ছয় বছর পরে টেরিটাওয়েল (তোয়ালে জাতীয় পণ্য) উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ গ্রুপের প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে ৫৯ কোটি ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪২৯ টাকা আত্মসাতের দায়ে দুদকের আরো একটি মামলায় চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিল সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার কমিশন থেকে অনুমোদন দেওয়া চার্জশিটে বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিক ও মেসার্স আলফা কম্পোজিট টাওয়াল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খাজা সোলেমান চৌধুরী এবং প্রিমিয়ার ব্যাংকের ছয় কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি রাজধানীর মতিঝিল (ডিএমপি) মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তদন্তে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন— বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিক ও মেসার্স আলফা কম্পোজিট টাওয়াল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খাজা সোলেমান চৌধুরী, একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও খাজা সোলেমানের স্ত্রী নওরীন হাবিব, পরিচালক খাজা সোলেমানের বাবা সফিকুল আনোয়ার চৌধুরী।
এছাড়া দি প্রিমিয়ার ব্যাংকের মতিঝিল শাখার ছয় কর্মকর্তারা হলেন—সাবেক ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ শাহীনুর রহমান, ফার্স্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এ রহিম (রুহুল আমিন), ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শাহাবুদ্দিন সরদার, ফার্স্ট এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. তানজিবুল, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজার জি এম শাহাদাত হোসেন, এক্সিকিউটিভ অফিসার আবু সালেহ মো. আরিফুর রহমান।
অন্যদিকে তদন্তে আগত নতুন চার আসামিরা হলেন— শাহরিশ কম্পোজিট টাওয়েলস লিঃ এবং আলপা কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেডের পরিচালক সারোয়ার জাহান, বিসমিল্লাহ গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি ও অথরাইজড সিগনেটরি) আকবর আজিজ মুতাক্কি, মহাব্যবস্থাপক (জিএম ও অথরাইজড সিগনেটরি) মো. আবুল হোসাইন চৌধুরী ও ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার ও অথরাইজড সিগনেটরি) রিয়াজউদ্দিন আহম্মেদ।
দুদকের সহকারী পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন দীর্ঘ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করলে কমিশন মামলাটিতে আদালতে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে। শিগগিরই এই বিষয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে। মামলার বাদী দি প্রিমিয়ার ব্যাংক মতিঝিল শাখার সাবেক সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক মো. ইদ্রিস আলী ফকির।
দুদক সূত্র জানায়, তদন্তে দেখা যায়, খাজা সোলায়মান আনোয়ার চৌধুরী তার কোম্পানি আলফা কম্পোজিট টাওয়েলসের অনুকূলে ২০১১ ও ২০১২ সালের বিভিন্ন সময়ে চারটি এক্সপোর্ট কন্ট্রাক্টের বিপরীতে ব্যাংক টু ব্যাংক এলসি খুলে তার বিপরীতে ইস্যু করা ইমপোর্ট বিল বাবদ দি প্রিমিয়ার ব্যাংক মতিঝিল শাখায় একসেপ্টেন্স গ্রহণ করে ব্যাংকের ৪৭ কোটি ৮৪ লাখ ৮৪ হাজার ৬০০ টাকার দায় সৃষ্টি করেছেন।
আবার প্যাকিং ক্রেডিট (পিসি) বাবদ ১ কোটি ৪৯ লাখ ১৯ হাজার ৯২২ টাকা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে প্রাপ্ত বিল অব লেডিং সমূহ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের ৯ কোটি ৮১ লাখ ৪২ হাজার ৯০৭ টাকাসহ সর্বমোট ৫৯ কোটি ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪২৯ টাকা দি প্রিমিয়ার ব্যাংক মতিঝিল শাখার কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আত্মসাৎ করে।
টেরিটাওয়েল (তোয়ালে জাতীয় পণ্য) উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বিসমিল্লাহ গ্রুপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ২০১৩ সালে ৩ নভেম্বর মতিঝিল ও রমনা মডেল থানায় বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি ও ১৩ কর্মকর্তাসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে ১২টি মামলা দায়ের করে দুদক। এরপর ২০১৫ সালের বিভিন্ন সময়ে মামলার চার্জশিট দাখিল করে দুদক।
বিসমিল্লাহ গ্রুপের আত্মসাৎ করা ফান্ডেড টাকার পরিমাণ ৯৯০ কোটি আর নন-ফান্ডেড ১৮৪ কোটি। মামলাগুলো ফান্ডেড (৯৯০ কোটি) অংশের হয়েছে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের করপোরেট শাখা থেকে আত্মসাৎ হয়েছে ৩০৭ কোটি, মগবাজার শাখা থেকে ১৭৭ কোটি এবং এলিফ্যান্ট রোড শাখা থেকে ১৫ কোটি টাকা। আর প্রাইম ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে ২৬৫ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের মতিঝিল শাখা থেকে ২৩ কোটি, যমুনা ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ১০৮ কোটি এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ হয়েছে ৯৩ কোটি টাকা। বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি খাজা সোলেমান চৌধুরী ও তার স্ত্রী নওরীন হাবিব ১২ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি।
বিসমিল্লাহ গ্রুপের ৫৩ আসামির মধ্যে ১৩ জন আসামি বিসমিল্লাহ গ্রুপের বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ৪০ জন আসামি জনতা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক ও শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা।
মামলাগুলোতে বিসমিল্লাহ গ্রুপের আসামিরা হলেন— বিসমিল্লাহ গ্রুপের মালিক ও মেসার্স আলফা কম্পোজিট টাওয়াল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) খাজা সোলেমান চৌধুরী, একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও খাজা সোলেমানের স্ত্রী নওরীন হাবিব, পরিচালক খাজা সোলেমানের পিতা সফিকুল আনোয়ার চৌধুরী, তিন পরিচালক আবিদা হাসিব, নাহিদ আনোয়ার খান, খন্দকার মো. মইনুদ্দিন আশরাফ, বিসমিল্লাহ গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি ও অথরাইজড সিগনেটরি) আকবর আজিজ মুতাক্কি, মহাব্যবস্থাপক (জিএম ও অথরাইজড সিগনেটরি) মো আবুল হোসাইন চৌধুরী, ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার ও অথরাইজড সিগনেটরি) রিয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, নেটওয়ার্ক ফ্রেইট সিস্টেম লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেন, বে ইয়ার্ন লিমিটেডের মালিক গোলাম মহিউদ্দিন আহম্মেদ ও টিডব্লিউ এক্সপ্রেসের মালিক মো. মঈন উদ্দিন।