অনলাইন ডেস্কঃ পরিবহন সেক্টর, মাছের বাজারে চাঁদাবাজিসহ রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে সরকারি প্রতিষ্ঠানে ‘টেন্ডারবাজি’ করতেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।
রোববার তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অস্ত্র মামলার চার্জশিট ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে জমা দেন র্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন।
সূত্র জানায়, খালেদকে গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় খালেদকে পাঁচদিনের রিমান্ড নেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন তাকে র্যাবের হাতে হস্তান্তর করা হয়। রিমান্ডে প্রাপ্ত তথ্য এবং কয়েক দিনের তদন্ত শেষে র্যাব আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
চার্জশিটে র্যাব উল্লেখ করে, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া অবৈধ মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, জনসমক্ষে নিজের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। তার হেফাজতে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রটি ১৯৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ ধারার অপরাধ।
চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, তদন্তকালে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ১৯৯৬ সাল থেকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী যুবলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ২০১২ সালে তিনি যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পেলে একজন ভয়ঙ্কর আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসী হিসেবে এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত হন। ঢাকার মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল, কমলাপুর, রামপুরা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন তিনি। সাধারণ মানুষ তার ভয়ে আতঙ্কিত ছিল। খালেদ শাজাহানপুর এলাকায় চলাচলরত গণপরিবহন থেকে নিয়মিত মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করতেন। শাজাহানপুর ও কমলাপুর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণ, খিলগাঁও রেলক্রসিংয়ে বসা মাছের হাট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতেন তিনি।
“রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ওয়াসার ফকিরাপুল জোনসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার প্রতিষ্ঠানের টেন্ডারের নিয়ন্ত্রণ ছিল খালেদের ‘ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া’ নামের প্রতিষ্ঠানের কাছে।”
এছাড়া তদন্তে উঠে এসেছে, খালেদ ফকিরাপুল ইয়াংমেনস ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বে থেকে ক্যাসিনো, মাদক ও জুয়ার আসর বসিয়ে প্রতিদিন হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। অবৈধ ব্যবসা ও রাজনৈতিক শক্তি প্রয়োগের জন্য তিনি দীর্ঘদিন অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার করে আসছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে র্যাব-৩ এর ওয়ারেন্ট অফিসার মো. গোলাম মোস্তফা, খালেদের বাড়ির ম্যানেজার মো. আরিফ হোসেন, সিকিউরিটি গার্ড নূর আলম তালুকদার, খালেদের গাড়িচালক মো. মাহাবুব আলম, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গাউছুল আজম ও র্যাবের এসআই মো. মাহবুবুর রহমান।
এদিকে খালেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার নয়টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা আছে অন্তত ৩১ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংকে ১৯ কোটি টাকার এফডিআর, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে সাড়ে ছয় কোটি, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংকে দুই কোটি ৭৬ লাখ, ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই কোটি, সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ব্যাংকে স্ত্রীর নামে ৫০ লাখ, ওভারসিজ ব্যাংকে দেড় কোটি, মালয়েশিয়ার আরএইচবি ব্যাংকে ৬৮ লাখ টাকা রয়েছে। এছাড়া তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তারের নামে ব্র্যাক ব্যাংকে ৫০ লাখ, অর্পণ প্রপার্টিজের নামে এনসিসি ব্যাংকে ১৫ লাখ ও ব্র্যাক ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকা রয়েছে।
সর্বশেষ রোববার জ্ঞাত আয়বহির্ভূতভাবে সম্পদ অর্জনের জন্য তাকে আরও সাতদিনের রিমান্ডে নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার বিষয়ে কিংবা তদন্তের বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকে জানান, ক্ষমতা আকড়ে রাখতে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষপর্যায়ের অনেক নেতাসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যেও নিয়মিত বণ্টন করতেন খালেদ। কারা কারা অর্থের ভাগ পেতেন সেটিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে ‘ক্যাসিনো’ চালানোর অভিযোগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর গুলশানের নিজ বাসা থেকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা। এ সময় তার বাসা থেকে একটি অবৈধ পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি, ২০১৭ সালের পর নবায়ন না করা একটি শটগান ও ৫৮৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরদিন দুপুরে তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়। একই দিন র্যাব-৩ এর ওয়ারেন্ট অফিসার গোলাম মোস্তফা বাদী হয়ে গুলশান থানায় অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেন। অন্যদিকে মতিঝিল থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন র্যাবের ওয়ারেন্ট অফিসার চাইলা প্রু মার্মা।