চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে গেল আমন মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হয়নি। তবে এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চলতি বোরো মৌসুমে কোমর বেঁধে নেমেছে প্রান্তিক চাষিরা। চাষিরা বিরামহীন গতিতে চালিয়ে যাচ্ছেন ধান রোপনের কাজ। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, খুলনা মেট্রো ও জেলায় এবার ৬১ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গেল অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর বোরো আবাদে লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ৩ হাজার ৮৫৮ হেক্টর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরো ধানের আবাদ ভালো হবে এমন আশা করছেন কৃষিবিদরা।
কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে খুলনা মেট্রো ও জেলার নয় উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬১ হাজার ৬৭৫ হেক্টর। এর মধ্যে খুলনা মেট্রোতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬০ হেক্টর। যার দৌলতপুর থানায় ৪৫৫ হেক্টর ও লবণচরা থানায় ৩০৫ হেক্টর। এছাড়া জেলার নয় উপজেলায় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ হাজার ৯১৫ হেক্টর। এর মধ্যে রূপসা উপজেলায় ৫ হাজার ৫০০ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ৪ হাজার ৬০০ হেক্টর, দিঘলিয়ায় ৫ হাজার ২০০ হেক্টর, ফুলতলায় ৪ হাজার ৬০০ হেক্টর, ডুমুরিয়ায় ২২ হাজার ৩৫০ হেক্টর, তেরখাদায় ৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর, দাকোপে ৯৫ হেক্টর, পাইকগাছায় ৪ হাজার ৫২০ হেক্টর ও কয়রায় ৪ হাজার ৬৪০ হেক্টর। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৫৬ হাজার ৬১৭ হেক্টর এবং খুলনা মেট্রোতে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ হাজার ২০০ হেক্টর। গেল অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ৩ হাজার ৮৫৮ হেক্টর।
রূপসার ইলাইপুর দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা কৃষক আরিফ সরদার বলেন, ‘এ বছর সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছি। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে আমন ধানের ফলন না হওয়ায় এ বছর চাষিরা বোরো আবাদের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েছে।’ বাগমারা গ্রামের কৃষক খোরশেদ আলম, মোঃ ওমর আলী ও আলেমান শেখ বলেন, ‘বোরোর আবাদ করেছি, যদি কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে ফলন ভালো হবে আশা করছি। এছাড়া অন্যান্য উপজেলায় খোঁজ নিয়ে একই তথ্য জানা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ পঙ্কজ কান্তি মজুমদার এ প্রতিবেদককে বলেন, ড্যাপ সারের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ‘যেহেতু ড্যাপ সারের ব্যবহার বেড়েছে সেহেতু ধানের ফলনও বাড়ছে। কৃষকরা আগে ড্যাপ কিনতেন ২৫ টাকা কেজি দরে। এখন সেই সার বিক্রি হচ্ছে ১৬ টাকা দরে। তিনি আরও বলেন, কৃষকরা নতুন নতুন জাতের ধান চাষ করছেন। তাই আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বোরো ধানের আবাদ ভালো আশা করা যাবে।’ রূপসা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ ফরিদুজ্জামান বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাতের কারণে ঘাটভোগ এলাকার বিলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। সেহেতু, চলতি বোরো মৌসুমে আবাদ কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো থাকলে কাঙ্খিত বোরো ধানের আবাদ আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বটিয়াঘাটায় ৪ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরার আবাদ করা হয়েছে।’ ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘ডুমুরিয়ায় ২১ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে তাহলে আবাদ ভালো হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।’ তেরখাদা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আঠারোবেঁকী নদীর বাঁধ খুলে দেওয়ায় জমিতে লবন পানি ঢুকেছে। এ কারণে এ বছর প্রায় ৫শ’ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’ দাকোপ উপজেলা কৃষি অফিসার মেহেদী হাসান খাঁন বলেন, ‘মাত্র ৮০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আবাদ ভালো হতে পারে বলে তিনি জানান।’ দিঘলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমন মৌসুমে ফলন ভালো না হওয়ায় কৃষকরা বোরো আবাদের উপর বেশি ঝুঁকেছে। তিনি বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে আবাদও ভালো হবে।