায় তুলে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের আলীপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে দেয়া হয়। জ্ঞান ফেরার পর শিমুল বাঁচার আকুতি জানালে পথচারীরা তাকে ফুলপুকুরিয়া বাজারে পল্লীচিকিৎসকের কাছে নেয়ার চেষ্টা করলে পথে তার মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে ২১ ডিসেম্বর রাতে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ২২ ডিসেম্বর লাশটি গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে নিহতের বড় ভাই ইউপি সদস্য রায়হান ইসলাম মঙ্গলবার রাতে গোবিন্দগঞ্জ থানায় ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহিদুল ইসলামসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
এদিকে মহিদুল চেয়ারম্যান এ হত্যার দায় থেকে বাঁচতে শিমুল হত্যার আগে থেকে তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে প্রচারণা চালান।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছেন, মহিদুল ইসলাম গত ২১ ডিসেম্বর করোনা শনাক্তে ওই হাসপাতালে নমুনা দেন (সিরিয়াল নং-৫৯৭০)।
পরদিন বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পিসিআর ল্যাব থেকে দেয়া রিপোর্টে তিনি নেগেটিভ হন। অর্থাৎ তিনি করোনা আক্রান্ত হননি। কিন্তু তিনি প্রশাসনকে ভুল বোঝাতে তার ফেসবুক আইডিতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
মহিদুলকে গ্রেফতারের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকালে শিবগঞ্জের বিহার বন্দরে শত শত মানুষ বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন।
স্থানীয়রা অবিলম্বে মহিদুলকে গ্রেফতার ও তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। অভিযুক্ত বিহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম তার ফোন বন্ধ রেখে আত্মগোপন করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।