বিশেষ প্রতিনিধিঃপারুলিয়া সাঁপমারা খাল পুন:খননের এ কি হাল ? কাজ শেষ হওয়ার আগেই পাড়ের মাটির ধ্বসে আবার পুরন হচ্ছে খাল। একে চলছে দুর্নীতি তাতে যে টুকু কাজ হচ্ছে তাও বিফলে যাওয়ার উপক্রম। এ যে মানুষের আশার গুড়ে বালি দেওয়ার মত। দেবহাটাÑআশাশুনি এলাকার বিশাল জনগোষ্টির একটি বৃহত অংশ খাল খননকে সাধুবাদ জানিয়ে আশায় বুকবেঁধে ছিল। তাদের এ আশা যেন বিলীন হতে চলেছে অসাধু কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কারনে। ভেসে যেতে বসেছে কয়েক কোটি সরকারী টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে খাল পুনঃখননের নামে চলছে অনিয়ম আর লুটপাট। একদিকে খালের দু’পাশের কয়েকশ’ গাছ অবৈধভাবে কেটে দিয়েছে ঠিকাদারের লোকজন। অপরদিকে খালের গতিপথ পরিবর্তন করে প্রভাবশালীদের বাঁচাতে অসহায়দের ভোগ দখলীয় জমিতে খাল-খনন করার অভিযোগও উঠেছে। কিন্তু এখনও রয়ে গেছে প্রভাবশালী প্রতিপত্তিদের ভবনসহ বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর এসবের প্রতিবাদ করলে ভুক্তভোগী ভূমি মালিককে সরকারি কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ এনে মামলা দেওয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। ভুক্তভোগী ভূমি মালিকরা উপায়ান্তর না পেয়ে ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস হারিয়ে ফেলছে। মামলার ভয়ে কোনপ্রকার বাঁধা দিতে পারেনি তারা। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে এর প্রতিকার চেয়ে ইউএনও, জেলা প্রশাসন, এন্ট্রিক্রপশান ইউনিটি, প্রধান মন্ত্রীর দফতরসহ বিভিন্ন স্থানে লিখিত অভিযোগ দায়ের প্রস্তুতি চলছে বলে জানাগেছে।এদিকে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে লাল নিশানের দাপটে খালের খনন কাজ কিছু কিছু যায়গায় শেষ করে ফেলতে শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পাড়ের মাটি পাড়ে রেখে সেখান থেকে মাপ ধরে কাটছে তলদেশের মাটি। এক মাথা দিয়ে শেষ করে আসতে আসতে পাড়ের মাটি ধ্বস নেমে পুরন হয়ে যাচ্ছে আবার খাল। একে খালের পাড়ের ফলজ বনজ গাছ, বসতবাড়ি ভেকু মেশিন চালিয়ে বিনষ্ট করেছে ঠিকাদারের লোক। তাতে এ সরকারী টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি নজর কেড়েছে সচেতন মহলের। তাদের দাবী সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ একটু নজর দিলে এ দূর্নীতি প্রতিহত করা সম্ভব। উল্লেখ্য দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত নদী ইছামতির সাথে সংযুক্ত সাঁপমারা খালের খনন কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরীতে এখনো তৎপর রয়েছে ভূমিদস্যুরা। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবদ্ধতা নিরসনে বদ্ধ পরিকর। তাই তিনি এদেশের নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাওড়সহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করেছেন। যার ধারাবাহিকতায় আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলার সংযোগ হওয়া সাঁপমারা খাল খননকল্পে গ্রহন করা হয়েছে দুইটি প্রকল্প। সরেজমিনে যেয়ে জানা যায়, গত বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে নদী খনন পর্যায়ে দেবহাটার সাঁপমারা খালটির আশাশুনীর শোভনালী ইউনিয়নের কাটাখালী হতে দেবহাটার পারুলিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত দেবহাটা সদর ইউনিয়নের ভাতশালায় ইছামতি নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খননের জন্য দুইটি প্যাকেজে ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বরাদ্দ পরবর্তী টেন্ডারের মাধ্যমে খাল খননের দুটি প্যাকেজের কাজ পায় পটুয়াখালীর আবুল কালাম আজাদ ও ঢাকা বিজয় নগরের বশির উদ্দীন এমকে এন্টারপ্রাইজ নামের দুই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সাঁপমারা খালটির ৯ কিলোমিটারের এ খননকাজে উপরিভাগে গড়ে ৩০ মিটার এবং তলদেশ গড়ে ৯ মিটার হারে খনন করা হবে বলে জানিয়েছেন পাউবো কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া খালটি নন কাজ চলাকালে দু পাশের ১৫ ফিট করে জায়গা রেখে খালের খননকৃত মাটি ফেলতে হবে বলে জানা গেছে। সরকারীভাবে সাঁপমারা খাল খননের প্যাকেজ দুটির একটির কাজ আগামি জুন ও অপরটি আগামি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে খনন কাজ শুরুর পর খালটির দু’পাশে বসবাসরত শতশত পরিবারকে তাদের ঘর, আসবাবপত্র সরিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এতে কিছু ভূমিহীন পরিবার তাদের ঘরবাড়ী, আসবাবপত্র গবাদীপশু, নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। তাদের জন্য নতুন আবাসস্থলের দাবী জানানো হলে তাদের পুনবাসনের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। এ ব্যপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র এসও সাইদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে,তিনি ধ্বসনামা স্থানগুলো পুনরায় মাটি তুলে সংস্কার করা হবে বলে জানান। খনন কাজের কার্য-সহকারীরা, কর্মকর্তারা ও ঠিকাদারের সাথে যোগসাজসে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেন,এ বিষয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই । এ ছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের আক্কেল আলী নামের এক সহকারী টাকা নেওয়ার বিষয়ে অস্বীকার করে বলেন,জনপ্রতিনীধিদের কথামত ঘর রাখা বা ভাঙা হয়েছে,তাছাড়া ধ্বস নামার বিষয়ে পুনরায় কাজ করবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, সরকারের নানামূখি উন্নয়নের একটি অংশ খাল খনন। ইছামতি নদী থেকে যাতে সরাসরি পানি দেবহাটা হয়ে আশাশুনির মরিচাপ নদীতে ওঠা নামা করতে পারে সেই লক্ষ্যে খালটি খনন হচ্ছে। খনন কাজ শেষ হলে এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হবে বলে মনে করেন তিনি। সাথে সাথে এই এলাকার মৎস্য চাষে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান।