চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃখুলনার দাকোপ উপজেলার চালনা বাজার চুনকুড়ি খোয়াঘাট সংলগ্ন ‘পোদ্দার মেশিনারিজ অ্যাণ্ড হার্ডওয়ার’। এই প্রতিষ্ঠান থেকে নগদ ৪০ হাজার টাকার মালামাল কিনেছে উপজেলার শ্রীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চালনা বাজারে হার্ডওয়ার সামগ্রীর সবচেয়ে বড় বিপণিবিতান ‘পোদ্দার মেশিনারিজ অ্যাণ্ড হার্ডওয়ার’ নামের দোকানটি। সেখান থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখে একটি কোলাপশিকল গেট কিনেছে ১৫ হাজার টাকার, ৬টি চেয়ার-টেবিল মেরামত করেছে পাঁচ হাজার টাকার, ৬টি বৈদ্যুতিক বাল্ব, ফ্যান কিনেছে ১২ হাজার টাকার, একটি পানির পাম্প মেরামত করতে পাঁচ হাজার দু‘শত ২৫ টাকার পণ্যসামগ্রী সরবরাহ করে থাকে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছে।
বিক্রি মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে কিভাবে? জানতে চাইলে পোদ্দার মেশিনারিজ অ্যাণ্ড হার্ডওয়ারের স্বাত্বাধিকারি প্রশান্ত কুমার দাশ বললেন, ‘আমার দোকানে শুধু হার্ডওয়ার সামগ্রী বিক্রি হয়। আমরা কোনো প্রকার পণ্যসামগ্রী মেরামত করি না।’ ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা তাঁর দোকানের প্যাড দেখালে তিনি বলেন, প্যাডের ওপরে পণ্যের বিবরণ তাঁদের লেখা হাতের অক্ষর নয়। কেউ হয়তো নকল প্যাড ব্যবহার করে ভূয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে শিক্ষা কার্যালয়ে জমা দিয়েছে। আর কোলাপশিকল গেট আমরা তৈরি করি না।
২০১৮-১৯ অর্থ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি চতুর্থ পর্যায়) আওতায় স্কুল রুটিন মেইনটেন্যান্স কার্যক্রমের শুধু এই ৪০ হাজার টাকা নয়। রাজস্ব প্রকল্পের ৫০ হাজার টাকা ও স্কুলের প্রাক প্রাথমিককক্ষের ১০ হাজার টাকার দৃশ্যমান কাজ না করে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে শ্রীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অমর কৃষ্ণ রায়ের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে প্রকল্পের বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের জন্য রেজল্যুশন তৈরিসহ তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দাকোপ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মঙ্গলবারে (২২ অক্টোবর) ওই স্কুলটি পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটির সদস্যরা। সেখানে গিয়ে কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতির কোনো নমুনা তাঁরা দেখতে পায়নি। তদন্ত কমিটির সদস্য উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মৃন্ময় কুমার মণ্ডল জানান, স্কুল উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য তিনটি খাতে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দকৃত টাকার তেমন কোনো দৃশ্যমান কাজ প্রধান শিক্ষক করেনি। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি স্কুলটি পরিদর্শন করে তেমন কোনো কাজ না হওয়ায় বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক অমর কৃষ্ণের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত প্রতিবেদন খুবই দ্রুত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দের টাকার বিষয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি প্রসেনজিৎ রায় বলেন, তার কোনো সঠিক তথ্য তিনি জানেন না। তিনি বলেন, একবার সীলিপের ব্যয় বাবদ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য প্রধান শিক্ষক সকলকে অবগতি করেন। বিদ্যালয়ের যৌথ ব্যাংক হিসাব খোলা থাকায় টাকা উত্তোলনের জন্য একবার চেকে স্বাক্ষর নেন তাঁর। পিইডিপির টাকা উত্তোলনে সভার বিষয়ে জানতে চাইলে, রেজল্যুশনে স্বাক্ষর করে কোনো প্রকার সভা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, তাঁর স্বাক্ষর হয়তো জালিয়াতি করা হয়েছে। আর এসব সম্পর্কে সভাপতি সঠিক কিছু জানেন না তাই বেশি কিছু বলতে পারেনি।
সোমবার দুপুরে ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা বিশিষ্ট্য নতুন একটি ভবন নির্মাণকাজ করছে প্রায় পাঁচ থেকে ছয়জন শ্রমিক। পাশে জরজীর্ণাবস্থায় রয়েছে পুরাতন ভবনটি। সেখানে চলছে পাঠদান। তবে ওই ভবনে কোনো কোলাপশিকল গেট, ফ্যান ও পানির পাম্পসহ মেরামতকৃত পণ্যসামগ্রী দেখা যায়নি। এ যেনো ‘কেতাবে থাকলেও গোয়ালে নেই’।
বিষয়টি জানার জন্য প্রধান শিক্ষক অমর কৃষ্ণ রায়ের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে না চেয়ে সরাসরি ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে চেয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। পরে একাধিকবার তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সংযোগ মেলেনি।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শচীন কুমার রায় বলেন, নতুন ভবনের সঙ্গে তো সবকিছু রয়েছে। প্রধান শিক্ষক (অমর কৃষ্ণ) অবসরে যাওয়ার আগে একটি টেবিল কিনেছিল। আর পুরাতন ভবনের কার্যালয়কক্ষে একটি ফ্যান ছিল। এছাড়া আমাদের স্কুলের জন্য অন্যান্য যেসব পণ্যসামগ্রীর বিবরণ তিনি দিয়েছেন তা তো কিছুই নেই।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. অহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কল বাঁজলেও তিনি ধরেনি। পরে পরিচয় দিয়ে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে একাধিকবার চেষ্টা করে কোনো সংযোগ না পাওয়ায় তাঁর মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।