অনলাইন ডেস্কঃ স্বাস্থ্য খাতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকেই এটি হয়ে উঠেছে দুর্নীতির অন্যতম উৎস। সম্প্রতি খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগে কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি চাকরির কথা বলে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং আউটসোর্সিংয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা বেতন না পাওয়ার পর টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। ২১১ জন আউটসোর্সিং কর্মচারীর অধিকাংশের কাছ থেকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে আউটসোর্সিং কর্মরত-কর্মচারীদের বেতন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নিজ দায়িত্বে কাজ করার জন্য আউটসোর্সিং এর কর্মচারীদের কাজ করতে বলেছে।
এদিকে আউটসোর্সিং ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তালিকা পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে বেশির ভাগ নিয়োগই টাকার বিনিমিয়ে সিভিল সার্জন-এর দপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছে। টাকা লেনদেনের বিষয়টি ভুক্তভোগীর বক্তব্যের রেকর্ড এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত রাসেল কবির। তাকে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি এই প্রতিবেদক বলেন, সাতক্ষীরা ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত তজিবুর রহমান তাকে খুলনা জেনারেল হাসপাতালে সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। এতে সে রাজি হওয়ায় চুক্তি মোতাবেক রাসেল কবির ২ লাখ টাকা গ্রামের জমি বিক্রি ও সমিতি থেকে ঋণ তুলে তজিবুরকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। এ টাকা দেওয়ার সময় তজিবুর তার কাছ থেকে স্ট্যাম্পে সাক্ষর করে নেন। এরপর রাসেলের আউটসোর্সিং-এ চাকরি হয়। চাকরি হওয়ার পর থেকে দাবিকৃত আরও ১ লাখ ২৫ টাকা দিতে মোঃ তজিবুর তাকে চাপ সৃষ্টি করছেন।
রাসেল কবির বলেন, যখন জানতে পারলাম এটা সরকারি চাকরি না, আর বর্তমানে বেতন অনিশ্চয়তা রয়েছে। তখনই তজিবুরকে ফোন দিতে থাকি। কিন্তু তিনি গত দুই দিন ফোন রিসিভ করছেন না। এমনি বাইরে থেকে ফোন দিলেও তাও ধরছেন না।
গত ২৬ মে ২১১ জন আউটসোর্সিং চাকরিতে যোগদান করে। এখন পর্যন্ত কেউ বেতন পাননি। বেতন না পাওয়ার ফলে রাসেল কবিরের সন্দেহ হলে জানতে পারে এটা সরকারি চাকরি না। চুক্তিভিক্তি চাকরি। ওয়ার্কপার্মিট শেষ হওয়ায় বেতনও অনিশ্চিত হয়েছে। কর্মচারীরা জানাজানির পর সবাই আতঙ্কে রয়েছে। রাসেল কবিরের মত যারা জমিজমা বিক্রি ও ধারদেনা করে টাকা দিয়েছেন তারা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২১১ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগের উদ্যোগ নেয় খুলনা সিভিল সার্জন দপ্তর। ১২ মে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। টেন্ডারের মাধ্যমে ফুলতলা উপজেলার দামোদর এলাকার মেসার্স তাকবীর এন্টারপ্রাইজ নামের ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি জনবল সরবরাহের কার্যাদেশ পায়। এর আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় গত জানুয়ারির স্মারকে এ নিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী জনবল নিয়োগ ঠিকাদারী তালিকার অনুযায়ী হতে হবে। কিন্তু তার তালিকা অনুযায়ী কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এমনকি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে প্যাডে কোনো নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়নি।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাকবির এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, টেন্ডারের মাধ্যমে ২০১৯ সালে ১২ মে ওয়ার্ক অর্ডার পাই। ২৬ মে তালিকা প্রদান করি। সিভিল সার্জন থেকে দপ্তর থেকেই নিয়োগ প্রক্রিয়া হয়। নিয়োগ হলে আমার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের প্যাডের পরে নিয়োগ হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ওয়ার্কপার্মিট রয়েছে। এটা জুনেই শেষ হয়ে গেছে। এটা পুনরায় রিনিউ করতে হলে মন্ত্রণালয় থেকে পুরনায় রেজিস্ট্রেশন করার নিয়ম রয়েছে। তা না হলে রিনিউ হবে না। যার কারণে কারও বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলায় কর্মরতরা পাবে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এর চেয়ে আরও ৫শ টাকা বেশি বেতন পাবে। বছরে ঈদ উৎসব বোনাস পাবেন ৮ হাজার ২৪০ টাকা আর বৈশাখী ভাতা পাবেন বোনাসের ২৫ ভাগ এক হাজার ৬৫০ টাকা।
যারা কর্মরত আছে তাদেরকে বলা হয়েছে নিজ দায়িত্বে কাজ করতে হবে। যদি কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি হয় বেতন হবে, তা না হলে বেতন হবে না। ঠিকাদারী হিসেবে সিভিল সার্জন দপ্তর থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে। আমি তালিকা দিয়েছি। কিন্তু আমার তালিকা অনুযায়ী কর্মচারী নিয়োগ হয়নি। যারা কর্মরত আছেন, তারা আমার প্রতিষ্ঠানের প্যাডে তাদের কোনো নিয়োগপত্র নেই।
এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ এ এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোন ব্যক্তির কাছে টাকা নিলো আমার জানা নেই। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্যাডে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে জনৈক মোঃ তজিবুরকে রোববার থেকে সোমবার পর্যন্ত দফায় দফায় ফোন দিলিও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ফোনটি বন্ধ করে দেয়।
সিভিল সার্জন সাক্ষরিত গত ২৬ মে’র পদায়নপত্রে রয়েছে- টুটপাড়া সদর আরবান ডিসপেনসারীতে ১১ জন, ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯ জন, খুলনা জেনারেল হাসপাতালে ৩১ জন, তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ জন, ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন, কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৭ জন, বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৬ জন, বিভিন্ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১২ জন, রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১ জন, দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন, তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১ জন, কপিলমুনি ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে তিনজন, পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৮ জন এবং দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪ জন পদায়ন করা হয়।