চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃসম্প্রতি ভারতে জাতীয় নাগরিক পুঞ্জি এনআরসি ঘোষণার পর ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত এলাকা দিয়ে বেড়েছে পাসপোর্টবিহীন অবৈধ অনুপ্রবেশ। বেশ কয়েকদিন ধরে সীমান্ত দিয়ে গরুর সঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনুপ্রবেশকারীদের।
এভাবে ভারতের মেদিনীপুর ও বেঙ্গালুরু থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী কয়েকজনের মধ্যে ফয়সাল হাওলাদার ও মাসুম জানান, ‘খুলনা জেলায় আমাদের বাড়ি ছিল। সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে কয়েকবছর আগে কাজের জন্য ভারতে গিয়েছিলাম। স্থানীয়দের নির্যাতনে দীর্ঘদিন টাকা না পেয়ে ভারতের এক দালালের মাধ্যমে চুক্তি হয় জন প্রতি ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার বিনিময়ে আমাদের সীমান্ত পার করে দেবে। এরপর দালালরা গরুর সঙ্গে আমাদের পার করছে। তিনটা গরু পার হয়েছে তারপর আমরা পার হইছি। কাঁটাতার পার করে দালালরা বলে তোরা গরুর সঙ্গে নদী পার হয়ে সোজা হাটতে থাকবি। সীমান্ত পার করার সময় আমাদের কাছে টাকা, জামা-কাপড় যা থাকছে সবই দালালরা কেড়ে নিয়ে নিচ্ছে। পরে এপারে এসে বিজিবির হাতে আটক হয়েছি।’
এমনিভাবে সীমান্ত এলাকা দিয়ে কখনো গরুর সঙ্গে, কখনো কাঁটাতার দিয়ে, কখনো বা নদীতে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে অনুপ্রবেশকারীদের।
গত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের বর্তমান সময় পর্যন্ত সীমান্তের লেবুতলা, মাটিলা, খোশালপুর, কুসুমপুর, শ্যামকুড়সহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ভারতের বেঙ্গালুরু, কর্ণাটক, মেদিনিপুর, আসামসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশকারী ৩২৫ জনকে আটক করেছে বিজিবি। কেউ সপরিবারে, কেউ বা বিভক্ত হয়ে সীমান্ত পার হচ্ছে।
ভারত থেকে অনুপ্রবেশকারীরা জানান, ‘বিজেপির লোকজন বলছে তোমরা এ দেশে থাকতে পারবা না, বাংলাদেশে চলে যাও। কখনো রাস্তার পাশে থাকলে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, বাড়িঘর ভেঙে দিচ্ছে। ভারতে বেশি দিন থাকতে পারব না, কখন কী হয়, এই ভয়ে আমরা এদেশে চলে আসছি।’
মহেশপুর সীমান্তের বাঘাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে কাজ করার সময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, ‘নদীর ওপারে ভারত-এপারে বাংলাদেশ। সীমান্তের ওপারে ভারতের অভ্যন্তরে নদীর-কোল ঘেঁষে প্রচুর কলাবাগান। বাগানেরও প্রায় দেড়শ গজ ভেতরে কাঁটাতার। দালালের মাধ্যমে বিএসএফের সহযোগিতায় কাঁটাতার পেরিয়ে রাতের বেলায় লোকজন আসে ভারত থেকে। সকালে দেখা যায় ভেজা-কাপড়, স্যান্ডেল পড়ে আছে। অনেক সময় ফসলও মাড়িয়ে রেখে যায়। মূলত যখন বিজিবি থাকে না তখন সীমান্ত পার হয়ে লোক আসে।’
সীমান্তের সেজিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা পল্লী পশু চিকিৎসক শওকত আলী জানান, ভোর রাতের দিকে ভারত থেকে লোক আসে। সকাল বেলায় নামাজ পড়তে উঠলে দেখা যায় ভারত থেকে আসা লোকজন নসিমন, মাহেন্দ্রতে করে নানাভাবে দেশের ভেতরে প্রবেশ করছে। যে পরিমাণ ধরা পড়ে তার থেকে অনেক বেশি লোক বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে।
মহেশপুরের সীমান্তবর্তী নেপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম দৈনিক অধিকারকে জানান, আমার জানা মতে কমপক্ষে ভারতে এক কোটির ওপরে বাংলাদেশি আছে। যারা বিনা পাসপোর্টে বহু বছর ধরে ভারতে আছে, কাজ করে সম্প্রতি তারা নাগরিকত্ব না পেয়ে রাজনৈতিক চাপে দেশে আসতে বাধ্য হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এলাকার মানুষকে সচেতন করব এমন কোনো নির্দেশনা সরকার আমাদের দেয়নি। ফলে কিছু করতেও পারছি না। সরকারি নির্দেশনা এলে আমরা সকলে মিলে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালাব।
খোশালপুর গ্রামের দফাদার (গ্রাম পুলিশ) জাহিদুল ইসলাম জানান, মাঝে বিজিবির টহলের কারণে অনুপ্রবেশ কিছুটা কমেছিল। কিন্তু বর্তমানে আবার বেড়েছে।
ঝিনাইদহ-৫৮ বিজিবি পরিচালক লে. কর্নেল কামরুল আহসান দৈনিক অধিকারকে জানান, বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঘটলেও জুলুলী বিওপি সংলগ্ন এলাকাকে সবথেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। কেননা এই অংশেই কাঁটাতার নেই এবং ভারতের সীমান্তে সে দেশের নাগরিকদের বাড়ি রয়েছে। ফলে সেখানে আশ্রয় নিয়ে রাতের বেলায় তাদের সহযোগিতায় অনুপ্রবেশ ঘটছে। তাই জুলুলীসহ বিভিন্ন এলাকায় বিজিবি টহল জোরদার করেছি। তবে যারা অনুপ্রবেশ করছে তারা সকলেই বিভিন্ন সময় কাজের সন্ধানে কিংবা চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিল।
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস জানান, যারা আটক হচ্ছে তারা সকলেই বাংলাদেশি। তবে বিজিবি সীমান্ত থেকে পাসপোর্টবিহীন অবস্থায় ঢুকে পড়া লোকদের থানায় সোপর্দ করলে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। সীমান্তে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিজিবি আওতাধীন এলাকার বাইরে পুলিশও সতর্ক রয়েছে।