চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃদক্ষিণ ডুমুরিয়ার আহাদ আলী শেখ। পেশায় গলদা চিংড়ি চাষি। গেল কয়েক বছর স্থানীয় নলঘোনা বিলে আড়াই একর জমি হারি (লীজ চুক্তি) নিয়ে মৎস্য চাষ করে স্ত্রী-পরিজনসহ কোনরকমে সংসার চালাচ্ছিলেন। তবে চলতি বছর ঘেরের আইলে (ভেড়ীবাঁধ) অসময়ে (বর্ষার মৌসুমে) তরমুজ চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। তিনি ১ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। তার সংসারে এখন আনন্দের বন্যা। শুধু আহাদ আলী নয় উপজেলার বিভিন্ন বিলে এবার মৎস্য ঘেরের ভেড়ীতে তরমুজ চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন চাষিরা। তাদের মুখে এখন হাসির ঝিলিক। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
দক্ষিণ ডুমুরিয়ার আহাদ আলী শেখ এ প্রতিবেদককে জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে তিনি আড়াই একর জমির ঘেরের ভেড়ীতে তরমুজ চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি ১ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। একই গ্রামের শওকত ঢালী জানান, আড়াই একর জমির ভেড়ীতে চাষ করে তিনি ২ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। ওই গ্রামের সামাদ ঢালীসহ আরও কয়েকজন জানান, তরমুজের চাষ করে তারা ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। এছাড়া আন্দুলিয়ার ইউনুছ ফকির ১ একর, ছোট বন্দের মৃত্যুঞ্জয় ১ একর, গোলনার আলিমুজ্জামান ১ একর জমির আইলে তরমুজ চাষ করেছেন। কুলবাড়িয়ার মিজানুর রহমান শেখ ২ একর জমির ভেড়ীতে তরমুজ চাষ করে ৫ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন বলে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। পাশাপাশি কুলটরি সরবিন্দু ফৌজদার ১ একর জমিতে, চিংড়ার সাহাদাৎ ২২০টি মান্দায়, কদমতলার অমিত মন্ডল ৮শ’ মান্দায়, দিপংকর মন্ডল ৯শ’ মান্দায়, শোভনার কুলতলার অমিত বিশ্বাস ২শ’ মান্দায়, পাতিবুনিয়ায় সুভাষ বিশ্বাস ৯শ’ মান্দায়, গোবিন্দ সরদার ৯শ’ মান্দায়, মহেশ্বর সরদার ৭শ’ মান্দায়, রুহিদাস সরদার ২শ’ মান্দায়, সুভাষ সরদার ৩শ’ মান্দায় ও অজিত রায় ঘেরের ভেড়ীর ৩শ’ মান্দায় তরমুজের চাষ করেছেন। প্রায় সকলেই ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, তরমুজ উচ্চ মূল্যের ফসল। আর অসময়ে তরমুজ হওয়ায় দাম দ্বিগুণ পাওয়া যায়। ঘেরের মাচায় তরমুজ হওয়ায় পোকা মাকড় কম লাগে। ঘেরে গলদা চিংড়ি থাকায় কীটনাশক প্রয়োগে সতর্ক থাকতে হয়। তবে বর্ষা মৌসুমে কীটনাশক ব্যবহার কম হয়। ফলে নিরাপদ ফল পাওয়া যায়। তিনি জানান, মৌসুমি তরমুজ চাষে ব্যাপক সেচের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে চাষ করায় সেচ অনেক কম লাগে। তরমুজের জীবনকাল ৬৫ থেকে ৭০ দিন। অতি কম সময়ে কম বিনিয়োগে অধিক লাভজনক ফসল হচ্ছে বর্ষা মৌসুমের তরমুজ। এ বছর তরমুজের ভালো ফলন এবং দাম দ্বিগুণ পাওয়ায় আগামী বর্ষা মৌসুমে অনেক চাষি তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়বে। পাশাপাশি অনেকে বাণিজ্যিক ভাবেও তরমুজ চাষে উদ্যোগী হবেন বলে তিনি আশাবাদী।
প্রসঙ্গত, আগে ডুমুরিয়াসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে শুধু আমন ধানের চাষ হতো। আর সারা বছর জমি পড়ে থাকতো। গেল ২ যুগ ধরে এ অঞ্চলে গলদা চিংড়ির চাষ হচ্ছে। চিংড়ির সাথে এসব মৎস্য ঘেরে পরবর্তীতে শুরু হয় ধান ও সবজি চাষ। বর্তমানে তার সাথে যুক্ত হয়েছে অসময়ে তরমুজ চাষ। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ বেশ কয়েকটি দেশে সারা বছর তরমুজ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে আগে শুধু মাত্র চৈত্র-বৈশাখ মাসে তরমুজ পাওয়া যেত। এখন বর্ষা মৌসুমে তরমুজ হচ্ছে, ফলনও ভাল হচ্ছে। আর অসময়ে হওয়ায় চাষিরা দামও বেশি পাচ্ছে।