চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃনগরীর মুজগুন্নী মহাসড়কের পাশেই কর্মমুখি নারী শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে প্রতিষ্ঠিত হয় বিষেশায়িত খুলনা গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৫ বছরেও কলেজটি হয়নি এমপিওভুক্ত। সর্বশেষ গত বুধবার ২ হাজার ৭৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়। তবে সেই তালিকা থেকেও ছিটকে পড়েছে কলেজটি। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে নেমে এসেছে হতাশা। ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেনি বিনা বেতনে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীদের। তাছাড়া ক্যাম্পাসেও গড়ে উঠেনি ভৌত অবকাঠামো। নেই কোন কম্পিউটার ল্যাব। আর দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।
খুলনা গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের প্রভাষক মোঃ শামসুজ্জামান বলেন, আশায় ছিলাম কলেজটি এমপিওভুক্ত হবে। তবে সেই তালিকায় কলেজের নাম না দেখে হতাশ হয়েছি। কলেজটিতে শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে পাঠদান করানো হচ্ছে। অথচ শিক্ষকরা নানা দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। এমপিওভুক্ত করা হলেও সেই দুর্দশা থেকে মুক্তি পাওয়া যেত।
কলেজের প্রভাষক শামসুন্নাহার বলেন, কর্মমুখী নারী শিক্ষার বিস্তারে এ অঞ্চলের একমাত্র বিশেষায়িত খুলনা গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজটি নানাদিক থেকে অবহেলিত। মেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিকারী এ কলেজ থেকে প্রতি বছরই এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়ে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অনার্স ও নার্সিং পড়ারও সুযোগ পাচ্ছে ছাত্রীরা। অথচ কলেজটি দীর্ঘ ১৫ বছরেও এমপিওভুক্ত হলো না। এ বছর আশায় ছিলাম এমপিওভুক্ত করা হবে। সেটিও হয়নি।
তিনি বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের ঝড়ে পড়া রোধেও অবদান রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষায়িত কলেজ হয়েও অনেক সূযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত কলেজটি। যদিও এখান থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে ভালো কাজের সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষকদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বিশেষায়িত কলেজ হওয়ায় পৃথক নীতিমালা করে দ্রুত কলেজটি এমপিওভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে খুলনা ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক থেকেই এমন একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভা থেকেই একটি সাগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়। প্রথমে মুজগুন্নী আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে কলেজের যাত্রা শুরু হলেও পরে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বয়রা আবাসিক প্রকল্পের ডি ব্লকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য চিহ্নিত জায়গা থেকে ৩ একর জমি কলেজের অনুকূলে বরাদ্দের মধ্যদিয়ে কলেজের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বর কলেজের একাডেমিক ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। শুরুতে ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে একাডেমিক ভবন, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে নিচু জমি ভরাট কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এসব অর্থ খুলনা জেলা পরিষদ ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিক অনুদান নিয়ে করা হয়। সীমানা প্রাচীর নির্মাণে সহযোগিতা করে খুলনা সিটি কর্পোরেশন। এভাবে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে কলেজটি টিকে থাকলেও নেই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন। কলেজটিতে বর্তমানে একজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ ১২ জন শিক্ষক/শিক্ষিকা ও ছয়জন কর্মচারী বিনা বেতনেই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে তাদের দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে টিকে থাকাও দুষ্কর হয়ে পড়েছে। কলেজটিতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী মিলিয়ে ১২০টি আসন রয়েছে। আসন সংখ্যা ১২০টি থাকলেও দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে আসছে। বর্তমানে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে মাত্র ৬১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এ কলেজে ভর্তি হয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার সাথে সাথেই তাদের জন্য রয়েছে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বেশ সুযোগ। কলেজটিতে বাংলা, ইংরেজি, আইসিটি, খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান, গৃহব্যবস্থাপনা, শিশুর বিকাশ, ব্যবহারিক শিল্পকলা, বস্ত্র ও পোশাক শিল্পকলা বিষয়ে শিক্ষাদান করা হয়। এখানে আইসিটির বিষয় থাকলেও নেই কোন পৃথক কম্পিউটার ল্যাব।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সালমা ইয়াসমিন বলেন, ২০০৪ সাল থেকেই কলেজে রয়েছি। অনেক শিক্ষার্থী এখান থেকে উত্তীর্ণ হয়ে চাকুরিও করছে। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছরেও কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, কলেজটি খুলনা বিভাগের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ নারী শিক্ষার বিশেষায়িত বিদ্যাপীঠ। প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোসহ নানা সমস্যা রয়েছে। তিনকক্ষ বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের নেই কোন কমনরুম, নেই অধ্যক্ষের পৃথক কোন কক্ষ। পুরাতন ভবনের চলছে পাঠদান কার্যক্রম। কর্মমুখী নারী শিক্ষার বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা দীর্ঘদিন বেতন না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এমনকি যাতায়াত ভাড়া, প্যানা, লিফলেটসহ আনুসাঙ্গিক ব্যয় শিক্ষকরা নিজস্ব অর্থায়নেই করছে। শুধুমাত্র হৃদয়ের টানে বিনাবেতনে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। আর এমপিওভুক্ত হবে এমন প্রত্যাশায় দিন গুণছে। এ প্রতিষ্ঠানটি দ্রুত এমপিওভুক্ত করার দাবিও জানান তিনি।