অনলাইন ডেস্কঃমণিরামপুর জনতা ব্যাংক শাখার ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২০ গ্রাহকের ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনা দৈনিক সময়ের খবরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বেরিয়ে আসছে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। পত্রিকায় সংবাদ পড়ে মণিরামপুর দলিল লেখক সমিতি ও এক মুদি ব্যবসায়ী খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাদেরও ১৫ লাখ টাকা একাউন্টে জমা না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতাপ বিশ্বাস নামে এক হোটেল ব্যবসায়ীসহ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, একাউন্টে টাকা না পেয়ে প্রতিবাদ করলে তাদের টাকা ফেরত দেয়া হয়। এদিকে ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারী আলমগীর কবীর ও আশীষ কুমার ঘোষ স্থানীয় হওয়ায় নিজেদের রক্ষা করতে বিভিন্ন স্থানে তদবির মিশন অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ।
পৌর শহরের মুদি ব্যবসায়ী মিশন সাহা জানান, গত বৃহস্পতিবার সকালে পত্রিকা পড়ে জানতে পারি মণিরামপুর জনতা ব্যাংক শাখার অফিসার আলমগীর ও আশীষ গ্রাহকদের ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন জনতা ব্যাংকে তার লেনদেনের টাকার মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজারের হিসেব নেই। অবশ্য তার আত্মসাৎ করা ওই টাকা যে কোন মাধ্যমে ফেরত পেয়েছেন বলে তিনি জানান। একই ভাবে মণিরামপুর দলিল লেখক সমিতির ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা একাউন্টে জমা না করে আত্মসাৎ করা হয়। জানাজানি হওয়ার পর দলিল লেখক সমিতির টাকা ফেরত দিতে কিছু দিন সময় নিয়েছে জড়িতরা। মণিরামপুর উপজেলার পরিষদের সামনে হোটেল ব্যবসায়ী প্রতাপ বিশ্বাস জনতা ব্যাংক শাখায় তার একাউন্টে জমা করার জন্য ব্যাংকে গিয়ে ক্যাশ অফিসার আলমগীর কবীরের নিকট ২৪ হাজার টাকা দিয়ে স্লিপ গ্রহণ করেন। পরে তিনি বিশেষ কারণে ৫ হাজার টাকা উত্তোলন করতে ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন তার একাউন্টে কোন টাকা নেই। এক পর্যায় প্রতিবাদের মুখে ক্যাশ অফিসার আলমগীর কবীর ঘটনা বেগতিক দেখে তার হোটেলে গিয়ে টাকা পৌঁছায়ে দিয়ে আসেন।
এদিকে ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের অপরাধে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আলমগীর কবীরকে ওএসডি এবং আশীষ ঘোষকে অন্যত্রে বদলী করার ঘটনা গণমাধ্যম কর্মীরা জানতে পারলেও প্রথম দিকে তেমন মুখ খোলেননি মণিরামপুর জনতা ব্যাংক শাখার ম্যানেজার। সূত্রমতে, ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জড়িতরা স্থানীয় হওয়ায় যশোরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অতি গোপনীয়তার সাথে মোটা অংকের ঘুষ বানিজ্য করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছেন। ক্যাশ অফিসার আলমগীর কবীর রিংকুর বাড়ি উপজেলার হানুয়ার গ্রামে এবং আশীষ কুমার ঘোষের বাড়ি পৌর শহরের থানা সংলগ্ন ঘোষ পাড়ায়। তবে গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ফলাওভাবে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর ঘটনার ব্যাপারে এখন মুখ খুলতে শুরু করেছেন মণিরামপুর শাখার ম্যানেজার এমরান হোসেন শামীম। তিনি বলেন, উক্ত ঘটনা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক চূড়ান্ত পদক্ষেপ যশোর এরিয়া অফিসের প্রধান মোঃ ফারুক আহমেদ ও ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মিজানুর রহমান সাহেব নেবেন। উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ব্যাবস্থা নেয়নি বরং বিষটি ধামা চাপা দিতে তারা মোটা অংকের ঘুষ বানিজ্য করে একজনকে বদলী ও অন্যজনকে ওএসডি করা হয়েছে । এটা কোন শাস্তির মধ্যে পড়ে না জানালে,ব্যাবস্থাপক শামিম জানান,ভুক্তভোগিদের কোন লিখিত অভিযোগ নেই বলেই ব্যাবস্থা নেয়নি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ।এমরান হোসেন শামিম আরো জানান,ব্যাংকে অথবা তদন্ত কমিটির কাছে ভুক্তভোগিরা অভিযোগ না করায় যশোর এরিয়া অফিস আলমগীর কবীর ও আশীষ কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নেয়া হয়নি । তাছাড়া আশীষ কুমার ঘোষ স্থানীয় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীন দলের লোক এবং আলমগীর কবির মনিরামপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় তারা বহাল তবিয়াতেই রয়েছেন । ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎকারীরা চাকরী বিধি লংঙ্গন করছে অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা বা বিভাগীয় ব্যাবস্থা নেয়া হলো এটা কেমন করে সম্ভব জানতে চাইলে,এমরান হোসেন শামিম জানান,শাস্তি দেয়ার অথরটি আমি নই । তাছারা যাদের টাকা গিয়েছে তারা কিছুই বলেনা আপনারা সাংবাদিকরা কেন এই বিষয়টি নিয়ে ঘাটা ঘাটি করেন । তিনি আরো জানান, আমি কোন তথ্য দিতে পারবো না তথ্য নিতে হলে মণিরামপুর প্রেসক্লাবে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন । তবে তিনি অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন শাস্তি ও বিভাগীয় মামলা করার এখতিয়ার রয়েছে যশোর এরিয়া অফিসের প্রধান মোঃ ফারুক আহমেদ ও ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মিজানুর রহমান সাহেবের । তারা কেন ব্যাবস্থা নেয়নি সেটা তাদের কাছে প্রশ্ন করুন বলে সংযোগটি কেটে দেন ।
এদিকে ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনা ব্যাপক চাউর হওয়ার পর সচেতন মহলসহ স্থানীয়দের মধ্যে জোর দাবি উঠেছে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের আইনের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের আত্মসাৎ করা টাকা পর্যায়ক্রমে পরিশোধের মাধ্যমে আপোষ-মীমাংসায় রক্ষা পেতে জড়িতরা ও তাদের রক্ষাকারী যশোর এরিয়া অফিসের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন মহলে তদবির মিশন শুরু করেছে।