চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে সবকিছু বন্ধ থাকায় খুলনায় কর্মহীন অসহায় মানুষের সমাগম এড়িয়ে ঘরে ঘরে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের চালুকৃত হটলাইনে যে কেউ সহায়তার কথা জানাতে পারেন, রাতে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেওয়া হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে শুক্রবার রাতে ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ছয়টি টিম খুলনার বিভিন্নস্থানে ১৩৬ জনের বাড়িতে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌছে দিয়েছেন।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, সরকারের ডিজিটাল কনসেপ্ট থেকে হটলাইন কলের মাধ্যমে সংকটাপন্ন মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পাঠানোর আইডিয়া তার মাথায় আসে। এতে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
শুক্রবার রাতে ‘Door to Door Essential Goods Distribution in Corona Crisis through Digital Survey’ সংক্রান্ত উদ্যোগের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকার দেন জেলা প্রশাসক।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে যে খাদ্যদ্রব্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো সমাজের সামর্থবানদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা। অনেকে নাম প্রকাশ না করে সেখানে সহায়তা দিচ্ছেন।
খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষিতে সরকার ঘোষিত ‘ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন’ কর্মসূচির কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ভাবনী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি বরাদ্দের ত্রাণসামগ্রী বিতরণের জন্য নীতিমালা রয়েছে। যেটি হচ্ছে- সরকারি সহায়তা জেলা প্রশাসনের অনুকূলে আসে। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের (সংসদ সদস্য, উপজেলা ও ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউপি সদস্য) মাধ্যমে তা বিতরণ করতে হয়। সেখানে সংশ্লিষ্ট এলাকার তালিকা ধরে ভিক্ষুক, বয়স্ক বা একেবারে হতদরিদ্র শ্রেণি সেটি পেয়ে থাকে। কিন্তু এ ধরনের তালিকায় যাদের নাম নেই এবং ঘরে খাবার না থাকলেও যারা লজ্জা বা সংকোচের কারণে কাউকে বলতে পারেন না, মূলত তাদের কথা মাথায় রেখে হটলাইন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, হটলাইনের মাধ্যমে ই-মেইল, এসএমএস ও ফোনকল- এ তিনটি পদ্ধতিতে ঘরে খাবার না থাকা মানুষের নাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ জন্য উপদেষ্টা, বাস্তবায়ন এবং মনিটরিং- তিন ধাপে তিনটি কমিটি কাজ করছে। নাম তালিকাভুক্তির পর একটি ডাটাবেজ তৈরি করে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ঘরে ঘরে।
কত দিন এবং কতজনকে এ প্রক্রিয়ায় খাদ্যসামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে- এ প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, যতদিন পর্যন্ত করোনা সংকট থেকে উত্তোরণ না ঘটে, ততদিন এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে যতজন মানুষ হটলাইনে যোগাযোগ করবেন, ততজনকে খাবার দেওয়া হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কারণে সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে।
হটলাইনের বিষয়টি নতুন এবং অনেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না- এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে হেলাল হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসন, মিডিয়া সেল ও আঞ্চলিক তথ্য অফিস (পিআইডি) থেকে পত্রিকা ও অনলাইনে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রেস ক্লাব, অনলাইন পত্রিকা, ফেসবুক এবং গণমাধ্যম কর্মীদের বলা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো প্রচারণা চালানো হবে। এর বাইরে এ সংক্রান্ত উপদেষ্টা ও বাস্তবায়ন কমিটিতে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির সদস্য রয়েছেন; তারাও বিষয়টি প্রচার করছেন।
এভাবে ব্যাপক জনগোষ্ঠির জন্য খাবার সরবরাহের উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থের যোগান সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে হেলাল হোসেন বলেন, এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা নেওয়ার সুযোগ নেই। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এটা করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবেই রিসোর্স এবং অর্থ সংগহ করা হচ্ছে। তবে সরাসরি নগদ অর্থকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। যারা এগিয়ে আসছেন, তাদের কাছ থেকে খাদ্যসামগ্রী নেওয়া হচ্ছে। অনেকে গোপনে চাল, ডাল, আলু, তেল, লবণসহ বিভিন্ন সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করছেন।
সংকট পরবর্তী সময়ে এই উদ্যোগ চালু রাখার পরিকল্পনা রয়েছে কিনা- এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, অবস্থা এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার আলোকে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বিসিএসের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ২০১৮ সালের ১৩ আগস্ট খুলনা জেলায় যোগ দেন।
ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানো কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান ও মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জিয়াউর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ই-মেইল, এসএমএস এবং ফোনকলের মাধ্যমে প্রাপ্ত নামগুলো যাচাই-বাছাই করে একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পরে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে ৬টি টিমে ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ঘরে ঘরে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার রাতে প্রথম দফায় ১৩৬ জনের ঘরে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এতে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
খাদ্যসামগ্রীর তালিকায় ৭ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, আধা কেজি ডাল, আধা কেজি লবণ, ২৫০ গ্রাম তেল এবং একটি সাবান রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ উদ্যোগ সফল করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জিয়াউর রহমানকে আহ্বায়ক করে আরো পাঁচজন সহকারী কমিশনারের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সমন্বয় কমিটির সদস্যরা হলেন, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান খান, মো. ইসমাইল হোসেন, সেটু কুমার বড়ুয়া, মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল, মো. রাকিবুল হাসান। চালু করা হটলাইন নম্বরগুলো- ০১৪০১১৭৫০০৬, ০১৭৭৯২৯২৯৭৮, ০১৭১২০৫০৫৬৩, ০১৬৭৫৬৩৪৯০০, ০১৭১১০৮৪৩০১। (জেলা প্রশাসক, ফোন: ০৪১-৭২১১১১)।