সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর কল্যাণে বিশ্বের তারকাদের সব খবর আমাদের হাতের মুঠোয় এসে যায়। আঙুলের নড়াচড়ায় মেলে হালনাগাদ তথ্য। ফোর্বস-এর প্রকাশ করা ধনকুবেরদের তালিকায় তেমনি এক তথ্য মিলল—মার্কিন মডেল কাইলি জেনার আছেন তালিকায়।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বের সেরা ধনী জেফ বেজোস, বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট, কার্লোস স্লিম, মার্ক জাকারবার্গদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন সারা বিশ্বের ২ হাজার ১৫৩ জন। তালিকায় আছেন কাইলি জেনার। ২০১৮ সাল শেষে কাইলি বিশ্বের ২ হাজার ৫৭ তম ধনী। ২১ বছর বয়সী এই তারকা এবার বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী ধনকুবের হিসেবে নাম লিখিয়েছেন।
ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের রেকর্ড ভেঙে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের রিয়েলিটি শো তারকা কাইলি জেনার। এই তারকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী বিলিয়নিয়ার। এমন রেকর্ডে জাকারবার্গ পৌঁছেছিলেন ২৩ বছর বয়সে। সেটা ২০০৮ সালে। তাঁর চেয়ে দুই বছর কম বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে কনিষ্ঠ ধনকুবের হয়ে গেলেন জেনার। তিনি টিভি শো ‘কিপিং আপ উইথ দ্য কার্ডাশিয়ানস’-এর মাধ্যমে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যান।
যেভাবে কাইলির ব্যবসা শুরু
মার্কিন তারকা কিম কার্ডাশিয়ান পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য কাইলি জেনার বিপুল পরিমাণ সম্পদ আয় করেছেন প্রসাধনীর ব্যবসা থেকে। ‘কাইলি কসমেটিকস’–এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি। কাইলি জেনার তাঁর আইফোন ব্যবহার করে পরিচালনা করেন তাঁর কোম্পানি। ব্যবসায় তাঁকে সহায়তা করছেন মা শ্রিউড ক্রিস (৬৩)। শতকরা ১০ ভাগ কর্তন সাপেক্ষে সন্তানদের আর্থিক কর্মকাণ্ডের দেখাশোনা করেন মা শ্রিউড। এ ব্যবসায় কাইলির মালিকানা ১০০ ভাগ। তিন বছর আগে তৈরি করা প্রতিষ্ঠানটি গত বছরে আনুমানিক ৩৬০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রসাধন বিক্রি করেছে।
কিম কার্ডাশিয়ানের সৎবোন কাইলি জেনার তাঁর ব্যবসা শুরু করেন ২০১৫ সালে। এ সময় ব্যবসার কাজে সহায়তার জন্য সঙ্গে নেন সাতজন কর্মী। আর তাঁকে সহায়তার জন্য পাঁচ খণ্ডকালীন কর্মী আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসাবিষয়ক ম্যাগাজিন ফোর্বসে বলা হয়েছে, কাইলি জেনারের মোট অর্থের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার। ধনীদের তালিকায় ঢোকা কাইলি ফোর্বসকে বলেছেন, ‘আমি এত সব চাইনি। আমি ভবিষ্যতের দিকে তাকাইওনি। তবে আমাকে যে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, সেটা শুনে বাস্তবে ভালো লাগছে। আমি এ রকমটা কিছু আশা করিনি।’ কাইলি জেনার বলেন, ‘আমি ভবিষ্যৎ অনুমান করিনি। স্বীকৃতি পেয়ে ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে, কেউ উৎসাহ দিয়ে পিঠ চাপড়ে দিল।
কাইলি জেনার তিন বছর আগে ব্যবসা শুরু করেছিলেন ২২ পাউন্ড দামের ‘লিপ কিটস’ দিয়ে। এর মধ্যে ছিল ম্যাচিং লিপস্টিক ও লিপ লাইনার। এক মিনিটের কম সময়ের মধ্যেই তাঁর স্টক শেষ হয়ে গিয়েছিল। ভক্তরা হামলে পড়ায় আর ওই সময় তাঁর ওয়েবসাইট ক্র্যাশ করেছিল। তাঁর কসমেটিকস পণ্যের বিক্রি হয়েছে মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর যে অ্যাকাউন্ট, সরাসরি তার মাধ্যমে। টুইটার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা সাড়ে ১৫ কোটির মতো। এর চার ভাগের মধ্যে তিন ভাগেরই বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে।
মাত্র ১০ বছর বয়সে টেলিভিশনে রিয়েলিটি শোতে অভিষেক হয় কাইলির। এই তারকার ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচাট, টুইটার অ্যাকাউন্টও আছে। টুইটারে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশি।
ধনকুবেরদের তালিকায় নারীর সংখ্যা মাত্র ২৫২ জন। নিজে প্রতিষ্ঠিত নারীদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী চীনের ওউ ইয়াজুন। তাঁর সম্পদের আনুমানিক মূল্য ৯ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। এবারই প্রথম নিজে প্রতিষ্ঠিত ধনকুবের নারীর সংখ্যা উন্নীত হয়েছে ৭২ জনে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫৬ জন। এবারের তালিকায় থাকা ২ হাজার ১৫৩ জন অতি ধনীর মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৬৯ হাজার ৯৯৯ কোটি ডলার, যা ২০১৮ সালের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি ডলার কম। এ ছাড়া গত বছরের তালিকা থেকে এ বছর বাদ পড়েছেন ১১ শতাংশ বা ২৪৭ জন ধনী।
গত বছর বিশ্বায়নবিরোধী তৎপরতাসহ নানা কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বছরজুড়েই বিশ্বের বিভিন্ন শেয়ারবাজারে শেয়ারের দামের উত্থান-পতন ঘটেছে। ফোর্বস বলছে, এই দশকে কেবল দ্বিতীয়বারের মতো ২০১৯ সালের তালিকায় শতকোটি ডলারের মালিকের সংখ্যা যেমন কমেছে, তেমনি তাঁদের মোট সম্পদের পরিমাণও কমেছে। ২০১৯ সালের ফোর্বসের তালিকায় শতকোটি ডলারের মালিকের সংখ্যা ২ হাজার ১৫৩, সংখ্যার বিচারে আগের বছরের চেয়ে তা ৫৫ জন কম। গত ৮ ফেব্রুয়ারি কার কত সম্পদ আছে, সে অনুযায়ী ফোর্বসের ধনকুবেরদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ওই দিন বিশ্বের মুদ্রার বিনিময় হার এবং স্টকের মূল্য বিচার করে করা হয়েছে ধনীদের তালিকাটি। এবারের তালিকার ধনকুবেরদের মধ্যে ৬০৭ জন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এরপরেই আছে চীন। দেশটির ৩২৪ জনের নাম এসেছে এ তালিকায়।
এক টুইটে আয় ১৩০ কোটি ডলার
মার্কিন মডেল কাইলি জেনার ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক টুইটে কোটি ডলার কমে যায় এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের। এক টুইটে কোটি কোটি ডলারের বাজারমূল্য কমে যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম স্ন্যাপচ্যাটের। টুইটারে কাইলি লেখেন, ‘এমন কেউ কি আছেন, যিনি আর স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহার করছেন না? নাকি শুধু আমি একা? আহা এটা খুব দুঃখজনক!’ আর তাঁর এ টুইটে কমে যেতে শুরু করে স্ন্যাপচ্যাটের বাজারমূল্য। কমতে কমতে একধাক্কায় ১৩০ কোটি ডলার পর্যন্ত কমে যায় বাজারমূল্য।
আসলে কাইলির এমন বক্তব্যের পেছনে দায়ী মূলত স্ন্যাপচ্যাট অ্যাপের নতুন নকশা। স্ন্যাপচ্যাট অ্যাপের নকশা পরিবর্তনের জন্য অনেকেই বলে আসছিলেন। তবে পরে অবশ্য স্ন্যাপচ্যাট নিয়ে নিজের ভালোবাসার কথা জানান কাইলি জেনার। তিনি আবারও টুইটে লেখেন, ‘তবু এখনো তোমাকে ভালোবাসি…আমার প্রথম প্রেম’। এতে অবশ্য স্ন্যাপচ্যাটের খুব একটা উপকার হয়েছে, তা বলা যাচ্ছে না। সেই ক্ষতি আর পোষানো যায়নি।
এক পোস্টের ১০ লাখ ডলার
কাইলি তাঁর প্রতি পোস্টের জন্য পকেটে পোরেন ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ ডলার। আর এটি বাংলাদেশের মুদ্রায় ৮ কোটি টাকার বেশি (১ ডলার সমান ৮৪ টাকা)। সৌন্দর্যপণ্যের অন্যতম সম্রাজ্ঞী কাইলি জেনার নানা পণ্যের মডেল হওয়ায় ডাকা হয় ‘বিউটি মুঘল’ নামেও। গত বছরের এপ্রিলে ৩০ দিনে ইনস্টাগ্রামে কাইলি জেনার পোস্ট দিয়েছেন ১৫৬টি। এসব পোস্টে পাঠক সম্পৃক্ততা হয়েছে ১৮ কোটি ৬১ লাখের বেশি। ওই বছরের ৪ মে পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম) জেনারের ফলোয়ার ১৫ কোটি ৪৭ লাখের ৭৫ হাজারের বেশি। দিন দিন তা বেড়েই চলেছে।