চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃবাজারে চালের মূল্য চড়া থাকলেও ঝিনাইদহে চলতি মৌসুমে আমন ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা। উঠছে না তাদের উৎপাদন খরচও। ধানের এমন দামে চরম ক্ষুব্ধ কৃষকরা।
কৃষি বিভাগের তথ্যে চলতি মৌসুমে জেলায় ধানের আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যেই প্রায় ৯৫ ভাগ জমির ধান কাটা শেষে হয়েছে। চাষিরা এখন ব্যস্ত নতুন ধান ঘরে তুলতে। কেউবা মাঠ থেকে নতুন ধান বাড়িতে আনছেন, কেউবা পরিবারের সবাই মিলে তা মাড়াই-পরিষ্কারের কাজ করছেন। কিন্তু সোনার ধান ঘরে আসলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। কারণ বাজারে ধানের দাম নেই, উঠছে না উৎপাদন খরচ।
চলতি আমন মৌসুমে বিঘা প্রতি ১৪ থেকে ১৫ হাজাার টাকা উৎপাদন খরচের বিপরীতে ধান হচ্ছে গড়ে ২০ মন হারে। সেই ধান মোটা-চিকন ভেদে ৬শ থেকে ৭শ টাকা দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
জেলা সদরের চুটলিয়া এলাকার ধান চাষি মোহাম্মদ আক্তার জানান, ধান উৎপাদনে যে খরচ হচ্ছে দামতো সে রকম পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে চাল কিনতে গেলে দাম বেশি। কিন্তু কৃষকের ধানের দাম নেই। নিজের জমি চাষ করেই আমাদের এমন লোকসান হচ্ছে, তাহলে যারা অন্যের জমি চাষ করে তারা তো আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তেতুলবাড়িয়া এলাকার কৃষক ঈসরাইল হোসেন বলেন, সাত বিঘা জমিতে এবার ধান চাষ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে ধান কাটা, আটি বাধা থেকে শুরু করে বাড়িতে নিয়ে মাড়াই করা পর্যন্ত প্রতি বিঘায় শ্রমিকদের দিতে হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আবার সার মাটির দাম বেশি। আমাদের তো অনেক খরচ হয়ে যায়, কিন্তু লাভ আসছে না।
লাউদিয়া এলাকার চাষি নায়েব আলী জানান, ধানের ওপরেই আমাদের সব। কারণ ধান বিক্রির টাকা দিয়েই সারা বছর পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে হয়। যে মৌসুমে ভালো দাম পায় সে বছর খুব ভালো চলে। কিন্তু এ বছর আমাদের খুই লোকসান হচ্ছে, দাম নেই বাজারে। সরকার যদি ধানের দাম একটু বাড়িয়ে দেয় তাহলে চাষিরা বেঁচে যেত।
চুটলিয়া বাজারের ধান ব্যসায়ী রফিকুল আলম লিটন জানান, বাজার থেকে ধান কিনে মিলারদের কাছে বিক্রি করি। কিন্তু সেখানেও এবার ধান দিতে পারছি না ঠিকমতো। মিলাররা আমাদের বলছে চাল বিক্রি নেই, চালের টাকা পাচ্ছি না। বাধ্য হয়েই কম দামে ধান কিনতে হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, সরকার ধান ও চাউল বিদেশে রপ্তানির একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটি বাস্তবায়িত হলে এবং খাদ্যগুদামে ব্যাপকভাবে ধান ক্রয় শুরু হলে ধানের দাম বাড়বে, চালের দামও কমে যাবে। সে সময় চাষিরা সঠিক মূল্য পেয়ে লাভবান হবেন।