অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের করা একটি মামলায় বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঢাকা-৫ (ডেমরা-যাত্রাবাড়ী-কদমতলী আংশিক) আসনের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লাকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বৃহস্পতিবার (৭) ঢাকার ১০নং বিশেষ জজ আদালতের বিচারক জয়নাল আবেদীন তাকে খালাস প্রদান করে এ রায় ঘোষণা করেন। এদিন অসুস্থজনিত কারণে এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা আদালতে উপস্থিত হননি। তার পক্ষে আইনজীবী রায় পেছানোর জন্য সময় আবেদন করেন। আদালত সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে রায় ঘোষণা করেন।
এ মামলায় দুদকের পক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আইনজীবী গোলাম হায়দার। অপরদিকে আসামি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সৈয়দ মিজানুর রহমান।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালের ২৯ মে এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার স্ত্রী ও সন্তান এবং তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তির নামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর/অস্থাবর সম্পদের হিসাব (সংযুক্ত সম্পদ বিবরণীয় ফরমে) নোটিশ পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করেন দুদক।
একই বছরের ১০ জুন তিনি নিজ স্বাক্ষরে দুদকের সচিব বরাবর হিসাব দাখিল করেন। হিসাব দাখিলের সাত দিন পর তার সম্পদ বিবরণী যাচাই করার জন্য দুদকের সহকারী পরিচালক সৈয়দ আহমেদকে অনুসন্ধানী কর্মকর্তা নিয়োগ করেন দুদক।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাবিবুর রহমান মোল্লা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এবং জনগণের সর্বোচ্চ স্থানীয় প্রতিনিধির ক্ষমতা প্রয়োগ করে তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ২ কোটি ৩২ হাজার ৫৪৮ টাকা সাত পয়সা অবৈধ সম্পদ অর্জন করে। এ ছাড়াও হিসাব বিবরণীতে বর্ণিত সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে ১ কোটি ৩৮ লাখ এক হাজার ৮০২ টাকা ৫৭ পয়সা সম্পদ প্রদর্শন না করে গোপন করেন।
দাখিলকৃত সম্পদ ও তথ্যাদি সম্পর্কে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন তথ্য প্রদর্শন করে গুরুতর অপরাধ করায় হাবিবুর রহমান মোল্লার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৩ অক্টোবর রমনা থানায় দুদকের সহকারী পরিচালক সৈয়দ আহমেদ তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। তার বিরুদ্ধে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০০৮ সালের ২০ এপ্রিল অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। বছরের ১৪ মে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার সিনিয়ার স্পেশাল জজ আদালত।
মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণের জন্য অভিযোগপত্রে উল্লেখিত ২৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ২১ জন সাক্ষীকে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করেন। সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। বিচার চলাকালে আসামিপক্ষ সাক্ষীদের বিস্তারিত জেরা করেন। সাক্ষ্য গ্রহণের কার্যক্রম সমাপ্ত হওয়ার পর উপস্থিত আসামি হাবিবুর রহমান মোল্লাকে The code of Criminal Procedure, 1898 এর ৩৪২ (আত্মপক্ষ সমর্থন) ধারায় পরীক্ষা করে আদালত।
আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বিচার প্রার্থনা করে এবং কোনো কাগজ দাখিল করবেন না মর্মে আদালতকে অবহিত করেন। রাষ্ট্রপক্ষের পিপি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। যুক্তিতে পিপি বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামি সর্বোচ্চ সাজা পাওয়ার যোগ্য।’