ফকির শহিদুল ইসলামঃ
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সম্পত্তি নিয়ে চলছে হরিলুট। গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স ২০ তলা করার কথা থাকলে ১০ তলা করে লাপাত্তা ওয়েস্টার্ন গ্রুপের ডেভেলপার কোম্পানী ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। বর্তমানে এই ডেভেলপার কোম্পানী ঘাটি গেড়েছেন খুলনায় রিসোর্ট ব্যবসায়। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের শত শত কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার পর এই কোম্পানী নতুন করে বিনিয়োগ করছেন ট্যুরস এন্ড ট্যুরিজম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। প্রথমে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার হয়ে এখন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বরণপাড়ায় ৯.২৫ একর জায়গা নিয়ে গড়েছেন রানা রিসোর্ট এন্ড এমিউজমেন্ট পার্ক। এখানে নির্মাণ করেছেন অত্যাধুনিক এমিউজমেন্ট পার্ক ও নির্মানাধীন রয়েছে পাঁচ তারকা মানের হোটেল। রানা রিসোর্ট এন্ড এমিউজমেন্ট পার্কটি ওয়েষ্টার্ণ গ্রুপের একটি অংঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
এক দিকে লাপাত্তা অন্য দিকে শুক্রবার দুপুরে জাকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নিজ পুত্রের নামে গড়ে তোলা রানা রিসোর্ট এন্ড এমিউজমেন্ট পার্ক এর উদ্বোধন করেন। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠান নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে কৌতুহল থাকলেও এখন বের হয়ে আসছে এই বিএনপি নেতার ওয়েষ্টার্ণ গ্রুপের নানা অনিয়মের তথ্য। ক্ষমতাশীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা এবং নেপথ্যে জমায়াত বিএনপি’র ছত্রছায়ায় এই প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। স্থানীয় ভাবে লোকদের কর্মসংস্থানের দোহাই দিয়েই মূলত এখানে প্রমদ বিলাসীদের অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছেন।
রাজধানীর গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স ৬১৪ শতাংশ এই জমির মালিক মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। এই জায়গায় ২০ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ না করে উধাও হয়ে গেছে ডেভেলপার কোম্পানি। ভবনটির ১০ তলা পর্যন্ত নির্মাণ শেষে সব ফোর ও দোকান বিক্রি করে সরে পড়েছে সাবেক কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সাবেক সহ-সভাপতি এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঁইয়ার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান গুলিস্তানের এই সম্পত্তির ওপর ২০ তলা ভবন ‘গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করতে ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে এক ‘অসম’ চুক্তি করে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। চুক্তি অনুযায়ী, ভবন নির্মাণের পর সব ফোর বিক্রি করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। আর কল্যাণ ট্রাস্ট পাবে দোকান ক্রেতার কাছ থেকে মাসিক ভাড়া। কিন্তু বর্তমানে যে ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়ে ভবনটির তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতাও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে, ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভবনের ফোরগুলো বিক্রি করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যান ডেভেলপার কোম্পানির মালিক ও বিএনপি নেতা এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঁইয়া।
২০০১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ার্সের সঙ্গে কল্যাণ ট্রাস্টের চুক্তি হয়। গুলিস্তান সিনেমা হলের ওই প্লটে জমির পরিমাণ শূন্য দশমিক ৬১৪০ একর। চুক্তির দিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে ২০ তলা ভবন নির্মাণ করে তা কল্যাণ ট্রাস্টকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। পরে দুই ধাপে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। সে অনুয়ায়ী ২০০৭ সালের মধ্যে ভবন নির্মাণ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মালিক এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠতে থাকায়, তিনি পালিয়ে যান। এর পর আর ভবনের নির্মাণ কাজ এগায়নি।
ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস অরগানাইজেশনের চেয়ারম্যান মনজুর হোসেন জানান, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যোখানে দূনীতি বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষনা করেছেন। সেখানে এই বিএনপি ও জামায়াত কানেকশন নেতা কিভাবে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সম্পদ হরিলুট করে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ব্যবসা কওে এখন খুলনায় রিসোর্ট ব্যবসা শুরু করেছে কিভাবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ আমলে নেবেন বলে আমি মনে করি।
মুক্তিযোদ্ধা মুনছুর খান জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বদা মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি থাকতে এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপি নেতা এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ থাকা সত্ত্বে তিনি কিভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পদ হরিলুট করে এবং দূর্নীতি করে দাপটের সাথে সমাজে চলাফেরা করছে।
ওয়েষ্টার্ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান এ এস এম আলাউদ্দিন ভূঁইয়ার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেস্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।