চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ ‘বাংলাদেশে বিয়ে করতে দেড় থেকে দুলাখ টাকার দরকার। কিন্তু এত টাকা পাবো কোথায়। মা নেই, বাবা নেই। মালয়েশিয়াতে পরিচিত অনেকে আছে। ভেবেছিলাম, ওখানে গিয়ে তাদের কাউকে বিয়ে করে ফেলবো। কাজ নয়, বিয়ে করতেই মালয়েশিয়া যাচ্ছিলাম।’ ট্রলারডুবি থেকে বেঁচে ফেরা রোহিঙ্গা নারী ইছমত আরা এমনটাই বললেন।
টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ট্রলারে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যাচ্ছিলেন ইছমত আরা। কিন্তু সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপের কাছে পৌঁছালে তাদের ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে ১৫ জনের প্রাণহানি হলেও তিনি বেঁচে যান। এ ঘটনায় ৭৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী। যাত্রীদের মধ্যে ৪০ জনের মতো এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
কোস্টগার্ড সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার করা যাত্রীদের বেশির ভাগই নারী। তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কোস্টগার্ডের ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম হামিদুল ইসলাম পূর্বপশ্চিমকে জানান, রোহিঙ্গাদের একটি বড় দল অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার আশায় সোমবার রাত ৮টার দিকে টেকনাফের নোয়াখালীপাড়া থেকে মাছ ধরার দুটি ট্রলারে চেপে রওনা হয়। এর মধ্যে একটি ট্রলার সাগরের পাথরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ভোর পৌনে ৬টার দিকে সাগরে দুর্ঘটনায় পড়ে ডুবতে শুরু করলে জেলারা তা দেখে কোস্ট গার্ডকে খবর দেয়। তিনটি স্টেশন থেকে কোস্ট গার্ড সদস্যরা গিয়ে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উদ্ধার অভিযান শুরু করে। তাদের সঙ্গে অভিযানে যোগ দেয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি জাহাজ বিএনএস দুর্জয়।
উদ্ধার হওয়া কয়েকজন রোহিঙ্গার বরাত দিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের কোস্টগার্ডের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট নাইম উল হক বলেন, দালালদের মাধ্যমে তারা উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির থেকে বের হয়ে মালয়েশিয়া যাচ্ছিলেন। নিহতদের মধ্যে চারজন শিশু, বাকিরা নারী।
উদ্ধার করা কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষেরা উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থীশিবির থেকে বের হয়ে তারা মালয়েশিয়া যাচ্ছিলেন।
কোস্টগার্ডের তিনটি দল, সেন্টমার্টিন বোট মালিক সমিতি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেছেন, মরদেহগুলো সকাল সাড়ে ১০টায় টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে নিয়ে আসা হয়েছে ট্রলারে করে।
এদিকে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করা আরেকটি ট্রলারেরও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন জানান, রাতের কোনো এক সময়ে ট্রলারটি মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিল। সম্ভবত অতিরিক্ত মানুষ বোঝাইয়ের কারণে সেটি সাগরে ডুবে যায়। এ ঘটনায় জীবিত উদ্ধারকৃতদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তখন বিস্তারিত জানা যাবে।