চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ কর দাতাদের তিন কোটি ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় খুলনার সহকারী কর কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদের জামিন নামঞ্জুর করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ (দায়রা জজ) আদালতে আবেদন করলে বিচারক মো. শহিদুল ইসলাম শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করেন। ২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর গ্রেফতারের পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খন্দকার মজিবর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, ২০১৭-১৮ সালে কর সার্কেল-১৪, বাগেরহাটে সহকারী কর কমিশনার হিসেবে কর্মরত থাকার সময় মেজবাহ উদ্দিন করদাতাদের করের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা রাখেন। পরবর্তীতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে একাধিক হিসাব খুলে ব্যাংক থেকে ওই টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। ২০১৭ সালের ৯ মার্চ থেকে ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিলের মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংক থেকে তিনি ওই টাকা আত্মসাৎ করেন। এ বিষয়ে দুদকের মামলার পর ১৬ অক্টোবর নগরীর নূরনগর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
অপর একটি সূত্র জানায়,বাগেরহাটে সহকারী কর কমিশনার হিসেবে কর্মরত থাকার সময় মেজবাহ উদ্দিন করদাতাদের করের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে জমা রাখেন। এবং ঐ টাকার বিরাট একটি অংশ তার এক মাদকসেবী বন্ধু এবং কর অফিসের চতুর্থ শ্রেনীর দুইজন কর্মচারী সরাসরী জরিত রয়েছেন । এবং আত্মসাতকৃর্ত অর্থের মোটা অংকের টাকা ঐ দুই কর্মচারী পকেটস্থ করেছে । এদের মধ্যে মেজবাহ উদ্দিনের বরখাস্থকালীন সময়ে একজন কর্মচারীকে খুলনা কর অঞ্চলের এক প্রভাবশালীর সুপারিশে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হয়নি । সরকারী এই বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাথে স্ব স্ব অফিসের ঘনিষ্ঠ কর্মচারী ছাড়া বরখাস্থকৃত সহকারী কর কমিশনার মেজবাহ উদ্দিনের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে দুদক সুত্রে জানাগেছে ।
উল্লেখ,খুলনার সহকারী কর কমিশনার মো. মেঝবাহ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে তিন কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪২৯ টাকা সরকারি রাজস্ব আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি খুলনা কর অঞ্চলের বিভিন্ন সার্কেলে কর্মরত থাকা অবস্থায় করদাতাদের দেওয়া আয়কর রাজস্ব তহবিলে জমা না দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হিসাবে জমা দিয়ে নিজেই তা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। ঐ ঘটনা তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম গত বছরের (২৮ মে) এ আদেশ দেন। এর আগে, গত সোমবার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত (খালিশপুর) অঞ্চলে মামলাটি দায়ের করেন খুলনা কর অঞ্চলের উপ কর কমিশনার (সদর প্রশাসন) খোন্দকার তারিফ উদ্দীন আহমেদ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, মেঝবাহ ২০১৭ সালের ৮ মে থেকে ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর পর্যন্ত খুলনা কর অঞ্চলের অধীনস্ত কর সার্কেল-১৪, বাগেরহাটে কর্মরত সহকারী কর কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ সময় তিনি করদাতাদের রাজস্ব হিসাবে দাখিল করা মোট ৪০টি পে-অর্ডার, ডিডি, ক্রস চেক সরকারি কোষাগারের পরিচালিত হিসাবে চালানের মাধ্যমে জমা না দিয়ে বাগেরহাট সোনালী ব্যাংক শাখায় জমা দেন। পরবর্তীতে তিনি সেই একাউন্ট থেকে নিজের স্বাক্ষরে ২ কোটি ১০ লাখ ২৪ হাজার ৪২৩ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। এছাড়া একাধিক চেকের মাধ্যমে বাগেরহাট ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা, সার্কেল-১৭ মোংলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক থেকে ২৯ লাখ ৯০ হাজার ৯৯৭ টাকা, জনতা ব্যাংক থেকে ২৯ লাখ ৯৯৮ টাকা, সার্কেল-১০ মাগুরায় কর্মরত থাকা অবস্থায় সোনালী ব্যাংক থেকে ৩১ লাখ ৪০ হাজার ৪৮৪ টাকা, সার্কেল-২২ ভেড়ামারায় কর্মরত থাকা অবস্থায় জনতা ব্যাংক থেকে ৪২ লাখ, ৭ হাজার ৫২৭ টাকাসহ সর্বমোট ৩ কোটি ৪৭ লাখ ৩৪ হাজার ৪২৯ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
উক্ত টাকা ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজস্ব তহবিলে জমা না দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাধিক বেতন হিসাব খুলে ব্যাংক থেকে টাকা নিজে উত্তোলন করেছেন। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরে তদন্তের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেন যুগ্ম কর কমিশনার মো. মঞ্জুর আলম। তদন্তে অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যায়। পরে রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
এ ঘটনার পর কর কমিশনার কার্যালয়ের আভ্যন্তরীণ তদন্তে মেজবাহের অভিযোগের প্রমাণ মেলার পর তাকে প্রথমে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।এর পর গত ২১ জুলাই খুলনার কর অঞ্চলের উপ-করকশিনার খন্দকার মো. তারিফ উদ্দিন উপ-পরিচালক দুদক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগটি দুদক আমলে নিয়ে প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশক্রমে গত ১৩ অক্টোবর দুদকের সহকারী পরিচালক মো. শাওন মিয়া মেজবাহকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার বাদী মোঃ শাওন মিয়া জানান, সবকিছু যাচাই-বাছাই শেষে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশক্রমেই তার বিরুদ্ধে মামলা ও আটক করা হয়েছে।