চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃকপোতাক্ষ খননের সফলতা অব্যাহত রাখতে টিআরএম প্রকল্প এলাকায় শুস্ক ধারাবাহিক ক্রসড্যাম স্থাপনে বিলম্ব কপোতাক্ষ ফিরে যাচ্ছে তার পূর্বের অবস্থায়। প্রতি দিনের পলি বাহিত জোয়ারের পানি নদীর বুকে নতুন করে ভরাট করছে। মৌসুমের শুরুতেই ক্রসড্যাম স্থাপন না হলে নাব্যতা হ্রাসে জোয়ার বাহিত পলি কপোতাক্ষ ভরাটে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
প্রতিবার মৌসুমের শুরুতে কপোতাক্ষের তালার পাখিমারা টিআরএম প্রকল্পের উজান অংশের জোয়ারবাহিত পলি ঠেকাতে সেখানে ক্রসড্যাম স্থাপন করা হয়। আবার বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনে তুলে দেওয়া হয় ক্রসড্যাম। গতবার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পহীনতা,প্রাকৃতিক বিরুপ প্রভাবসহ নানা প্রতিকূলতায় খানিকট দেরীতে স্থাপিত হয় ড্যাম। এতে জোয়ারের বয়ে আনা ভারি পলি ঠুকে পড়ে উজান অংশে। এরপর বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই তুলে দেয়া হয় ক্রস ড্যাম। প্রাকৃতিক নিয়মে বর্ষা মৌসুম শেষে ইতোমধ্যে জোয়ারের বয়ে আনা পলি কপোতাক্ষের তলদেশ পূরণ নব্যতা হ্রাস শুরু হয়েছে। তবে এখনও শুরু হয়নি পাউবোর ক্রসড্যাম স্থাপন পরিকল্পনা। ফলে কপোতাক্ষের নাব্যতা নিয়ে জনপদের লাখ লাখ মানুষের মধ্যে নতুন আশংকা তৈরী হয়েছে।
ভূক্তভোগী জনপদের লাখ লাখ মানুষের দাবি, ক্রসড্যাম স্থাপনে বিলম্ব কিংবা না হলে সরকারের ২৬২ কোটি টাকা ব্যায়ে কপোতাক্ষ খননের সুফল ভেস্তে যাবে। পানি কমিটি থেকে শুরু করে আন্দোলনরত এনজিওগুলোও একমত পোষন করে নতুন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, কপোতাক্ষের নাব্যতা বৃদ্ধি ও দীর্ঘ দিনের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে ২০১১ সালে শুরু হওয়া সরকারের ২৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ খনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে সরকার। প্রকল্পের দীর্ঘ মেয়াদী সুফল ও জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টিতে আন্দোলনের মুখে প্রকল্পে যুক্ত হয় পাখিমারা টিআরএম প্রকল্প। আর সেই থেকে টিআরএম এলাকায় ক্রসড্যাম প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। গতবার নদীর নাব্যতা ধরে রাখতে দ্রুত ক্রাসড্যাম স্থাপন ও টিআরএম বিল ব্যবস্থাপনা ও পেরিফেরিয়াল বাঁধ সংস্কারের দাবিতে রীতিমত আন্দোলনে নেমেছিল এলাকাবাসী। নদীর স্বর্থ রক্ষায় একটি বেসরকারি এনজিও ও উপজেলা পানি কমিটির ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়।
কপোতাক্ষ নদের নাব্যতা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানকল্পে সরকার গত ২০১১ সালে ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পে (১ম পর্যায়)’ পাখিমারা বিলে টিআরএম স্থাপন ও প্রায় ৯০ কিমি. নদী খনন করে। টিআরএম চলাকালে মূল নদের উপর ক্রসড্যাম দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারবাহিত পলি উপরাংশে না ঢুকিয়ে টিআরএম প্রকল্পের বিলে প্রবেশ করানো হয়। এরপর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে বিস্তীর্ণ জনপদের পানি নিষ্কাশনে তুলে দেয়া হয় ক্রসড্যাম। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ায় ২০১৬-১৭ সালে জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পায় কপোতাক্ষ অববাহিকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ। তবে সর্বশেষ ক্রসড্যামটি অপসারণ হলেও নতুন করে স্থাপন না হওয়ায় প্রতিদিন জোয়ারবাহিত প্রচুর পরিমাণে পলি টি.আর.এম এর উজান অংশে ঢুকে দ্রুত গতিতে নতুন করে ভরাট হচ্ছে নদীর তলদেশ।
সূত্র জানায়,গত ২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী থেকে শুরু হয়ে ক্রস ড্যামটি ১৬ জুন পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশসহ নির্দেশনা দেয় পাউবো। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ড্যামটির নির্মাণ শুরু করলেও নানা প্রতিকূলতার মুখে শেষ পর্যন্ত বাঁধ ধরে রাখতে নাপারায় সরসরি পাউবোর হস্তক্ষেপে স্থাপন হয় ক্রসড্যাম। পরে বর্ষা মৌসুমে ফের তুলে দেয়া হয় তা।
উত্তরণ ও পানি কমিটির যৌথ গবেষণায় তাদের বিশেষজ্ঞরা এরআগে জানিয়েছিল, ক্রসড্যাম নাথাকায় পলিযুক্ত জোয়ারবাহিত প্রতি লিটার পানিতে প্রায় ৫০ গ্রাম পলি নদীতে অনুপ্রবেশ করছে। তারা এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে জরুরী ভিত্তিতে ক্রসড্যাম স্থাপনের তাগিদ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছিল।
এরআগে পেরিফেরিয়াল বাঁধ ভেঙ্গে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রাম প¬াবিত হয়ে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিজ্ঞতার বিষয়টিকে সামনে রেখে সর্বশেষ টিআরএম প্রকল্পের নিকটবর্তী ক্রসড্যাম স্থাপনে পাউবোর গুরাত্বারোপের তাগিদসহ তা বিলম্ব হওয়ায় মূল প্রকল্পটি হুমকির মুখে রয়েছে বলেও আশংকা প্রকাশ করেন।
এব্যাপারে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম দৈনিক খুলনা টাইমসকে জানান,অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতের আওতায় পাখিমারা টিআরএম প্রকল্প এলাকায় ক্রসড্যাম স্থাপনে গত সপ্তাহে টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে শুরু হয়ে শেষের দিকে কাজ শেষ হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।