হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও প্রতারণার প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে র্যাব। হেলেনা জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার (৩০ জুলাই) বিকেলে র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা দায়ের হবে বলেও জানান খন্দকার আল মঈন। এর মধ্যে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, মাদকদ্রব্য আইন এবং অনুমোদনহীন আইপি টিভি ‘জয়যাত্রা’র মাধ্যমে যারা প্রতারিত হয়েছে তারা অভিযোগের ভিত্তিতেও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, হেলেনা জাহাঙ্গীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গের মানহানি ও সুনাম নষ্ট করেছেন। এমনকি খ্যাতি লাভের আশায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ ছড়িয়ে সন্মানিত ব্যক্তিদের বিব্রত করতেন। এছাড়াও প্রবাসে থেকে নানা কারণে আলোচিত সিফাত উল্লাহ সেফুদার সাথে হেলেনা জাহাঙ্গীরের যোগাযোগ ও লেনদেন রয়েছে বলেও নিশ্চিত হয়েছে র্যাব।
র্যাবের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, নিজের উচ্চাভিলাষী স্বপ্ন বাস্তবায়নে বেশ কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল করাতেন। এছাড়াও তার ‘জয়যাত্রা’ টিভির অনুমোদন না থাকলেও অফিস থেকে অননুমোদিত যন্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। জয়যাত্রা টেলিভিশনে কর্মী নিয়োগের মাধ্যমে চাঁদাবাজির প্রমাণ মিলেছে বলেও জানিয়েছে র্যাব।
এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার গুলশানে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র্যাব। পরে মিরপুরে হেলেনার মালিকানাধীন জয়যাত্রা আইপিটিভির কার্যালয় এবং জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন ভবনেও অভিযান চালায় র্যাব।
রাতের অভিযান শেষে হেলেনাকে আটকের কারণ জানতে চাইলে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয় বেশকিছু অভিযোগের ভিত্তিতে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় অভিযান চালানো হয়। প্রায় চার ঘন্টার দীর্ঘ অভিযানে তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, হরিণের চামড়া, ক্যাসিনো খেলার সরঞ্জাম, বিদেশি মুদ্রা, ওয়াকিটকিসহ বেশ কিছু অবৈধ সরঞ্জাম উদ্ধারের কথা জানায় র্যাব।
বেশ কিছুদিন ধরেই নানা কারণে আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। সম্প্রতি আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামে একটি ভুঁইফোড় সংগঠনের সভাপতি হিসেবে নাম আসায় নতুন করে তাকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সে পোস্টারে দেখা যায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নেতা বানানো ও পোস্ট দেয়ার ঘোষণা। এরপরই অব্যাহতি দেয়া হয় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটির পদ থেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হন হেলেনা জাহাঙ্গীর। এরপরই ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রশ্ন ওঠে তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে। কীভাবে তিনি আওয়ামী লীগে পোস্ট পেলেন তা নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়।
শুরুতে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা হলেও শেষে নাম লেখান রাজনীতিতে। অল্পদিনে তাতেও সফল হন। স্থান পান আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটিতে। তার আগে গত বছরের ডিসেম্বরে কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। এমনকি কুমিল্লার এমপি আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে ফাঁকা হওয়া আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন হেলেনা জাহাঙ্গীর।