বাংলাদেশের হজযাত্রীদের সেবা দিতে সৌদি আরব যাচ্ছেন ৫৩২ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ তালিকায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, চিকিৎসক থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা থাকছেন। এতে সরকারের খরচ হবে অন্তত ২৪ কোটি ৫৭ হাজার ৮৪ হাজার টাকা।
স্বাভাবিক সময়ে প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ মুসল্লি পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়ে থাকেন। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর সৌদি আরবের বাইরের কেউ হজ করার সুযোগ পাননি। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সৌদি সরকার এবার সারা বিশ্বের ১০ লাখ মানুষকে হজ পালনের অনুমতি দিচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে এ বছর সাড়ে ৫৭ হাজার মুসল্লি হজব্রত পালনে সৌদি আরবে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন চার হাজার মুসল্লি। বাকিরা যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
প্রতি বছরই হজ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সৌদি আরবে পাঠানো হয়। এই দলে থাকেন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, চিকিৎসকসহ নানা পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এ বছর কতজন কর্মকর্তা-কর্মচারী সৌদি আরব যাচ্ছেন জানতে চাইলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেন, ‘এখানে অনেকগুলো ক্যাটাগরি আছে। একটি হলো প্রতিনিধি দল। ১০ জনের এই দলে মন্ত্রী বা সচিবরা থাকতে পারেন। আমাদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বা অন্য সদস্যরাও থাকতে পারেন।
‘এ ছাড়া ৪০ জনের একটি প্রশাসনিক টিম আছে। এই টিমে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব বা উপসচিবরা থাকেন। এ রকম প্রত্যেক সেক্টরেই কোটাভিত্তিক ভাগ করা আছে। যেমন ডাক্তার কতজন যাবেন বা নার্স কতজন যাবেন তাদের একটি কোটা আছে। এখানে সবই কোটাভিত্তিক ভাগ করা আছে। সব মিলিয়ে ৫৩২ জন যাবেন।
সৌদি সরকারই এই বিভাজনটা করে রেখেছে, আমাদের করা নয়। তারা পাঠিয়েছে, আমরা সেটা করার চেষ্টা করছি।’
এবার সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের জন্য দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ প্যাকেজটি হলো ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। আর সর্বনিম্নটি হলো ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ টাকা। সর্বনিম্ন প্যাকেজটি ধরে হিসাব করলেও যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সৌদি আরব যাচ্ছেন তাদের পেছনে সরকারের খরচ হবে ২৪ কোটি ৫৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
চলতি হজ মৌসুমে বছরের প্রথম হজ ফ্লাইট ৩১ মে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা। শুরুর ফ্লাইটে ৪১৯ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে যাওয়ার কথা রয়েছে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যান্য বছর হজ মৌসুমে হজযাত্রীদের সহায়তা করতে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ লোক সৌদি আরবে যেতেন। এবার যাচ্ছেন মাত্র ৫৩২ জন। বাংলাদেশ থেকে এবার হজে যাচ্ছেন অন্য সময়ের তুলনায় অর্ধেক। সে হিসাবে ৯০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী যাওয়ার কথা। সেখানে এবার যাচ্ছেন মাত্র ৫৩২ জন।’
হজযাত্রীরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থেকে তেমন কোনো সেবা পান না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি। বিগত সময়ে যারা গেছেন, আল্লাহর মেহমানদের সেবা করতেই গেছেন। সেবাদানে ত্রুটি করে থাকলে আল্লাহর কাছে তাদের দায়বদ্ধতা আছে; সরকারের কাছেও আছে। সেটা হয়তো সেভাবে দেখা হয়নি। এবার আমরা খুঁটিনাটি বিষয় আলোচনা করে অতীতের ভুলত্রুটির পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে ব্যবস্থা করেছি।’
এবার হজ হতে পারে ৮ জুলাই (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে)। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ৫৭ হাজার হজযাত্রীর অর্ধেক করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বাকি অর্ধেক বহন করবে সৌদি রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস ও ফ্লাই নাস।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান এ বছর ৭৫টি ডেডিকেটেড ফ্লাইটের মাধ্যমে ৩১ হাজার যাত্রী বহন করবে। যাত্রী পরিবহনে বিগত বছরগুলোর মতোই বহরে থাকা বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হবে।