অনলাইন ডেস্কঃসাতক্ষীরায় দুবৃর্ত্তদের কোপে গুরুতর জখম মোঃ শাহিন মোড়ল (১৫) এখনো আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। যাত্রীবেশী দুর্বৃত্তরা হাতুড়ি অথবা এই জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করেছে ভ্যানচালক কিশোর শাহীনের মাথায়। এতে তার মাথার হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন।
গুরুতর আহতাবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যশোরের কেশবপুরের ভ্যানচালক কিশোর শাহীনের বর্তমান অবস্থার কথা জানানোর সময় এ কথা বলেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডাঃ অসিত চন্দ্র সরকার।
এর আগে শনিবার রাত ১০টায় শাহিনকে ঢামেকে ভর্তি করা হয়। পরে রাত ১২টায় তার অপারেশন শুরু হয়, শেষ রাত সোয়া ৩টায়। পরে শাহিনকে ওয়ান স্টপ আইসিইউতে রাখা হয়। রবিবার সকালে তাকে জেনারেল আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তার চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আট সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে।
এ বোর্ডের প্রধান ঢামেকের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ অসিত চন্দ্র বলেন, শাহীনের মাথার আঘাত খুবই গুরুতর। মাথার হাড় ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেছে। আমরা ধারণা করছি, হাতুড়ি অথবা এই জাতীয় কিছু একটা দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়েছে। এরকম অনেক রোগী অস্ত্রোপচারের পর ভালো হয়েছে। কিন্তু শাহীনের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে বিধায় তার অবস্থা সংকটাপন্ন। শনিবার রাতে শাহীনের অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচার শেষে রাত সোয়া ৩টায় তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়।
ডাঃ অসিত চন্দ্র আরও বলেন, এক-দুই দিন না গেলে শাহীনের অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না। আগামীকাল (সোমবার, ১ জুলাই) আবার তার সিটি স্ক্যান করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অস্ত্রোপচার করার পরে কারো কারো ২ থেকে ৩ দিন পরও জ্ঞান ফিরে। শাহীনের চিকিৎসার সব কিছুই আমরা মনিটরিং করছি।
ঢামেকের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, শাহিনের মাথায় ধারালো অস্ত্রের গুরুতর আঘাত রয়েছে। তার অবস্থা গুরুতর। গতকাল রাতে তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এর পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি। তার অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়।
নাসির উদ্দিন জানান, হাসপাতালের পক্ষ থেকেই শাহিনের চিকিৎসার জন্য যাবতীয় সব ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তার চিকিৎসার জন্য এরই মধ্যে নিউরোসার্জারির বিভাগীয় প্রধানকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। শাহিনের চিকিৎসা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন শনিবার রাতে ঢামেক হাসপাতালে শাহিনের সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহিনের চিকিৎসার দায়িত্বভার নিয়েছেন।
অপরদিকে যাত্রীসেজে কিশোর শাহিনকে কুপিয়ে আহত করে তার ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশ বলছে, সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে তারা গ্রেফতার হবে। এ ঘটনায় পাটকেলঘাটা থানায় শাহিনের বাবা হায়দার আলী অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন।
অন্যদিকে সাতক্ষীরা-৩ আসনের সাংসদ ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. আ ফ ম রুহুল হক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাহিনের চিকিৎসার খোঁজখবর নিয়েছেন। এদিকে শাহিনের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তার মা খাদিজা বেগম।
এর আগে শুক্রবার দুপুরে যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের হায়দার আলী মোড়লের ছেলে কর্মজীবী কিশোর শাহীনের ভ্যান যাত্রীবেশে ভাড়া নেয় ভদ্রবেশী দুর্বৃত্তরা। সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়ায় নিয়ে রাস্তার দুধারে পাট ক্ষেতের নির্জন স্থানে নিয়ে শাহীনের মাথা ফাঠিয়ে রক্তাক্ত করে এ পরিবারের শেষ সম্বল ভ্যানটি নিয়ে পালিয়ে যান তারা। ওখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকে শাহীন। পরে জ্ঞান ফিরলে শাহীনের কান্নার শব্দে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে থানায় সংবাদ দেয়। কিশোর ভ্যান চালককে উদ্ধার করে প্রথমে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে অবস্থার অবনতি হওয়ায় শাহিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।