তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে প্রথম ইনিংসে মিলেছিল ৪৪ রানের লিড। আর তাতেই জেগেছিল পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় আসরে জয় দিয়ে শুরুর সম্ভাবনা। কিন্তু ব্যাটারদের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যর্থতায় উল্টো বড় পরাজয় দিয়ে শুরু হলো টাইগারদের নতুন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের জয় ৮ উইকেটের ব্যবধানে। বাংলাদেশের দেওয়া ২০২ রানের লক্ষ্য মাত্র ২ উইকেট হারিয়েই করে ফেলেছে বাবর আজমের দল। বাংলাদেশের হয়ে উইকেট দুটি নেন মিরাজ আর তাইজুল।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে ৩৩০ রান করে বাংলাদেশ। এরপর পাকিস্তানকে প্রথম ইনিংসে ২৮৬ রানে আটকে দেয় টাইগাররা। এতে ৪৪ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেন মুমিনুল হকরা। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৫৭ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। সব মিলিয়ে জয়ের জন্য ৪র্থ ইনিংসে পাকিস্তানের প্রয়োজন ২০২ রান। ম্যাচের চতুর্থ দিনে কোন উইকেট না হারিয়ে ১০৯ রান তুলে ফেলে সফরকারীরা।
ম্যাচের শেষ দিনে পাকিস্তানের প্রয়োজন পড়ে মাত্র ৯৩ রান, হাতে ১০ উইকেট আর ৯৬ ওভার। আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটম্যান আবিদ আলি ৫৬ ও আব্দুল্লাহ শফিক ৫৩ রান নিয়ে শেষদিনের খেলা শুরু করেন। এবাদত হোসেন ও তাইজুল ইসলামকে শুরু থেকে সমীহ করে খেললেও পরে আগ্রাসী ভূমিকায় দুজন। দিনের ষষ্ঠ ওভারে তাইজুলকে টানা ৩ বাউন্ডারি মারেন আবিদ। পরে আবু জায়েদ রাহি এলে তাকেও ছেড়ে কথা বলেননি সফরকারীরা।
পাকিস্তান দলেরও যেন দ্রুত ম্যাচ শেষ করার তাড়া ছিল। এতে হলো বিপত্তি। ইনিংসের ৪৩তম ওভারে মিরাজকে খেলতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি শফিক। বলে গিয়ে লাগে ভেতরের পায়ে। পার পাননি শফিক। ৭৩ রানে থামে তার ইনিংস। অভিষিক্ত এই ব্যাটসম্যান প্রথম ইনিংসেও খেলেন ৫২ রানের ঝলমলে এক ইনিংস।
নতুন ব্যাটসম্যান আজহার আলি দেখে খেললেও বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকেন আবিদ। ছুটছিলেন সেঞ্চুরির পথে। তবে এ যাত্রায় ভাগ্য সহায় হলো না তার। তাইজুলের হালকা লাফিয়ে ওঠা বলের লাইন হারালেন। বল গিয়ে আঘাত করে আবিদের পেছনের পায়ে। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েও লাভ হয়নি ১৪৮ বল খেলে ৯১ রানে সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
জয়ের বাকি কাজটুকু সারেন আজহার ও অধিনায়ক বাবর আজম। দলকে আর কোন বিপদ হতে না দিয়ে সকালের সেশনেই ম্যাচের ফলাফল এনে দেন দুজন। ৮ উইকেট হাতে রেখে পাওয়া জয়ে আজহার ২৪ ও বাবর ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম একটি করে উইকেট নেন। ২ ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ হারলেও আগামী ৪ ডিসেম্বর শুরু হতে যাওয়া ঢাকা টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকছে বাংলাদেশ দলের সামনে।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম চক্রে একেবারেই সুবিধা করতে পারেনি টাইগাররা। ৯ দলের প্রতিযোগিতায় সবার নিচে অবস্থা ছিল বাংলাদেশ দলের। একমাত্র দল হিসেবে কোন ম্যাচে জয়ের স্বাদ পায়নি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এবার দ্বিতীয় চক্রে ভালো কিছু করার লক্ষ্যে মাঠে নেমে শুরুতেই হোঁচট খেল মুমিনুল বাহিনী। যদিও এবার টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চক্রটি আরও কঠিন বাংলাদেশ দলের জন্য।
চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় আসরে মোট ছয়টি সিরিজের যে তিনটি দেশের মাটিতে, এর কোনোটিতেই প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকা নয়। নিজেদের মাঠে ধীরগতির অসমান বাউন্সের স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়ে যাদের নাকাল করে ছাড়ার সুযোগ এবার আর উন্মুক্ত নেই। বরং মুখ হাঁ করে উল্টো তাদেরই গিলে ফেলার হুমকি দিয়ে রাখছে এমন তিন-তিনটি হোম সিরিজ।
ঘরের মাঠে পাকিস্তানের পর ভারত আর শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর বিপক্ষে নিশ্চয়ই ভুলেও মস্থর উইকেটের পথে হাঁটবে না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড।