চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃকূটনৈতিক তৎপরতায় প্রতিবেশী পাকিস্তানকে বাদের তালিকায় রেখে অন্যান্য সব রাষ্ট্রের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখছে ভারত। তবে প্রতিবেশী হিসেবে ভারত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় বাংলাদেশকে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে নয়াদিল্লিতে শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘প্রাণবন্ত কথোপকথন’ হয়েছে।নয়াদিল্লীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনার দিল্লী পৌঁছানোর ছবিসহ একটি টুইট বার্তা প্রকাশ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, কৌশলগত সম্পর্কের বাইরে গিয়ে বাংলাদেশ-ভারত (বহুমুখী সম্পর্ক) বিনিময় করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভীশ কুমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে এক বার্তায় জানিয়েছেন, বাংলাদেশ-ভারত পারস্পরিক সম্পর্ককে নতুন এক উচ্চতায় নিতে এ সাক্ষাতে উষ্ণ আলোচনা হয়েছে।
সাক্ষাৎকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, উপদেষ্টা গওহর রিজভী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
পাকিস্তান বাদে প্রতিবেশীদের বিষয়ে ইতিবাচক ভারত
কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই উষ্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে ভারতের। এই উষ্ণ সম্পর্ক আগামীতে আরও বড়রূপ ধারণ করবে এমন ইঙ্গিতই দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নয়দিল্লিতে শনিবার আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের প্রশ্নোত্তর পর্বে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন ইঙ্গিত দেন।
তিনি বলেন, আগামী দিনে ভারতের কূটনৈতিক কর্মসূচির কেন্দ্রে রাখা হবে পাক-বিরোধিতাকে। আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী সব রাষ্ট্রের ভূমিকাই যথেষ্ট ভাল, শুধু একটি দেশ ছাড়া।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নাম না-করে পাকিস্তানকে বেআব্রু করার কৌশল নিয়ে চলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইমরান খানের নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রবল ভাবে আক্রমণ করে চলেছে মোদী সরকারকে। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনের মঞ্চে পাক প্রধানমন্ত্রীর গোটা বক্তৃতাটিই ছিল ভারত-বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে। এজন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বক্তৃতার তীব্র সমালোচনা করেছে নয়াদিল্লি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেছেন, ‘‘উনি (ইমরান) জানেন না কী ভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে উনি যে বক্তৃতা দিয়েছেন, তা প্ররোচণামূলক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, উনি খোলাখুলি ভারতের বিরুদ্ধে জেহাদের ডাক দিয়েছেন।’’
গত অগস্টে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পর দু’মাস ধরে বিভিন্ন মঞ্চে উপত্যকায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে ইসলামাবাদ। কূটনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, কাশ্মীর নিয়ে ইসলামিক রাষ্ট্রভুক্ত দেশগুলিরও নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন ইমরান খান। যদিও সৌদি আরব ও আরব আমিরাত প্রকাশ্যেই কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের পাশেই দাঁড়িয়েছে।
তবে মালয়েশিয়া ও তুরস্ক অবশ্য রাষ্ট্রপুঞ্জে বিবৃতি দিয়ে মোদী সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। তাদের দাবি, পাকিস্তানের ভূখণ্ড বলপূর্বক ভারত দখল করে রেখেছে। রবীশ আজ সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়া এবং তুরস্কের ওই ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তার বক্তব্য, ‘‘সঠিক তথ্য না জেনে জম্মু-কাশ্মীর সম্পর্কে যে মন্তব্য মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী করেছেন, তার গভীর নিন্দা করছি।’’
তুরস্কের বিবৃতি ‘অসত্য’ এবং ‘পক্ষপাতিত্বপূর্ণ’ বলেও জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইমরান খানের ফোন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের ঠিক একদিন পূর্বে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ফোনালাপ করেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। ফোনালাপে শেখ হাসিনার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
বুধবার (২ অক্টোবর) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চোখের বর্তমান অবস্থার খোঁজখবর নেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কুশলাদি বিনিময় করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চোখের বর্তমান অবস্থার খোঁজখবর নেন ইমরান খান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চোখের চিকিৎসার খোঁজখবর নেয়ার জন্য পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক গুরুত্ব
সম্প্রতি আঞ্চলিকভাবে বাংলাদেশের গুরুত্ব এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টানা তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় বসার পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের ফোন আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন রাষ্ট্র প্রধানরা চলতি বছর শেখ হাসিনার নির্বাচনে জয়লাভে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পূর্বে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ফোন করে শেখ হাসিনার খোঁজখবর নেওয়াটাও অন্যরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেই কূটনীতিকরা মনে করছেন। তবে কাশ্মীর ইস্যুতে বাংলাদেশ যে ভারতের পক্ষেই থাকবে এই বিষয়টিও এরই মধ্যে পরিষ্কার। জাতিসংঘের এবারের অধিবেশনে কাশ্মীর ইস্যুতে বাংলাদেশ ভারতের পক্ষেই ভোট দিয়েছে।
অন্যদিকে আঞ্চলিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি চীন, ভারত কিংবা বিশ্বের ক্ষমতাধর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক। এছাড়া ভূ-রাজনৈতিকভাবেও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বাংলাদেশের। এ বিষয়ে বাম রাজনৈতিক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের সভাপতি মাসুদ খান দৈনিক অধিকারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ভূ রাজনৈতিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য ব্যাপক অর্থনৈতিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। সেরকম একটা অবস্থায় একদিকে মার্কিন অন্যদিকে চীন একটা সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছে। বাংলাদেশের উপস্থিতিটা ভূ রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ জায়গায় রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের উপর এই বিদেশি শক্তিগুলো নিজেদের কর্তৃত্বকে বজায় রাখতে কীভাবে তাদের শোষণ চালিয়ে যাবে সেটার জন্য এখানকার ক্ষমতাসীনদের মাধ্যমে নিজেদের স্বকীয়তা গুলো বজায় রাখছে।