চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃগ্যাসের পাইপ লাইন বসানো আর ড্রেন সংস্কারের কারণে সামান্য গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতেই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে গেছে খালিশপুর এলাকা। বিশেষ করে ফেয়ার ক্লিনিকের মোড় থেকে সরকারি মহসিন কলেজের সামনে দিয়ে পার্কের মোড় হয়ে পিপলস্ জুট মিলের গোল চত্বর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। ওই এলাকার বেশ কিছু জায়গায় ড্রেন সংস্কারের কাজ চলছে।
অন্যদিকে গত অক্টোবর থেকে অধিকাংশ বড় সড়ক খুঁড়ে সড়কের মাঝ বরাবর বসানো হয়েছে গ্যাসের পাইপ। কিন্তু শুধু মাটি-বালু দিয়েই খননের জায়গা ভরাট করে রাখা হয়েছে। এ কারণে অল্প বৃষ্টিতেই মাটি ধুয়ে সড়কের ওপর ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী বলছেন, সড়ক খোড়া হলেও সংস্কার কাজ করা হয়নি। সামান্য মাটি দিয়েই ভরাট করা হয়েছে। এতে ভরাট স্থানের অনেক জায়গার মাটি উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সব সময় ব্যস্ত ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল করায় শুষ্কের সময় ধুলায় পরিপূর্ণ হয়ে যেতে হয়। আর এখন বৃষ্টিতে ওই ধুলা কাদায় পরিণত হয়ে পুরো সড়ক কাদা-পানিতে একাকার হয়ে গেছে। পিচ্ছিল হয়ে পড়েছে সড়ক। এ কারণে ছোট যানবাহন নিয়ে চলাচল দুরূহ হয়ে পড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে ওই সড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটে চলা মুশকিল।
গতকাল শুক্রবার দুপুরের দিকে ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, খালিশপুর ফেয়ার ক্লিনিকের সামনে থেকে সরকারি মহসিন কলেজের সামনে দিয়ে পিপলস জুট মিলের গোল চত্বর পর্যন্ত সড়কের কাদা-মাটির দৃশ্য। খালিশপুর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কের মাঝ বরাবর লম্বা করে সম্প্রতি বসানো হয়েছে মোটা গ্যাস পাইপ। সড়কের কাটা স্থানে মাটি ও বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। অন্যদিকে ওই সড়কের বেশ বড় একটি অংশ জুড়ে চলছে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন নির্মাণের কাজ। ওই কাজের জন্য ড্রেনের মাটি কেটে তুলে রাখা হয়েছে সড়কে। বৃহস্পতিবারে বৃষ্টিতে দুই মাটি ধুয়ে ঢেকে গেছে পুরো সড়ক। কাদা পানিতে দুর্ভোগের অন্ত নেই ওই এলাকার মানুষের। তাছাড়া কেটে রাখা সড়কের অনেক জায়গায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।
ওই সড়কেই কথা হয় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। মেগা বিরিয়ানি হাউজে খালিশপুর মুজগুন্নী এলাকা থেকে বিরিয়ানি আনতে গিয়েছিলেন আমজাদুর রহমান। মোটরসাইকেলে করে সেখানে যাওয়ারে পথে বাইক ও দুই পায়ের জুতা কাদা-পানিতে ভিজে যায়। তিনি বলেন, খনন করার ফলে গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে সড়কটি বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সিটি কর্পোরেশন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
খুলনা সদর থেকে পিপলস মোড়ের দিকে ইজিবাইক নিয়ে যাচ্ছিলেন মোহাম্মদ পলাশ নামের একজন চালক। তিনি বলেন, পার্কের সড়ক ও বিআইডিসি সড়ক দিয়েই মূলত যাত্রী চলাচল করে। কিন্তু সড়ক দু’টি কাটার কারণে আর দু’দিনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে যাত্রী যেমন পাওয়া যাচ্ছে না, তেমন যাত্রী নামাতেও অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। সড়কটি দ্রুত চলাচলের উপযোগী করার আহ্বান জানান তিনি।
জানা গেছে, গত ২ অক্টোবর থেকে আড়ংঘাটা এলাকা থেকে খালিশপুরের নিউজপ্রিন্ট মিল পর্যন্ত পাইপলাইন বসানোর কাজ করা হয়েছে। ওই পাইপ লাইন বসানো হয়েছে মুজগুন্নী এলাকা হয়ে আবু নাসের হাসপাতালের সামনে দিয়ে গোয়ালখালী কবরস্থান সড়ক হয়ে নিউজপ্রিন্ট কারখানার দিকে গেছে। সেখান থেকে আবার বিআইডিসি সড়কের পারহাউজ মোড় পর্যন্ত পাইপ লাইনের কাজ করা হয়েছে। পাইপ বসানোর জন্য খনন করা হয়েছে সড়কের মাঝ বরাবর পাঁচ থেকে ছয় ফুট স্থান। আর পাইপ লাইন বসানোর পর খনন করা জায়গা পূরণ করা হয়েছে মাটি-বালু দিয়ে।
পদ্মার এপারের ২১ জেলায় গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে ‘সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি’। তাদের কাছ থেকে নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিসিএল) খালিশপুরের গোয়ালপাড়া ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নিউজপ্রিন্ট মিলের জমিতে নির্মাণাধীন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস নেবে। এজন্য পাইপলাইন বসানোর কাজ করা হয়েছে। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন এই কাজ করেছে। পাইপলাইন বসানোর কাজ তদারকি করছে এনডব্লিউপিসিএল’র কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনডব্লিউপিসিএল’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ এজাজ মামুন বলেন, সড়ক খুঁড়ে পাইপ বসানোর ক্ষতিপূরণ হিসেবে খুলনা সিটি কর্পোরেশনকে ৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। সড়ক সংস্কারের দায়িত্ব এখন কেসিসি’র। শর্ত অনুযায়ী যেভাবে সড়ক ভরাট করার কথা ছিল প্রতিষ্ঠানটি থেকে তা করা হয়েছে।
কেসিসি’র প্রধান প্রকৌশলী লিয়াকত আলী খান বলেন, এনডব্লিউপিসিএল সড়ক সংস্কারের জন্য টাকা দিয়েছে। সম্প্রতি পাইপ লাইনের কাজ শেষ হলেই ওই সড়ক মেরামত করার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হলেই সড়কের কাজ শুরু হবে।