অনলাইন ডেস্কঃখুলনা মহানগরীর খালিশপুরস্থ স্যাটেলাইট টাউন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রধান শিক্ষক পদে অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে সমগ্র শিক্ষা জীবনে তৃতীয় শ্রেণি প্রাপ্ত একজনকে নিয়োগ দেওয়ার অপচেষ্টার অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তোষ ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। আর এই অনিয়ম ও দূর্ণীতির নেপথ্যে স্কুল পকেট কমিটির সভাপতি সানাউল্লা নান্নু।সানাউল্লা নান্নু শুধু স্যাটেলাইট স্কুলেই তিনি অনিয়মের আখরা তৈরি করেছেন হাইজিং নুরানীয় সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ে । তিনি এই প্রাইমারী স্কুলের সভাপতি হওয়ায় তার বিরুদ্ধে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাসহ অভিবাকদের কিছু বলার সাহস দেখান না ।
অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষক পদে আমানউল্লা শেখকে নিয়োগ প্রদানের জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি একে এম সানাউল্লাহ নান্নুর সঙ্গে লেনদেন হয় এবং গত মার্চ মাসে অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যে ব্যাকডেটে দুটি অখ্যাত পত্রিকায় পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে এবং পরিচালনা কমিটির কোনো সভা না করেই এ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এমনকি এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক কিছুই জানেন না। শেখ আমানউল্লাহ নিজের নিয়োগের পথকে সহজ করতে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে নিজেই তাদের নামে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, এর আগে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমানউল্লাহ শেখ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি একে এম সানাউল্লাহ নান্নুর সাথে যোগসাজসে সকলের অজান্তে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠন করেন। কোনো ধরনের প্রচার প্রচারণা ছাড়াই গঠন করা হয় পকেট কমিটি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির পাশাপাশি একে এম সানাউল্লাহ নান্নু বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ খালিশপুর থানার সভাপতি হওয়ায় কেহ প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। তবে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের সরাসরি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট হওয়ায় ক্ষোভ তীব্র হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের একজন অভিভাবক নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই বিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনিয়ম চলছে। টাকা পয়সা মেরে খাক তাতে ক্ষতি সাময়িক, তবে শিক্ষক যেন মানসম্মত হয়, শিক্ষা যেন মানসম্মত হয়। শিক্ষা জীবনের আগাগোড়া থার্ড ক্লাস আর ভুয়া সার্টিফিকেটের মাস্টার আমরা দেখতে চাই না।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মতিয়ার রহমান জানান, সভাপতি এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাদের ইচ্ছেমত কাজ করছেন। কোনো মিটিং সিটিং ছাড়াই গোপনে নতুন ম্যানেজিং কমিটি করেছে। এখন টাকা খেয়ে এক থার্ডক্লাস মাস্টারকে নেওয়ার ধান্দা করছে এর আগে ভুয়া অভিজ্ঞতা দিয়ে সভাপতির বোনের চাকরি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এর আগে সাত লাখ টাকার বিনিময়ে স্কুলের কামাল মাস্টারের ওয়াইফ নাসরিন আক্তারকে ভুয়া পদ দেখিয়ে সমাজবিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে এমপিও করানো হয়। কামাল মাস্টার স্কুলের প্রায় দেড়শ ছেলে মেয়েকে প্রাইভেট পড়ায়, না পড়লে তাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও পরীক্ষায় ফেল করানোর ভয় দেখায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২১ অক্টোবর দৈনিক পূর্বাঞ্চল ও ইনকিলাব পত্রিকায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হলে বহুল প্রচার হওয়ায় অনেকগুলো আবেদন জমা পড়ার সম্ভাবনার কারণে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সানাউল্লাহ নান্নু ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে সবার অজান্তে অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যে ব্যাকডেটে দুটি অখ্যাত পত্রিকায় পুনরায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে এবং এলাকাবাসীর চাপের মুখে সভাপতি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ করে দেন। বিজ্ঞপ্তি বাতিল এবং পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভা করার প্রয়োজন থাকলেও এক্ষেত্রে কোনো সভা করা হয়নি বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সদস্য জানান। কিন্তু সহকারী গ্রন্থাগারিক (ক্যাটালগার) পদে সভাপতির বোন পারভীন আক্তারকে নিয়োগ প্রাদান করা হয় এবং ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে এমপিও করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় হলেও এই বিদ্যালয়ের বর্তমান পরিচালনা কমিটির সদস্যদের কেউই বিদ্যালয়ের গন্ডিপার হতে পারেন নি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য লন্ড্রি ব্যবসায়ী মন্টু জানান, কোনো সভা না করেই সভাপতি তার ইচ্ছামত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন, এ বিষয়ে আমি আর কিছুই জানি না।
এছাড়া আমানউল্লাহ শেখকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিরিন আক্তারকে সভাপতি একে এম সানাউল্লাহ নান্নুর মৌখিক নির্দেশে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ বিষয়ে শিরিন আক্তার বলেন, আমি কোনো লিখিত দায়িত্ব পাইনি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আমানউল্লা শেখকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমাকে মৌখিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, কোন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে তা আমি ঠিক জানি না, সভাপতি ভালো বলতে পারবেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি একে এম সানাউল্লাহ নান্নু জানান, এ সব অভিযোগ সত্য নয়। সভা করা হয়নি তবে করা হবে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, পত্রিকায় দেওয়া হয়েছে তবে কবে কোন পত্রিকায় তা ঠিক মনে নেই।