চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃআফগানিস্তানে ১৮ বছরের যুদ্ধের অবসানে দেশটির জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। গতকাল শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং শীর্ষ তালেবান নেতাদের উপস্থিতিতে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুসারে, আগামী ১৩৫ দিনের মধ্যে সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে এবং ১৪ মাসের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে আফগানিস্তানে মোতায়েন সব সেনা প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্ররা। অন্যদিকে আফগানিস্তানে নতুন কোনো হামলা চালাবে না এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতেও জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদাকে কোনো সহিংস তৎপরতা চালাতে দেবে না তালেবানরা। তবে চুক্তিতে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার শঙ্কায় এটি দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেন অনেকে।
আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি এই যুদ্ধের অবসানে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগেই সেখানে পৌঁছে যান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ওয়াশিংটন থেকে দোহায় নেমে কাতারের আমিরের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। কাবুলে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস এক টুইট বার্তায় জানায়, আফগানিস্তানের জন্য স্মরণীয় একটি দিন শনিবার।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টা আগে জাতির কল্যাণের জন্য আফগানিস্তানে যে কোনো ধরনের হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে সব যোদ্ধাকে নির্দেশ দেয় তালেবান। চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদারের নেতৃত্বে গোষ্ঠীটির ৩১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল কাতারে যান। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মার্কিন বিশেষ দূত জালমে খলিলজাদ ও মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদার। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। দোহার শেরাটন হোটেলে অনুষ্ঠিত ওই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আরো অংশ নেন পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তানের সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি, যুক্তরাষ্ট্র তাদের অঙ্গীকারের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবে। তিনি বলেন, তালেবানের ভূখণ্ডের আকাশে বিদেশি সামরিক যুদ্ধবিমান এখনো উড়ছে। এটা বিরক্তিকর এবং উসকানিমূলক। কিন্তু যোদ্ধারা আমাদের নির্দেশের প্রতি অটল রয়েছে। দেশটির ক্ষমতা থেকে অপসারিত হলেও এখনো প্রায় ৪০ শতাংশ ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তালেবানের হাতে। এদিকে আফগানদের আশা, এই চুক্তির ফলে দেশের ভেতরে আমেরিকার দীর্ঘদিনের যুদ্ধের অবসানের পথ তৈরি হবে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ও ওয়াশিংটনে আল-কায়েদার হামলার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দেশটিতে প্রতিশোধমূলক হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সময় ওয়াশিংটন অভিযোগ করে, জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদা এবং সংগঠনটির প্রধান ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে তালেবানের।
প্রায় দেড় যুগ ধরে চলা এ যুদ্ধে তিন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয়ের পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে বলে ধারণা করা হয়। তবে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ যুদ্ধে ৩২ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, আফগান যুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর ৫৮ হাজার এবং বিরোধী পক্ষের ৪২ হাজার সৈন্য নিহত হন। পাশাপাশি, জঙ্গিদের সঙ্গে যুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনীর সাড়ে তিন হাজার সেনা নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় আড়াই হাজার সৈন্যই যুক্তরাষ্ট্রের। যুদ্ধের একপর্যায়ে এক লাখের বেশি মার্কিন সেনার উপস্থিতি ঘটে দেশটিতে। যুদ্ধে অংশ নেয় ৪০টির বেশি দেশের সেনারা।
ক্ষমতায় আসার পর থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে সৈন্যদের ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রæতি দেন। কিন্তু নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করলে তা তালেবান যোদ্ধাদের আন্তর্জাতিক বৈধতা দেবে। এর আগে গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আফগানিস্তানে মোতায়েন ১৩ হাজার মার্কিন সৈন্যের মধ্যে থেকে প্রায় ৫ হাজার ৪০০ সৈন্য ফিরিয়ে আনার পথ তৈরি হবে। পশ্চিমা বিশে^র ন্যাটোভুক্ত অন্যান্য দেশের ৪ হাজার সৈন্যকেও তালেবানের সহিংসতার মাত্রার ওপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হবে বলে জানান তিনি।