টেস্টে দীর্ঘদিন ধরেই অপ্রতিরোধ্য ভারত, বিশেষ করে ঘরের মাঠে একবারে অপরাজেয়। ২০১২ সালের পর থেকে দেশের মাটিতে টেস্টে ভারতের হার কেবল একটিতে। সেটিও বছর চারেক আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ঘরের মাঠে ভারত কতটা দুর্বার সেটা বোঝাতে হয়তো আর কোনো পরিসংখ্যানের প্রয়োজন হবে না।
২০১২ সালের পর আরও একবার ভারত সফর করেছিল ইংল্যান্ড। তবে ২০১৬ সালের সেই সফরে ভারতের কাছে পাত্তা পায়নি ইংলিশ। ৫ ম্যাচের সেই টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ড প্রাপ্তি কেবলই এক ম্যাচ ড্র। নিজেদের মাটিতে সর্বশেষ ১৪ ম্যাচের কোনটিতেই হারে দেখেনি বিরাট কোহলির দল।
এমন পারফরম্যান্সের সুবাদে ফেভারিট হিসেবেই সিরিজ শুরু করেছিল ভারত। তবে সব ইতিহাস, পরিসংখ্যান বদলে দিয়েছে জো রুটের দল। ভারতকে ২২৭ রানে হারিয়ে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেলো ইংল্যান্ড। ফলে ভারতের মাটিতে তাঁদেরকে হারানোর ৯ বছরের আক্ষেপ পূরণ হলো ইংলিশদের। সেই সঙ্গে আইসিসির র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে এসেছে ইংল্যান্ড।
উপমহাদেশের মাটিতে খেলা হলেও পুরো ম্যাচ জুড়েই দাপট দেখিয়ে ইংল্যান্ড। জয়ের জন্য ভারতের কাছে রেকর্ড গড়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল। জিততে হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৪১৮ রান তাড়া করতে ম্যাচ জেতার রেকর্ড ভাঙতে হতো রোহিত শর্মা-চেতেশ্বর পূজারাদের। তবে সেটা তো করে দেখাতেই পারেননি উল্টো কোনো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি তারা।
শেষ দিনে জয়ের জন্য ৩৮১ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। তাতে ভালো শুরুর বিকল্প ছিল না ভারতের জন্য। তবে সেটা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। সকালের শুরুতেই জ্যাক লিচের বলে বেন স্টোকসের বলে সাজঘরে ফেরেন ১৫ রান করা পূজারা। এরপর অধিনায়ক কোহলি ও শুভমান গিল মিলে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলেও সেটি দীর্ঘস্থায়ী হতে দেননি জেমস অ্যান্ডারসন।
ডানহাতি এই পেসারের সকালের এক স্পেলেই তাসের ঘরের মতো ঝড়ে পড়ে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ। হাফ সেঞ্চুরি করা গিলকে বোল্ড করার পর ফেরান আজিঙ্কা রাহানে ও রিশভ পান্তকেও। তাতে একটু একটু করে ম্যাচে টিকে থাকার স্বপ্ন ধুলিসাৎ হতে থাকে ভারতের। এদিন থিতু হতে পারেননি প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ৮৫ রান করা ওয়াশিংটন সুন্দর।
শেষ দিকে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে নিয়ে দলের ব্যাটিং বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক কোহলি। যদিও সেটি ম্যাচ জয় কিংবা ড্রয়ের জন্য যথেষ্ঠ ছিল না। ৯ রান করা অশ্বিন ফিরে গেলে ভাঙে তাঁদের দুজনের ৫৪ রানের জুটি। অশ্বিন ফেরার পর দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেননি কোহলি।
স্টোকসের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ৭২ রান করা ভারতীয় অধিনায়ক। ২০১৮ সালের পর এবারই প্রথম টেস্টে বোল্ড আউট হয়েছেন সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। জসপ্রিত বুমরাহ, শাহবাজ নাদিমরা কোনো প্রতিরোধ গড়তে না পারলে শেষ পর্যন্ত ভারত থামে ১৯২ রানে। ইংলিশদের হয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন লিচ আর ৩ উইকেট নিয়েছেন অ্যান্ডারসন।
এর আগে টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে রুটের ডাবল সেঞ্চুরিতে ৫৭৮ রান তুলেছিল ইংল্যান্ড। জবোবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩৩৭ রানে অলআউট ভারত। বিরাট কোহলির দল। ফলে ২৪১ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে ইংলিশরা। যদিও অশ্বিনের বোলিং তোপে মাত্র ১৭৮ রানেই অলআউট হতে হয় তাদের। তখন ম্যাচ জিততে ভারতের সামনে ৪২০ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য দাঁড়ায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড (১ম ইনিংস): ৫৭৮/১০ (ওভার ১৯০.১) (রুট ২১৮, সিবলি ৮৭, স্টোকস ৮২, বুমরাহ ৩/৮৪, অশ্বিন ৩/১৪৬)
ভারত (১ম ইনিংস): ৩৩৭/১০ (ওভার ৯৫.৫) (ওয়াশিংটন ৮৫*, পূজারা ৭৩, বেস ৪/৭৬, অ্যান্ডারসন ২/৪৬)
ইংল্যান্ড (২য় ইনিংস): ১৭৮/১০ (ওভার ৪৬.৩) (রুট ৪০, পোপ ২৮, অশ্বিন ৬/৬১, নাদিম ২/৬৬)
ভারত (দ্বিতীয় ইনিংস): ১৯২/১০ (ওভার ৫৮.১) (কোহলি ৭২, গিল ৫০, লিচ ৪/৭৬, অ্যান্ডারসন ৩/১৭)