আগামী ১৪ থেকে ২০ এপ্রিল দেশজুড়ে কঠোর লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জরুরি সেবা ছাড়া বন্ধ থাকবে সব ধরনের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস ও কল-কারখানা। চলবে না যানবাহনও।
শুক্রবার (৯ এপ্রিল) সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেছেন, নিয়ম অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
তিনি বলেছেন, ‘এই লকডাউনে শুধু জরুরি সেবা চালু থাকবে। কোনোভাবেই মানুষ ঘরের বাইরে আসতে পারবে না। রোববার প্রজ্ঞাপন জারি করে বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার ও মৃত্যু কমাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য সার্বিক কাজ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে সরকার, যা শেষ পর্যন্ত ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত। তবে এই বিধিনিষেধ গণপরিবহন ও দোকান-বিপণিবিতানের জন্য শিথিল করা হয়। দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারেও উর্দ্ধগতি লক্ষ্য করা গেছে।এখন ঠোর লকডাউন দেওয়া গেলে হয়তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যবিদরা।
বর্তমানে দেশে প্রতিদিন সাত হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, মৃত্যুও বেড়েছে। করোনার প্রথম ঢেউয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যু যেখানে ছিল ৬৪, দ্বিতীয় ঢেউয়ে এক দিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ সংখ্যা ৭৪ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।
এর আগে শুক্রবার (৯ এপ্রিল) সকালে সরকারি বাসভবনে ব্রিফিংয়ে সর্বাত্মক লকডাউনের ইঙ্গিত দেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘দেশে করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার। সঙ্গে বাড়ছে জনগণের অবহেলা ও উদাসীনতা। এমন অবস্থায় জনস্বার্থে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে।’
চলমান এক সপ্তাহের লকডাউনে জনগণের উদাসীন মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি বলেও মন্তব্য করেন কাদের।
এদিকে, করোনা বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আরও দুই সপ্তাহের লকডাউনের সুপারিশ করেছেন দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত কারিগরি কমিটির বিশেষজ্ঞরা। সিটি করপোরেশন এলাকায় পূর্ণ লকডাউনের সুপারিশও করেন তারা।
পরিস্থিতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ে টেকনিক্যাল কমিটির ৩০তম অনলাইন বৈঠকে এ সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এরপর শুক্রবার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ সই করা এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, করোনা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কারিগরি কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত একমাস ধরে করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছে। তা নিয়ন্ত্রণে ১৮ দফা নির্দেশনা জারি হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিধিনিষেধ দিলেও তা না মানায় করোনা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। ফলে সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বেড়েছে।
‘এই সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আরও দুই সপ্তাহের লকডাউন করা যেতে পারে। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনের এলাকা ও উচ্চ সংক্রমণ এলাকাগুলোতে দুই সপ্তাহের পূর্ণ লকডাউন দেয়া যেতে পারে।’
এর আগে, বৃহস্পতিবার বিসিএস প্রশাসনের একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সামনে কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে এমন ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও বলেছিলেন, সবকিছু বিবেচনা করে পরিকল্পিত নির্দেশনা আসছে।