চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃএবার খুলনার তেরখাদা উপজেলার ‘জোবাইদা বেগম মহিলা টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ছাত্রীর সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউজে কলেজটির গভার্ণিং বডির সভাপতি ও ইউএনওর কাছে গণস্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অভিযোগপত্রের অনুলিপি খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক বরাবরও পাঠিয়েছেন তারা। সপ্তাহ ধরে কলেজ অধ্যক্ষের অপকর্মের খবরটি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ফুসে উঠেন কলেজের ছাত্রীরা। শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলেজটির প্রতিষ্ঠাতার সাথে আলোচনা করে এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন।
একাধিক সূত্রমতে, তেরখাদার ছাগলাদহ ইউনিয়নের ‘শাপলা টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের কেন্দ্র ছিল জোবাইদা বেগম মহিলা টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ। অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে পরীক্ষা কেন্দ্রে বার্ষিক চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে আসেন কুমকুম (ছদ্মনাম)। পরীক্ষার প্রথমদিকে হলে পরিচয় হয় জোবাইদা বেগম মহিলা টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজের শিক্ষক ইয়ার আলীর সাথে। এরপর পরিচয় হয় কেন্দ্র সচিব ও কলেজ অধ্যক্ষ মোঃ মোক্তার হোসেনের সাথে। পরিচয়ের প্রথমেই অধ্যক্ষ পরীক্ষায় অনৈতিক সুবিধা দিয়ে সখ্যতা গড়ে তোলেন কুমকুমের সাথে। এরপর শুরু হয় ফোনালাপ। মুঠোফোনে কথোপকথন ও ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে ক্ষুদ্রবার্তা বিনিময়ের একপর্যায়ে দু’জনে কাছাকাছি চলে আসেন আরও। ছাগলাদহ ইউনিয়ন পরিষদের পাশের ‘ফার্মেসি’তে লোকচক্ষুর অন্তরালে যাতায়াত শুরু হয় কুমকুমের। সেখানেই কয়েকবার অনৈতিক সম্পর্কে মিলিত হন তিন সন্তানের জনক অধ্যক্ষ মোঃ মোক্তার হোসেন। দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী কুমকুমকে বিয়ের প্রলোভনেই এসব অপকর্ম করেছেন বলে অভিযোগ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
কলেজের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ মোক্তার হোসেন বিনা কারণে বা ঠুনকো অভিযোগে কলেজের সুন্দরী ছাত্রীদের নিজ কক্ষে বসিয়ে দীর্ঘক্ষণ গল্প করতেন। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ইতিপূর্বে পত্রিকাতে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অতীতের সব কেলেঙ্কারী এবারের অপকর্মের কাছে তুচ্ছ। ছাত্রীর সাথে অপকর্ম ও অর্থ আত্মসাতকারী অধ্যক্ষকে কলেজে দেখতে চান না তারা। একই সাথে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তাদের।
জোবাইদা বেগম মহিলা টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষ্ণুপদ পাল বলেন, আজ (মঙ্গলবার) সকালে অধ্যক্ষ অন্য একজন শিক্ষকের কাছে কলেজের সমস্ত চাবি দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে চলে গেছেন বলে শুনেছি। দুপুরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গণস্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ করেছেন। একই সাথে কলেজের চাবি জমা দিয়েছেন। আমি পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে তাদের কাছ থেকে চাবি গ্রহণের জন্য বলেছি। তাদের অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। একইসাথে বুধবার (আজ) সকালে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জোবায়দা বেগম মহিলা টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজ অধ্যক্ষ মোঃ মোক্তার হোসেন। তিনি বলেন, “আমি মেয়েটার সাথে দুইদিন কথা বলেছি সত্যি। তবে কোন সম্পর্কের বিষয় নয়। আমার কলেজের হিসাব বিজ্ঞান শিক্ষক মোঃ ইয়াদ আলীকে ওই মেয়েটা খুব বিরক্ত করতো; তাই তাকে বুঝি কলেজে আসতে নিষেধ করেছিলাম। এর আগেও আমার বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ছিল চক্রান্তকারীরা। মানুষ এতো নিচে নামতে পারে! আমার বলার কিছু নেই।”
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে তেরখাদা উপজেলায় জোবায়দা বেগম মহিলা টেকনিক্যাল এন্ড বিএম কলেজটি ৫০ শতক জমির উপরে গড়ে উঠে। তারপর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যে কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন অধ্যক্ষ মোঃ মোক্তার হোসেন।