চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ মহালয়া মানেই মা দুর্গার মর্তে আগমন। এই দিনটিতেই পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে শুরু হয় দেবীপক্ষ। এদিন মর্ত্যে দেবীর আগমনের সাথে সাথেই সূচনা হয় মাতৃপক্ষের। আর সেই মাতৃপক্ষকে বরণ করে নিল রাজধানীসহ বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ভোরে আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন মণ্ডপে পূজা ও ভক্তির মাধ্যমে শুরু হলো শারদীয় দুর্গোৎসবের ক্ষণ গণনা। ৪ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজা থেকে শুরু হচ্ছে এবারের দুর্গাপূজা।
রাজধানীর বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে ভোর থেকেই পূজা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মহালয়া পালিত হয়েছে। মহালয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে নেমে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। চণ্ডীপাঠ ছাড়াও মঙ্গলঘট স্থাপন, চণ্ডীপূজা এবং ঢাক-কাঁসা ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে মর্ত্যে আহ্বান জানান ভক্তরা।
রাজধানীর বনানী পূজা মণ্ডপে সকালে মহালয়ার আয়োজন করা হয়। গুলশান-বনানী সার্বজনীন দুর্গাপূজা উদযাপন ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এবার এই মণ্ডপে পূজা আয়োজনের একযুগ পূর্তি হলো। এখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ভোরে আরাধনার মাধ্যমে দেবী দুর্গার আবাহন ছাড়াও এখানে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সকাল ১১টায় এখানে দেশে বরেণ্য শিল্পীরা তুলির আঁচরে ফুটিয়ে তুলবেন নিজেদের শিল্পকর্ম।
এদিকে শনিবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে ভোরে পঞ্চপ্রদীপ জ্বালিয়ে মহালয়া উদ্বোধন করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি দাশ। এরপরেই সেখানে দেবী আরাধনা করা হয়; যেখানে উপস্থিত ছিলেন দেবীভক্তরা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি বলেন, ‘ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এবারের শারদীয় দুর্গোৎসবের জন্য আমরা প্রস্তুত। আজ মহালয়ার মাধ্যমেই মূলত শুরু হয়ে গেলো এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব। আজ প্রসাদ বিতরণ করা হবে। আমাদের প্রতিমা তৈরির কাজও শেষের পথে। এখন ৪ তারিখের অপেক্ষা। সবকিছু সুন্দরভাবে হবে বলেই আমরা আশা করছি।’
সন্ধ্যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
গুলশান-বনানী সার্বজনীন দুর্গাপূজা উদযাপন ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুবল চন্দ্র দাস বলেন, ‘মানুষের ভালোবাসা ও আস্থা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। এক যুগ পথ পরিক্রমার এই ক্ষণে আমরা আশা করছি এবারও দর্শনার্থীরা মায়ের দর্শন করতে আসবেন।’
রাজধানীর বসুন্ধরা সার্বজনীন পূজা কমিটির আয়োজনে বসুন্ধরা এলাকায় আয়োজিত পূজামণ্ডপে বিশেষ আরাধনার মাধ্যমে মহালয়া পালন করা হয়েছে। ভোরে আরাধনার মাধ্যমে দেবী দুর্গার আবাহন করার পাশাপাশি এখানেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বসুন্ধরা সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি শ্রীবাস রয় অপু বলেন, ‘শারদ আবহে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনে দোলা দিচ্ছে সর্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনী সুর। আবহমানকালের এই ঐতিহ্য মিশে আছে বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গেও। আর এই দুর্গোৎসবের শুরু হয় মহালয়ার মাধ্যমে। আমাদের পূজামণ্ডপে সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।’
নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ জানিয়ে বসুন্ধরা সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পবিত্র সরকার সারাবাংলাকে বলেন ‘সার্বিক পূজা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। নিরাপত্তা নিয়েও আমরা সন্তুষ্ট।’
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও এলাকাভিত্তিক পূজা কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এবার সারাদেশে ৩১ হাজার ১০০টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীতে ২৩৭টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজা, যা আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৮ সালে সারাদেশে ৩১ হাজার ২৭২টি মণ্ডপে ও ২০১৭ সালে সারাদেশে ২৯ হাজার ৭৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও রাজধানীতে ২০১৮ তে ২৩৪টি ও ২০১৭ সালে ২২৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেন, ‘এবার পূজামণ্ডপের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৩২ হাজারের কাছাকাছি হতে পারে। সব জায়গার তথ্যই আমরা নেওয়ার চেষ্টা করছি। এ বছরের সার্বিক পূজা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা ৩০ সেপ্টেম্বর একটি সংবাদ সম্মেলন করব।’