অনলাইন ডেস্কঃপন্টিয়াস পিলেটের আদালত। সত্য প্রমাণিত হলো অভিযোগ। সুতরাং প্রচলিত নিয়মানুসারেই শাস্তি হবে আসামীর। নির্ধারিত দিনে আসামীকে ঝুলিয়ে দেওয়া হলো ক্রুশে। অত্যন্ত নাটকীয়ভাবে অসময়ে সমাপ্তি ঘটলো যীশু খ্রিষ্টের জীবনের। গল্প কিন্তু শেষ হয়নি। কালক্রমে প্রায় প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ পরিচিত হলো তাঁর আদর্শের সাথে। বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মের কেন্দ্রবিন্দুতে তাঁর অবস্থান।
স্থিতিশীল সমাজের আবেদনেই আদালতের জন্ম দিয়েছে মানুষ। ঠিক-ভুলের সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার তুলে দিয়েছে অন্য কারো হাতে। কিন্তু বিচারকেরা তো ঈশ্বর বা ফেরেশতা নন। অনেক শুদ্ধির পরেও তাই তাদের ভুল হয়। অথবা বিচারকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় নানান নাটকীয়তা। কখনো ইচ্ছায় কখনোবা অনিচ্ছায়। ঠিক-ভুলের অজস্র বিচারের ইতিহাসে কিছু গল্প আলোচিত হয়ে আসছে নিজস্বতা নিয়ে। এমন কয়েকটি গল্প নিয়েই আজকের আয়োজন।
সক্রেটিসের অপরাধ
৩৯৯ খ্রিষ্টপূর্ব। এথেন্সের আদালতে হাজির হলেন এক বয়স্ক আসামী। অপরাধ এথেন্সের যুবসমাজকে পথভ্রষ্ট করা এবং প্রচলিত ধর্মের অবমাননা। অথচ সক্রেটিস নিজেকে মনে করতেন ধাত্রীর মতো। মানুষের চিন্তার প্রসবের সহযোগিতা করা যার কাজ। মাঝে মাঝে নিজেকে তুলনা করেছেন মাছির সাথে। যে পশুরূপী রাষ্ট্রের চারপাশে ভনভন করে। গ্রীক দর্শনের জন্মদাতা। আদালতে দাঁড়িয়ে অসঙ্কোচে ধরিয়ে দিয়েছেন নিজের অবস্থান।
এথেন্সের মানুষ, আমি তোমাদের শ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি। কিন্তু তারচেয়ে বেশি দায়বদ্ধ ঈশ্বরের প্রতি। যতক্ষণ জীবন ও সামর্থ্য আছে, দর্শন চর্চা এবং শিক্ষাদান থেকে কেউ আমাকে থামাতে পারবে না। কখনো বদলাবোনা আমার এই পথ। যদি বহুবার মৃত্যুবরণ করতে হয়, তবুও না।
বিচারে সক্রেটিসকে বন্দী রাখা হলো। সিদ্ধান্ত এলো হেমলক পানে মৃত্যুদণ্ডের। সকল ঘটনা বর্ণনা করেছেন শিষ্য দার্শনিক প্লেটো ও জেনোফোন। কারাগার থেকে সক্রেটিসের পালানোর সুযোগ করে দিতে চাইলে তিনি তা গ্রহণ করেননি। বরং নির্ধারিত দিনে স্বেচ্ছায় মুখে তুলে নিলেন হেমলক।
এই বিচার দার্শনিক মহলকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। উত্থাপন করে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন। গণতন্ত্রের প্রকৃতি কেমন? মত প্রকাশে স্বাধীনতার মূল্য কতটুকু? নৈতিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের বিরোধ কোথায়? রাষ্ট্রের মূলনীতি কেমন হওয়া উচিত?
গ্যালিলিও বনাম চার্চ
সক্রেটিসের দুই হাজার বছর পর। ১৬৩৩ সাল। রোমে তলব করা হলো গ্যালিলিওকে। অপরাধ চার্চের আদেশ অমান্য, বিনা অনুমতিতে বই প্রকাশ, ধর্মবিরোধী মত এবং বাইবেল সম্পর্কে সংশয় প্রচার। তারও আগে ১৬১৬ সালের দিকে তাকে বলা হয়েছিল কোপার্নিকাসের মত নিয়ে ঘাটাঘাটি না করতে। ইতোমধ্যে গ্যালিলিও আবিষ্কার করেন টেলিস্কোপের মতো যন্ত্র। সাথে আছে পড়ন্ত বস্তু এবং সরল দোলকের সূত্রের মতো কিছু মতবাদ। প্রত্যক্ষ করেন পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে নিয়ত ঘূর্ণায়মান।
এরিস্টটল ও টলেমীয় নীতি মোতাবেক, পৃথিবীই সৌরজগতের কেন্দ্র। স্বয়ং বাইবেলের বর্ণনাও তা বলে। সুতরাং ১৬৩২ সালে গ্যালিলিও তার মত প্রকাশের সাথে সাথে ডাকা হয় আদালতে। বিচারক পোপ অষ্টম আরবানের নিযুক্ত ফাদার ভিনসেনজো ম্যাকোলিনি। জীবনের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে গ্যালিলিও বিবাদে জড়াতে চাননি। গ্যালিলিও কৌশল করলেন। তিনি যা লিখেছেন, তা নিজে বিশ্বাস করেন না। বিচারক শুনে শাস্তির মাত্রা কমালেন। বই বাজেয়াপ্ত, অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাবাস এবং প্রতি সপ্তাহে সাতটি করে তিন বছর বাইবেলের শ্লোক পাঠ। রায় শুনে গ্যালিলিও শুধু আস্তে পা ঠুকে বলেছিলেন, E Pur Si Muove যার অর্থ ‘তবুও পৃথিবী ঘুরবে’।
১৯৯২ সালে ক্যাথোলিক চার্চ নিজের ভুল মেনে নেয়। ২০০০ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পল গ্যালিলিওর বিচার ও অন্যান্য ভুলের জন্য স্বীকারোক্তি দেন।
সালেমের ডাইনি
ম্যাসাচুসেটস্-এর একটা গ্রামের নাম সালেম। সময়টা ১৬৯২ সালের বসন্তের দিকে। ৯ বছর বয়সী এলিজাবেথ এবং ১১ বছর বয়সী আবিগেইল আক্রান্ত হলো হিস্টেরিয়ায়। স্থানীয় ডাক্তার কিছুক্ষণ দেখেশুনে সিদ্ধান্ত দিলেন জাদুর কারসাজি। জাদু করেছে কোনো ডাইনি। ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো হিস্টেরিয়া। প্রতিষ্ঠিত হলো ডাইনিদের জন্য বিশেষ বিচারের ব্যবস্থা। টিটুবা, সারাহ অসবোর্ন ও সারাহ গুডকে সাব্যস্ত করা হলো ডাইনি হিসেবে।
বিচারের জন্য আনা হলে বাকি দুজন অস্বীকার করে। প্রচণ্ড চাপে ও ভয়ে নিজেকে ডাইনি বলে স্বীকার করে নেয় টিটুবা। খুব সম্ভবত কিছু তথ্য দিয়ে নিজেকে রক্ষা করার জন্য। ফলে গোটা ম্যাসাচুসেটস্ জুড়ে প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ল। চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে যোগাড় করা হলো সন্দেহভাজন ডাইনিদের। ১৯ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর। কারাগারে অসংখ্য।
আবহাওয়া পরিবর্তন ঘটতে শুরু করলো দ্রুত। হ্রাস পেতে থাকলো হিস্টেরিয়া প্রকোপ। বিচার নিয়ে সন্দেহ উঠতে দেরি হলো না। প্রথমে থামলো, তারপর নিন্দা জানালো মানুষ। অন্যান্য অপরাধের ন্যায় ডাইনিদের অপরাধের শাস্তি দেবার আগে প্রমাণের শর্ত যুক্ত করার প্রসঙ্গ আসলো। দশজন ডাইনির মুক্তি পাওয়া একজন নিষ্পাপকে শাস্তি দেওয়ার চেয়ে উত্তম। গভর্নর বিশেষ আদালতের বিলুপ্তি ঘোষণা করলেন অক্টোবরের দিকে। মুক্তি পেলো যারা কয়েদি অবস্থায় কালাতিপাত করছিল। ম্যাসাচুসেটস্-এর সাধারণ আদালত পরবর্তীতে দণ্ডপ্রাপ্তদের ক্ষতিপূরণ মঞ্জুর করেন।
লিজি বোর্ডেন আখ্যান
তার খালাস পাবার একশো বছর পরেও ঘটনাটা মানুষকে প্রভাবিত করেছে। জন্ম দিয়েছে ভৌতিক, রোমাঞ্চকর এবং রহস্যময় নানা গল্পের। ঘটনাটা আরো বেশি পরিচিতি পায় নার্সারিতে পাঠ্য একটা ছড়ার জন্যও।
“লিজি বোর্ডেন কুঠার নিলো তুলে,
আর তা দিয়ে চল্লিশ কোপে মাকে দিলো ফেলে;
দেখলো যখন কী করেছে সব,
বাপ ফিরলে বসিয়ে দিলো একচল্লিশ কোপ।”
লিজি বোর্ডেন সম্পর্কে অভিযোগ, সে তার বাপ-মাকে কুড়াল দিয়ে হত্যা করেছে। আগস্টের ৪ তারিখ, ১৮৯২সাল। লিজির বাবা এন্ড্রু ব্যবসায়িক কোনো কাজে বাইরে বেড়িয়েছিলেন। বাসায় ছিল লিজি, তার সৎ মা অ্যাবি এবং এক আইরিশ দাসী ব্রিজেট সালিভান। বাসায় ফেরার পর এন্ড্রু একটু শুয়েছিলেন। সময় সকাল ১১:১৫। লিজির ভাষ্যমতে, সে তার বাবাকে মৃত দেখতে পায়। কুড়াল দিয়ে বারবার আঘাত করা হয়েছে মাথায়। উপরের তলায় পাওয়া গেলো অ্যাবির মৃতদেহ। তাকে হত্যা করা হয়েছে আরো নির্মমভাবে। পরবর্তীতে পরীক্ষায় জানা যায় অ্যাবির মৃত্যু হয়েছে স্বামী এন্ড্রুর আগে।
জানা যায়, আগের দিন ৩রা আগস্ট লিজি প্রাসিক এসিড বা হাইড্রোজেন সায়ানাইড (একপ্রকার বিষ) কেনার চেষ্টা করে। কিছু দিন পরে অভিযোগ করা হয় সে চুলায় একটা পোশাক পুড়েছিল। তারপরেও ১৮৯৩ সালে বিচারকেরা তাকে খালাস দেয়। কারণ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ শুধুই অনুমিত, প্রমাণিত নয়। ঘটনার সাথে সরাসরি লিজি জড়িত এমন কোনো তথ্য নেই। সে যা-ই হোক, পরবর্তী সংস্কৃতিতে এই রহস্যময় ঘটনাকে নানাভাবে উপস্থাপন করে রচিত হয়েছে নানা আখ্যান।
একজন স্কোপস এবং বানর মামলা
১৯২৫ সাল। যুগের দুই বিখ্যাত আইনজীবী মুখোমুখি হলেন একে অপরের। রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষে উইলিয়াম জেনিংস ব্রায়ান এবং বিবাদীপক্ষে ক্ল্যারেন্স ডারো। মামলাটা ডারউনের বিবর্তনবাদ শিক্ষা দেওয়াকে কেন্দ্র করে।
১৯২৫ সালের মার্চে টেনিসীর প্রশাসক বাইবেলের সৃষ্টিতত্ত্ব অস্বীকার করাকে অপরাধ ঘোষণা করেন। ডারউইনের মতবাদ বাইবেলের সাথে সাংঘর্ষিক। সুতরাং তা শিক্ষা দেওয়া আইন অস্বীকারের নামান্তর। জন টি স্কোপস্ নামক স্কুলশিক্ষককে দোষী সাব্যস্ত করা হলো। রাষ্ট্রীয় ব্যায়ে চালিত স্কুলে ভুল শিক্ষা দেবার দায়ে জরিমানা করা হলো ১০০ ডলার। মামলাটি ‘মৌলবাদী আক্ষরিক বিশ্বাস বনাম ধর্মগ্রন্থের উদার ব্যাখ্যা’ হিসাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে মানুষের। ব্রায়ান মামলায় জিতলেও জনগনের সামনে অপমানিত হন তার মৌলবাদী ধ্যানধারণার জন্য। ঠিক পাঁচ দিন পরে মৃত্যুবরণ করেন ব্রায়ান।১৯২৭ সালে আবার সামনে আসে মামলাটি। সাংবিধানিক বিষয়গুলো মীমাংসিত হয় ১৯৬৭ সালে। বিতর্কিত আইনকে রদ করার মধ্য দিয়ে।
চার্লস ম্যানসনের কাণ্ড
প্রথম দিকে বেশিরভাগ সময় ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার কিশোর সংশোধনাগারে থেকেছেন চার্লস ম্যানসন। ১৯৬৭ সালের দিকে ক্যালিফোর্নিয়ায় পাড়ি জমান। পরের বছর প্রতিষ্ঠা করেন নিজস্ব ধর্মীয় ব্যাখ্যা ও প্রচারণামূলক সংগঠন ‘ফ্যামিলি’। অনুসারীরা তাকে যীশুর অবতার বলে মনে করতো। মূলত তাদের বিশ্বাসের অধিকাংশ গড়ে উঠে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী এবং মনোবৈজ্ঞানিক বিষয়কে কেন্দ্র করে। ম্যানসন প্রচার করতে থাকেন খুব শীঘ্রই জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছে। তার ফলে ধ্বংস হয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। ‘ফ্যামিলি’-কে প্রতিষ্ঠিত করে যাবে ক্ষমতায়।
ম্যানসনের অনুসারীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। ফ্যামিলির সদস্যরা ম্যানসনের নির্দেশে কয়েকটি খুন করে। তার মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্যারন টেট, মোশন-পিকচার পরিচালক রোমান পোলানস্কির স্ত্রী। খুন করা হয়েছে তিনজন অতিথিসহ লস এঞ্জেলেসের বাসায়।
১৯৭০ সালে ম্যানসন ও তার অনুসারীদের বিচার রাষ্ট্র ও জনগনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরের বছর ম্যানসনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ায় ১৯৭২ সালে মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্তির কারণে কার্যকর করা যায়নি। তার বদলে আজীবনের জন্য কারাবাস দেয়া হয়।
ও. জে. সিম্পসন ও জোড়া খুন
সিম্পসন একজন ফুটবল তারকা। দুই খুনের মামলায় তার জড়িত হবার ঘটনা এতটাই আলোচনায় আসে যে, একে ‘সিম্পসন বনাম জনগন’ বলে আখ্যা দেওয়া শুরু হতে থাকে। সিম্পসন তার নিজের জন্য বাঘা বাঘা সব আইনজীবী নিযুক্ত করেন রবার্ট শাপিরোর নেতৃত্বে। তাদের মধ্যে এলেন ডেরশোভিটজ্ এবং জনি কোক্রেনও ছিলেন। ১২ই জু্ন, ১৯৯৪সাল। সিম্পসনের সাবেক স্ত্রী নিকোল ব্রাউন সিম্পসন এবং তার বন্ধু রোনাল্ড গোল্ডম্যানকে হত্যা করা হয় লস এঞ্জেলেসের বাসায়। সন্দেহের তীর যায় সিম্পসনের দিকে। ১৭ জুন বন্ধু এ.সি. কাউলিংসের গাড়িতে করে পুলিশ থেকে সিম্পসনের ছুটে যাওয়া ৯৫ মিলিয়ন মানুষ টেলিভিশনে দেখেছে। তারপরেও গ্রেফতারের পর মামলায় দোষী প্রমাণ করা যায়নি। বেশকিছু আলামত পাওয়া গেলেও ১৯৯৫ সালের ৩রা অক্টোবর তাকে খালাস দেওয়া হয়।
আসলে বাদীপক্ষের চৌকস আইনজীবীরা ঘটনায় অন্যরকম ঘ্রাণ আনেন। উল্টো অভিযোগ করেন লস এঞ্জেলেসের পুলিশ বিশেষ করে মার্ক ফারম্যানকে বর্ণবাদী বলে। মার্ক ফারম্যান ঘটনাস্থল সিম্পসনের বাড়িতে রক্তাক্ত দস্তানা (Gloves) পেয়েছিল। আসামীপক্ষের দাবি, তাকে ফাঁসানোর জন্য সাজানো হয়েছে। সে যাত্রায় মু্ক্তি পেলেও ১৯৯৬ সালেই আবার তাকে আদালতে দাঁড়াতে হয়। এই দফায় বিচারকেরা দোষ খুঁজে পেলেন। মৃতের পরিবারকে ৩৩.৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে আদেশ হলো।
পরবর্তীকালে সিম্পসন লিখেন “If I Did It” গ্রন্থ। সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে কীভাবে সে খুন করতে পারতো। প্রাথমিকভাবে জনরোষে ২০০৬ সালে আটকে গেলেও ২০০৭ সালে বইটা প্রকাশিত হয়।
বিল ক্লিনটনের কেলেঙ্কারি
হাল আমলের সবচেয়ে আলোচিত প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন এবং হোয়াইট হাউসের ইন্টার্ন মনিকা লিউনস্কির সম্পর্ক। যার পরিণতি বিল ক্লিনটনের অভিশংসন বিষয়ক টানাপোড়েন। যদিও তিনি নিজে শপথ নিয়ে অস্বীকার করেন কথাটা। গণমাধ্যমের কাছেও তার বক্তব্য ছিলো –
“ইন্টার্ন মনিকা লিউনস্কির সাথে আমার কোনো প্রকার শারীরিক সম্পর্ক ছিল না।”
দ্রুতই প্রমাণিত হয় প্রেসিডেন্ট মিথ্যা বলেছেন। তদন্ত মূলত শুরু হয়েছিল আরকানসাসের রিয়াল এস্টেটের লেনদেনে। কিন্তু কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে যায়। ৪৪৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে কেনেথ স্টার সেই ভূমির প্রসঙ্গ টেনেছেন মাত্র দুইবার আর প্রেসিডেন্টের যৌন কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ টেনেছেন ৫০০ বারেরও বেশি। ১৯৯৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর ‘হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস্’-এ শপথ ভঙ্গ ও ন্যায়বিচারে বিঘ্নতার অভিযোগে অভিশংসন অনুমোদিত হয়।
সিনেটের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৯৯ সালের ৭ই জানুয়ারি। প্রধান বিচারক উইলিয়াম রেনকুইস্টের তত্ত্বাবধানে। ১২ই জানুয়ারি সিনেট ৫৫-৪৫ ভোটে ক্লিনটনকে শপথ ভঙ্গের দায় থেকে রেহাই দেয়। ১০ রিপাবলিকান ও ৪৫ ডেমোক্রেট। যারা পক্ষে ভোট দিয়েছে, তারাও প্রবল সমালোচনা করেছে প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের। কিন্তু এটাও বলা হয়, আনীত অভিযোগ প্রমাণিত নয়। আর যদি হয়েও থাকে, তাতেও সমস্যা নেই। কেননা সাংবিধানিক মতে অফিস থেকে প্রত্যাহার করার মতো অপরাধ বা অপকর্ম হয়ে যায়নি।
ফকির শহিদুল ইসলাম
সম্পাদনায়