চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃটেন্ডার-সম্রাট শামীমের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণকারী সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে কমপক্ষে ১২ কর্মকর্তা গা ঢাকা দিয়েছেন। টেন্ডারবাজি করে অগাথ বিত্তের মালিক হওয়া যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের কাছ থেকে এইসব কমকর্তা বিভিন্ন সময় কমিশন ও উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে শামীমকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এতে গণপূর্তসহ বিভিন্ন দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা এসব কর্মকর্তা নিজেদের নাম ফাঁস হওয়ার আতঙ্কে ভুগছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন ও র্যাবসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে তারা আড়ালে চলে গেছেন। পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউ জানেন না তারা কোথায় আছেন। এমন কি নিজেদের দীর্ঘদিনের ব্যবহৃত ফোনটিও বন্ধ রেখেছেন।টেন্ডার-সম্রাট শামীম কান্ডে গনপূর্ত দপ্তরের রাজশাহী জোন,রংপুর জোন,খুলনা জোন,বরিশাল,সিলেট ও চট্রগ্রাম জোনের কয়েকডজন প্রকৌশলী স্থানীয় আওয়ামীলী ও যুবলীগের প্রভাবশালী নেতারা জিকে শামিমের হয়ে সরকারি বড় বড় কাজের টেন্ডার বাগিয়ে দিতেন । তার বিনিময়ে ঐসব দপ্তরের সরকারী প্রকৌশলী এবং স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা মোটা অংকের টাকা পেতেন টেন্ডার-সম্রাট শামীমের কাছ থেকে ।কোন জোনের বড় কাজ কোন প্রতিষ্ঠান পাবে তা জিকে শামিম আগেই তা ঠিক করে দিতেন । খুলনায় জিকে শামিমের টেন্ডার কানেকশনে রয়েছেন কয়েকজন প্রকৌশলী,আলোচিত কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং খুলনা মহানগরী এলাকার চিহিৃত টেন্ডার সিন্ডিকেট বানিজ্যের সাথে জরিত প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ নেতার নাম ।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১০ বছরে যু্বলীগ নেতা শামীম ১৭ হাজার কোটি টাকার টেন্ডার ভাগ-বাটোয়ারা করেছেন। টেন্ডার বাণিজ্যে তিনি প্রতিটি কাজ বাগিয়ে দিয়ে ২ থেকে ৫ শতাংশ কমিশন নিতেন। এই কমিশনের একটি অংশ চলে যেত তাকে টেন্ডার পেতে সহায়তা করা সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে। অর্ধশতাধিক কর্মকতা শামীমের কাছ থেকে অন্যায় সুবিধা নিলেও উৎকোচ গ্রহণের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরে বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা কয়েকজন কর্মকর্তা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ৪ জুলাই থেকে ১৩ আগস্ট পর্যন্ত মাত্র ৪০ দিনে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার তিনটি কাজ থেকে জি কে শামীম কমিশন পান ২৭ কোটি টাকা। এছাড়া প্রতি বছর তার টেন্ডারবাজির ভাগ-বাটোয়ারা ছিল প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এখান থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তিনি কমিশন হিসেবে পেতেন। তবে পুরো টাকা অবশ্য শামীম একাই লোপাট করতেন । কমিশনের টাকা থেকে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী, দলীয় নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন সংগঠনের ভাগ নিতেন। তবে কমিশনের একটা বড় অংশ উৎকোচ বাবদ চলে যেত তাকে টেন্ডার পেতে সহায়তাকারী সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জি কে শামীমের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও টিপু সুলতান এবং ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই। পাশাপাশি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আক্তারুজ্জামান উৎকোচের বিনিময়ে জিকে শামীমের সব কাজে বৈধতা দিতেন । কিন্তু শামীম গ্রেপ্তারের পর থেকে এ চার কর্মকর্তার কাউ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
গণপূর্তের সাবেক দুই প্রকৌশলী সর্ম্পকে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে বিস্ময়কর তথ্য পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, প্রধান প্রকৌশলী পদে রফিকুল ইসলাম থাকার সময় তার প্রধান সহযোগি ছিলেন, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাই। তাদের সিন্ডিকেটে ছিলেন বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী। রফিকুল ইসলাম সরাসরি ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন আদায় করতেন। গুরুত্বপূর্ণ জোনের দায়িত্ব পালনকারি সব নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীকেও প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের মাসোহারা দিতে হতো রফিককে। ঠিকাদারি কাজ দিতে তিনি আগে থেকেই তিন থেকে ১০ শতাংশ কমিশন নিতেন। এর বাইরে অন্য প্রকৌশলীরা যে কমিশন পেতেন, তাদের কমিশনেও ভাগ বসাতেন রফিকুল ইসলাম। নিজে প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব ছাড়ার আগে একদিনে সবচেয়ে বেশি বদলির রেকর্ড করে গেছেন তিনি।