মোমেনা বেগম (৫২) হতভাগা এক নারী। হারিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ এক যুগ পর দেশে ফিরে এলেও তার জন্য অপেক্ষা করেনি সময়।
স্বামী বিয়ে করেছেন, মা-বাবা মারা গেছেন আর মা হারানো পাঁচ সন্তানের আশ্রয় হয় তাদের দুই খালার বাসায়। মোমেনার জীবনটা যেন সিনেমা-নাটকের গল্প।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কামারদহ ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামের মৃত আজিজার রহমানের মেয়ে মোমেনা বেগম। বিয়ে হয় পলাশবাড়ীতে। সেখানে মানসিক অসুস্থার কারণে মাঝেমধ্যেই স্বামীর বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতেন তিনি। হঠাৎ এভাবে একদিন দুই মেয়ে ও তিন ছেলে রেখে নিরুদ্দেশ হন মোমেনা। এরপর হাঁট হাঁটতে দেশের সীমানা পেরিয়ে চলে যান নেপালের একটি জঙ্গলপূর্ণ এলাকায়। নির্জন এলাকা থেকে নেপালের মানবসেবা আশ্রমের কর্মীরা উদ্ধার করে আশ্রমে নিয়ে আসেন তাকে। সেখানে কেটে যায় ১২টি বছর।
এরপর যখন মোমেনার স্মৃতি ফিরে আসে তখন তিনি আশ্রম কর্তৃপক্ষের কাছে তার জীবনের ঘটনা খুলে বলে। মোমেনা জানান বাংলাদেশে তার স্বামী সংসার, ছেলে মেয়ে রয়েছে। তার কথামত আশ্রমের কয়েকজন তরুণ কর্মী তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) মোমেনাকে নিয়ে নেপালি তরুণরা হাজির হন পলাশবাড়ী স্বামী কদ্দুস আলীর বাড়ীতে। কিন্তু সংসার থেকে মোমেনা হারিয়ে যাওয়ার ২ বছর পরেই কুদ্দস মিয়া অন্যত্র বিয়ে করেন। তাই বর্তমান স্ত্রীর সম্মতি না থাকায় তাকে আশ্রয় না দিয়ে ফিরিয়ে দেন স্বামী কুদ্দুস। পরে মোমেনা বেগমকে নিয়ে যাওয়া হয় তার বাবার বাড়িতে। সেখানে মোমেনাকে ফিরে পেয়ে সন্তান-স্বজনদের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে আনন্দাশ্রু। মাকে ফিরিয়ে দেওয়ায় নেপালি মানবসেবা আশ্রমের কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় সন্তান ও এলাকাবাসী।
ঘোড়ামারা গ্রামের রাশেদ বাংলানিউজকে জানান, মানুষ মানুষের জন্য এটি আবারো প্রমাণ করল নেপালি মানবসেবা আশ্রমের কর্মীরা। জাত-পাত ভুলে মোমেনাকে মা হারানো সন্তানদের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে অন্যন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল তারা।
এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামকৃষ্ণ বর্মণ বাংলানিউজকে জানান, মোমেনার বাবা মারা গেছেন। যেহেতু অসহায় দুস্থ সেহেতু তাকে পুনর্বাসন করা হবে।