চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ করোনাভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেই গত দুই সপ্তাহে ২ হাজার ৫০০ জন প্রবাসী খুলনায় ফিরেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ৬৬ জনকে হোম কোয়ারেনটাইনে (সন্দেহভাজনদের পৃথক করে রাখা) থাকার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। মাঠ পর্যায়ে তথ্য না থাকায় বিপুল সংখ্যক প্রবাসীকে এখনো সনাক্ত করা যায়নি। ফলে প্রবাসীদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে খুলনায় স্বাস্থ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত ৬৬ জনকে হোম কোয়ারেনটাইনে থাকার নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না অনেকেই। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কতার তোয়াক্কা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন লোকালয়ে। এতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
জানা যায়, খুলনায় গত ১ মার্চ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত চীন, ইতালি, ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ওমান, বাহরাইন, সৌদী আরব, দুবাই, অষ্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন ২ হাজার ৫০০ জন প্রবাসী। বুধবার বিকেলে খুলনা সার্কিট হাউস সম্মেলনকক্ষে জেলা টাস্কফোর্সের বিশেষ জরুরি সভায় মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশ এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, বিদেশ থেকে যারা এসেছেন তাদের বেশিরভাগ ভারত থেকে ফিরেছেন। ইমিগ্রেশনের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা চলে গেছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। তাদের অনেকেই দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন পরিবার-পরিজন ও বন্ধু বান্ধবদের সাথে।
এদিকে খুলনা সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ জানান, মূলত ৬ মার্চের পর থেকে প্রবাসীদের যারা খুলনায় ফিরেছেন তাদেরকে হোম কোয়ারেনটাইনে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহ ও তাদেরকে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের হোম কোয়ারেনটাইনে রাখতে প্রশাসনকে ভূমিকা নিতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ পর্যবেক্ষণে থাকা ব্যক্তিদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
অথচ ৬ মার্চের পর থেকে ১৬ ই মার্চ পর্যন্ত খুলনা মহনগরেই প্রসাবীরা প্রবেশ করেছে প্রায় এগারো শত। এর মধ্যে বেশীর ভাগ ব্যক্তি ভারত থেকে আগত হলেও। আজ দুপুর পর্যন্ত কোয়ারেনটাইনে আছে মাত্র ৬৬ জন। যা সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছাড়া আর কিছুই না বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে বিদেশিদের পাশাপাশি স্থানীয়দের মাঝেও সন্দেহজনক করোনার লক্ষণ জ্বর-সর্দি কাশি দেখা যাচ্ছে। গতকাল খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের সুইপার বস্তিতে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত স্থানীয় যুবককে হাসপাতালে নেওয়া হলে সে করোনা আক্রান্ত বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। ওই যুবক চট্টগ্রাম বন্দরের মালামাল পরিবহণের কাজ করতেন। সেখান থেকেই জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে ফিরেছে। এ ধরনের সন্দেহভাজনদের হোম কোয়ারেনটাইনে রাখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
অপরদিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে করোনা ভাইরাস সন্দেহে চিকিৎসা না করায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবী তার পরিবারের। বাবলু চৌধুরি ৪০ নামের ওই ব্যক্তি বাগেরহাটের মংলা উপজেলার জয় বাংলা ব্রিজ এলাকাযর বাসিন্দা। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, দুপুর একটার দিকে তাকে জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হলেও সেখানে তার চিকিৎসক তাকে বহিঃবিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসতে বলেন কিন্তু কিন্তু বহির্বিভাগ থেকেও তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। অনেকক্ষণ হাসপাতাল গ্রাউন্ডে থাকার পর আবার বহিঃবিভাগ থেকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার সময় ওই রোগী মারা যায়।
আজ বৃহস্পতিবার কেসিসির এক বিশেষ সভায় সিদ্ধান্ত হয় আগামীকাল শুক্রবার সকাল থেকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত খুলনার শহীদ হাদিস পার্কসহ কেসিসির সকল পার্ক পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
এছাড়াও খুলনা জেলা প্রশাসনের খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসন স্বাক্ষরিত এক গণ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় করোণা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধের লক্ষে পরবর্তি নির্দশনা না দেওয়া পর্যন্ত খুলনা জেলায় সকল প্রকার সভা, সেমিনার, মিটিং, সামাজিক অনুষ্ঠান, গণজমায়েত এবং ধর্মীয় গণজমায়েত আয়োজন না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এবং খুলনা জেলায় সকল প্রকার পার্টি সেন্টার, কমিউনিটি সেন্টার, কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে।
তবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে খুলনায় হোম কোয়ারেনটাইন জোরদার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন। তিনি বলেন, বিদেশে ফেরত ব্যক্তিদের কার্যকর হোম কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করতে না পারলে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। তিনি বলেন, কোয়ারেনটাইনের নিদের্শনাপ্রাপ্ত ব্যক্তি জনবহুল স্থানে বিচরণ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাড়িতে কোয়ারেনটাইনের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকলে সরকারিভাবে স্থাপিত কোয়ারেনটাইন স্থাপনায় আশ্রয় নিতে হবে। সকল ব্যবস্থার সঠিক প্রতিপালন নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বয়ে মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং টিম গঠন করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। হোম কোয়ারেনটাইন ব্যবস্থা কার্যকরভাবে প্রতিপালনের বিষয়টি প্রতিদিন দুইবার করে পর্যবেক্ষণ করবে। এ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষকদের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।