চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খালেদা জিয়ার জন্য এতো মায়াকান্না কেন? জিয়া ছিলেন খুনি। খুনির স্ত্রী খুনি। তার ছেলেও তাই।
তিনি বলেন, এরা ক্ষমতায় থাকতে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। খালেদা জিয়া শত শত জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছেন। প্রতিহিংসা থেকে মানুষকে অপমান করেছেন। উনি এতো অন্যায় করেছেন যে আল্লাহও সহ্য করছেন না। তার জন্য এতো মায়াকান্না কেন?
রোববার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
খালেদা জিয়ার অপকর্মের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। তিনি অসুস্থ হয়ে সিএমএইচে চিকিৎসা নিতে গেলে তাকে সেখানে চিকিৎসা নিতে দেননি খালেদা জিয়া। একজন সাবেক সেনাপ্রধানকে তিনি অপমান করে বের করে দিয়েছেন। ক্ষমতায় থাকাকালে সেনা মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছেন। অনেককে বছরের পর বছর প্রমোশন থেকে বঞ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, যারা তাদের পছন্দের অফিসার ছিল তাদের অন্যায়ভাবে সুবিধা দিয়েছেন। যারা অপছন্দের তাদের বঞ্চিত করেছেন। ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়ে যে সব অপকর্ম করেছেন তারই ফসল ছিল ২০০৭ সালে ইমার্জেন্সি সরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খন্দকার মোশতাকের নির্দেশে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্ত্র নিয়ে ঢোকা যায় না। কিন্তু তারা অস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল। বঙ্গভবন থেকে সেই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, যেভাবে ঢুকতে চায়, সেভাবেই যেন ঢুকতে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, খুনি মোশতাক টেলিফোন দিয়ে নির্দেশ দেয়। এরা যখন অস্ত্র নিয়ে ঢুকতে যায়, তখনও বাধা দেয়া হয়েছিল। তখন বঙ্গভবন থেকে বলা হয়েছিল, আলোচনা করতে যাচ্ছে। যেভাবে ঢুকতে চায়, সেভাবেই ঢুকতে দেয়া হোক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোশতাকের পতন যখনই অনিবার্য হয়ে পড়লো, সঙ্গে সঙ্গে ওই খুনিদের একটি বিমানে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হলো। প্রথমে তারা তাদের ব্যাংককে নিয়ে যায়। সেখানে বসে তাদের পাসপোর্ট দেয়া হয়। তাদের ভিসার ব্যবস্থা করে কোন দেশে যাবে সেটাও ঠিক করে দেয়া হয়। এর সঙ্গে কারা জড়িত, সেটাও কিন্তু ইতিহাসে আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মোশতাকের ক্ষমতা যাওয়ার পর জিয়া ক্ষমতার মসনদে বসেন। জিয়া সায়েম সাহেবকে বলেছিলেন, আপনি সরে যান। এ পদে আপনি থাকতে পারবেন না। আমার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এরপর ক্ষমতায় বসে হ্যাঁ-না ভোট দিয়ে ভোটের প্রহসন করে সংসদে বসে। সংসদে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার যাতে না হয় সে জন্য তিনি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন। মানুষ হত্যা করবে আর তার বিচার হবে না এটা কত বড় অন্যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে খালেদা জিয়াও খুন এবং আগুন দিয়ে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর শত শত বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়ে দিয়েছে। ফাহিমা ও পূর্ণিমার মতো হাজার হাজার নারী ধর্ষিত হয়েছে। খালেদার জন্য আজ যারা মায়াকান্না করেন তখন তারা কোথায় ছিলেন?
সভায় অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শিক্ষাবিদ আনিসুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।