চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ আসছে কোরবানী। চামড়া কেনাবেচার ধুম পড়ে যাবে। কিন্তু ভাল নেই খুলনার চামড়া পট্টি নামে খ্যাত শেখপাড়ার চামড়া ব্যবসায়ীরা। চলছে শের-এ-বাংলা রোডের সংস্কার কাজ। কোরবানির আগেই সড়ক ঠিক হয়ে যাবে এমনটিও প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু গত বছরের ন্যায় এবারও প্রক্রিয়াজাতের অভাবে কোটি কোটি টাকার চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে এমন আশংকা ব্যবসায়ীদের। এজন্য পৃথক চামড়ার বাজার অথবা শেখপাড়া চামড়া পট্টিতেই অন্তত ১০দিন সময় দেয়ার দাবি ব্যবসায়ীদের। তা’ না হলে এবার প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনা থেকেও বিরত থাকবেন এমন ঘোষণাও দিয়েছেন। এতে খুলনার চামড়ার বাজারে অস্থিরতার আশংকা করছেন অনেকে।
খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর কোরবানীর পর নগরীর শেখপাড়া চামড়া পট্টিতে পশুর চামড়া আসে এবং সেখানেই প্রক্রিয়াজাত করে চামড়া পাঠানো হয় নাটোর, ইশ্বরদি অথবা সরাসরি ঢাকার ট্যানারীতে। কাঁচা চামড়ায় লবণ দিয়ে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে সময় লাগে এক সপ্তাহ থেকে ১০দিন। কিন্তু গত বছর সময় পাওয়া যায়নি। কেননা খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীদের এখন আর দোকান নেই। রাস্তায়ই তারা প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম করেন। অর্ধশত ব্যবসায়ী থাকলেও এখন মাত্র একটি দোকানেই ৮/১০জন ব্যবসায়ী কোনরকমে ঐতিহ্যবাহী এ ব্যবসাটি টিকিয়ে রেখেছেন। অন্য দোকানগুলো চামড়ার পরিবর্তে পরিণত হয়েছে লোহা লক্করের দোকানে। এজন্য সারাবছর একটি দোকানে প্রসেসিং কার্যক্রম পরিচালিত হলেও কোরবানীর সময়ই সংকট সৃষ্টি হয়। কেননা ওই সময় রাস্তায়ই প্রসেসিং কার্যক্রম করতে হয়। মাত্র তিনদিন ছুটি থাকায় এতো কম সময়ের মধ্যে প্রসেসিং করে শেষ করা যায় না। গত বছর অন্তত: ৪/৫ হাজার চামড়া নষ্ট হয় বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
তাছাড়া চামড়ার মোকামও খোলে কোরবানীর ১০দিন পর। এতে ওই ১০দিনই তাদেরকে অপেক্ষা করতে হয় বিক্রির জন্য। যে কারণে ১০দিন সংরক্ষণ করে রাখতে হয় কোন নির্দিষ্ট জায়গায়। এমন জায়গা না থাকলে চামড়া কিনে বিপাকে পড়তে হয় ব্যবসায়ীদের। এজন্য আগামী কোরবানীর সময় কমপক্ষে এক সপ্তাহ থেকে ১০দিন সময় দাবি করে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সাথে বৈঠক করেছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।
এ প্রসঙ্গে খুলনা জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ: সালাম ঢালী বলেন, সিটি মেয়র তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে, কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় দেয়া হবে চামড়া প্রসেসিংয়ের জন্য। জায়গা না পেলে ব্যবসায়ীরা লোকসানের আশংকায় এবার চামড়া কেনা থেকে বিরত থাকতে পারেন বলেও তিনি জানান।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, চামড়া কেনা বন্ধ থাকলে চোরাই পথে ভারতে পাচার হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাছাড়া দামও কমতে পারে। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চামড়া কিনে সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করতে পারে এমন আশংকাও অনেকের। ফলে যেসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে চামড়া আদায় হয় তাদেরকেই ক্ষতির মুখে বেশি পড়তে হতে পারে।
শেখপাড়ার আমান লেদার কমপ্লেক্সের ম্যানেজার ও চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধ্যক্ষ মো: সাইদুর রহমান সাইদ বলেন, এমনিতেই খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীদের অনেকেই দেউলিয়া হয়েছেন। কেননা বিগত ১০/১৫ এমনকি ২০ বছর ধরে ট্যানারীর কাছে টাকা পাওনা রয়েছে খুলনার ব্যবসায়ীদের।
অন্তত ১৫/২০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে উল্লেখ করে কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, টাকার অভাবে অনেকে পেশা পরিবর্তন করে অন্য দোকান দিচ্ছেন অথবা কেউ ইজিবাইক চালাচ্ছেন। অথচ খুলনা চামড়া ব্যবসার জন্য ছিল একটি সম্ভাবনাময় এলাকা।
অপরদিকে, খুলনার চামড়া ব্যবসায়ীরা এবার চামড়া না কেনার সিদ্ধান্ত নিলেও ফুলতলার সুপার এস লেদার লি:-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজ ভূইয়া বলেন, তিনি এ পর্যন্ত অন্তত একশ’ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়। তার পরেও এবার তিনি খুলনা বিভাগের সব চমাড়া কেনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। বাজার দর অনুযায়ী তিনি চামড়া কিনবেন বলেও জানান। সুতরাং চামড়া নিয়ে আশংকার কিছু নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সে ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনেও প্রসেসিং না করেও তার প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে পারেন এমনটিও জানিয়েছেন তিনি।