চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) এর কার্যালয়ে নকশা অনুমোদনে অনিয়মের বিরুদ্ধে সম্প্রতি অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঐ অভিযানের সময় কেডিএর উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্ত নকশা অনুমোদন বা অনিয়মে উপসহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্বে পড়েনা । নকশা অনুমোদনের কাজ কেডিএ’র অথারাইজড শাখার। কেডিএ’র দায়িত্ব প্রাপ্ত অথারাইজড শাখার প্রধান হলেন মোঃ মজিবুর রহমান। তিনি কেডিএ’র বিভিন্ন প্রকল্পে দায়িত্ব পালন করা আলোচিত এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যাবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এই নকশা অনুমোদনকারী কর্মকর্তাকে দুদক জিজ্ঞাসাবাদ না করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে। দুদকের উচিত অথারাইজড অফিসার মজিবুর রহমানের কেডিএ সংশ্লিষ্ঠ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও তার জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদের বিষয়ে খোঁজ নেয়া। কেডিএ’র অফিসার হয়ে তিনি দির্ঘদিন যাবত কয়েকটি নামে কেডিএর সেবা সংশ্লিষ্ঠ ব্যাবসার সাথে জড়িয়ে নিজের পকেট দিনকে দিন ভারী করছেন। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একদিকে কেডিএকে করছে রাজস্ব বঞ্চিত, অন্যদিকে করছে কেডিএর সেবা গ্রহনকারীরা তার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্লানসহ অন্যান্ন কাজ না করলে তাদের পড়তে হয় নান বিরন্বনায় । লোক চক্ষুর আড়ালে তিনি দির্ঘদিন যাবত কেডিএর সেবামুলক প্রয়োজনীয় নকশা,সয়েল টেষ্ট,ও বোয়িং কাজের ব্যাবসা করে আসছেন। তার প্রতিষ্ঠানের অফিস নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার ৫নং সড়কের ৫৭নং বাড়ির নিচতলায়। প্রথমে তিনি প্রিমিয়ার বোরিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান করেন । এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলতে তার প্রয়োজন হয়েছে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ক্রয় ও সয়েল ল্যাব প্রতিষ্ঠা। কেননা সয়েল টেস্টে সয়েল ল্যাব ও সুউচ্চ বিল্ডিং এর অবকাঠামো নির্মানে প্রয়োজন হয় বোরিং মেশিন। এর জন্য প্রয়োজন যেমন সয়েল টেষ্ট ল্যাব ,পাইল ইন্টারগেটিব মেশিন,পাইল লোড টেস্ট মেশিন,ডিজিটাল সার্ভে মেশিন,লেভেল সার্ভে মেশিন,কাষ্ট ইন সিটু পাইল পাইপ,হাইড্রলিক স্টাটিক পাইল ড্রাইভার,রোটারী পাইল রেগসহ কয়েক কোটি টাকা মুল্যের বিভিন্ন সাপোটিং যন্ত্রপাতি । আর এই সবই যন্ত্রপাতী তিনি ক্রয় করছেন তার বেনামী মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার বোরিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংর(বর্তমান সোহেল সয়েল ইঞ্জিনিয়ারিংর। তিনি এই প্রতিষ্ঠানটি চালান তার খুব ঘনিষ্টজন ম্যানেজার সোহেলকে দিয়ে । বর্তমানে নতুন করে প্রিমিয়ার বোরিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের পরিবর্তন করে তার ম্যানেজার সোহেল এর নামে সোহেল সয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং নামে প্রতিষ্ঠান চালান । ইতিমধ্যে খুলনার বড় বড় সুউচ্চ টাওয়ারের সয়েল টেষ্ট, নকশা অনুমোদন,বোরিং ও সম্পুর্ন বিল্ডিং নির্মানের কাজ তিনি করছেন । বৈকালী মোড়ে ৩০তলা বিলাশ বহুল হোটেল নির্মান, সিডিসি বিল্ডার্সের সোনাডাঙ্গা দ্বিতীয় ফেজের ১০তলা ভবন নির্মানসহ নগরীর বহুতল উচ্চ ভবন নির্মানের নকশা কেডিএর অনুমোদন পেতে হলে প্রিমিয়ার বোরিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা সোহেল সয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যেতে হয় । কাজ করার প্রসঙ্গ নিয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় ম্যানেজার সোহেল ও সাইট ইঞ্জিনিয়ার জামাল খন্দকারের সাথে। তারা জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠান প্যাকেজের ন্যায় কাজ করে । কোন কাজে সম্পুর্ন দেয়া না হলে আমাদের মালিক কাজ করেন না । আমাদের সাথে কোন কাজের ফাইনাল হলেই আমাদের এমডি সাহেবের সাথে কথা বলতে পারবেন । কারন সব সময় স্যার দেখা করার সুযোগ পায় না । কেন পায়না জানতে চাইলে বলেন আমাদের মালিক কেডিএর বড় কর্মকর্তা অথারাইজড অফিসার মজিবুর রহমান সাহেব। তিনি আরো বলেন আপনার কি দরকার শুধু বলেন, আমরা প্লান পাশ থেকে শুরু করে সব বড় বড় সুউচ্চ ভবন বানিয়েছি । এখনো মংলাসহ এই নগরীর বিভিন্ন হাইরাইজ স্থাপনা আমাদের স্যার করেছেন ।
সাইট ইঞ্জিনিয়ার জামাল খন্দকারের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই অফিসে আগমন মালিক মজিবুর রহমানের। তাকে দেখেই চেয়ার ছেড়ে দাড়িয়ে সোহেল ও জামাল সালাম দিচ্ছেন। এ সময় জামাল পরিচয় করিয়ে দেন আমাদের মালিক মজিবুর রহমান সাহেব। কিছুক্ষন বসে জামালকে বাইরে ডেকে বাহিরে নিয়ে কিছু একটা বলে অপেক্ষমান কেডিএর গাড়িতে উঠে চলে যান। এরপর জামাল খন্দকার অফিসে ঢুকে বলেন, দেখছেন স্যার কত বিজি থাকে। স্যার দুপুরের খাবার খেতে এসেছে এখন আবার কেডিএর কর্মস্থলে চলে গেলেন। আমাদের স্যারই প্লান অনুমোদন করেন আপনার কাজ কোন লেভেলের কাজ করবেন বলেন কোন সম্যসা হবে না। এ সময় প্রিমিয়ার বোরিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং একটি ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে বলেন ফের আসলে ফোন দিয়েন ।
জানা গেছে কেডিএর প্লান পাশে সয়েল টেষ্ট ও নকশার জন্য কেডিএ কে রাজস্বের বিনিময়ে অনুমোদিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে পাইনিয়ার সয়েল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, মুন সয়েল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, টেকনো এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, এস এস বোরিং,সাতক্ষীরা সয়েল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংসহ প্রায় ৯/১০টি । এ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি অর্থবছর কেডিএকে নিয়মিত ট্যাক্সসহ রাজস্ব দিয়ে ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছে। অথচ অথরাইজড অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান কেডিএর রাজস্ব ফাকি দিয়ে নিজের ক্ষমতার অপব্যাবহার করে তার প্রতিষ্ঠানকে সম্মৃদ্ধ করছেন ।
এ বিষয়ে কথা হয় টেকনোর মোঃ শাহ আলমের সাথে, তিনি বলেন আমরা দির্ঘদিন যাবত কেডিএকে রাজস্ব দিয়ে কাজ করে আসছি। অথচ দেখা যাচ্ছে কেডিএর অনুমোদন নেই এমন সব প্রতিষ্ঠানের নামে সয়েল টেষ্ট রিপোর্ট দাখিল করা হচ্ছে। আমাদের প্রতি মিটিং এ দুই একটি প্লান অনুমোদন হয় তবে অথারাইজড অফিসারের প্রতিষ্ঠান হলে তো একটু ক্ষমতা দেখাবে । আমাদের প্লান পাশ করতে তিনি গরিমসি করা সত্বেও পাশ হয় তবে সময় নিয়ে । প্রিমিয়ার বোরিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা সোহেল সয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যাপরে তেমন একটা সময়ের প্রয়োজন পড়েনা ।
সরেজমিন দেখা যায়,মজিবুর রহমানের প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি রয়েছে কয়েক কোটি টাকার। আর এই যন্ত্রপাতি রাখার জন্য ময়ুর ব্রিজের ওপার গাজী ফার্নিচারের পাশে প্রায় ২ কোটি টাকা দিয়ে জমি ক্রয় করছেন । ঐ জমিতেই পড়ে আছে তার প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। জমিতে থাকা যন্ত্রপাতি ছাড়াও মংলা বন্দরের ২নং জেটি সহ নগরীর বিভিন্ন হাইরাইচ ও সুউচ্চ ইমারতে চলমান কাজের সাইটে রয়েছে দামী দামী যন্ত্রপাতি। শুধু জমি আর যন্ত্রপাতিই নয় সম্প্রতি তিনি সোনাডাঙ্গা ২য় ফেইজে নব্বই লক্ষ টাকা দিয়ে একটি ফ্লাট নিয়েছেন। ফ্লাটের রুমগুলো সাজাতে এবং ভিতরে আরো চাক চাক্য করতে প্রায় ত্রিশ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। পহেলা অক্টোবর উঠেছেন নিজের ফ্লাটে। মজিবুর রহমান যে টাকা বেতন পান তা দিয়ে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি, নামে বেনামে জমি, ফ্লাট, ব্যাংক ব্যালেন্স করা বর্তমান বাজারে অসম্ভব বলে জানিয়েছেন একটি সুত্র ।
সুত্রটি জানায়,মজিবুর রহমান যে সকল প্রকল্পের দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিটা প্রকল্পে থেকেই অনৈতিক সুবিধা গ্রহন করে তিনি এত টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি খুলনা মংলা মাষ্টারপ্লানের কনসালটেন্ড ফার্ম থেকে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন করেছেন বলে সুত্রটি জানায়। তার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্পগুলো নিরেপেক্ষ তদন্ত করলেই বেরিয়ে যাবে তার অনিয়ম ও দুর্নীতির খতিয়ান। তিনি নিরালা আবাসিক এলাকা হয়ে যে সড়ক প্রকল্পের প্লানে নয়ছয় করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা । সেই বিষয়টি খুলনায় বেশ আলোচিত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ কেডিএর প্লানসহ সেবা গ্রহনে হয়রানীর প্রতিবাদে খুলনার নাগরিক সমাজের মানব বন্ধনে বক্তারা সমালোচনা করে বলেছেন অনিয়মের কথা। আর এই মানব বন্ধনের ফলে কেডিএ ভবনে অভিযান চালায় দুদক ।
উল্লেখ,গত ১৯ আগষ্ঠ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)র কেডিএ ভবনে অভিযান চালায় । সেই অনিয়মের আরো অধিকতর তদন্তের অনুমতি চেয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ে ইতিমধ্যে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানাগেছে । দুদক অধিকতর তদন্তের অনুমতি পেলে অথারাইজড অফিসার মজিবুর রহমানের অনিয়ম ও জ্ঞাত আয় বহিভুত সম্পদের খোঁজ পাওয়া যাবে বলে সুত্রটি জানায় ।
এ বিষয়ে কথা হয় অথারাইজড অফিসার মজিবুর রহমানের সাথে .তিনি বলেন, প্রিমিয়ার বোরিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স এখন সোহেল সয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং নামে চলছে । আমিই মালিক মজিবুর রহমান বলছি কি দরকার বলেন,তাকে প্রশ্ন করা হয় ম্যানেজার সোহেল এর সাথে কথা বলবো নাকি আপনার সাথে তখন তিনি বলেন আমার সাথে বলেন ,প্রশ্ন করা হয় আপনি কেডিএর অথারাইজড অফিসার হয়ে কেডিএর তালিকা ভুক্ত না হয়ে প্রিমিয়ার বোরিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্সর নামে প্রতিষ্ঠানটি দির্ঘদিন যাবত কেডিএর রাজস্ব ফাকি দিয়ে কিভাবে ব্যাবসা পরিচালনা করছেন । এমন প্রশ্নে তিনি জানতে চান আপনি কে,সাংবাদিক পরিচয় শোনার পরে তিনি সব কিছু অস্বিকার করে সঙ্গে সঙ্গে সংযোগটি কেটে দেন । পরবর্তীতে কয়েকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি ।