অনলাইন ডেস্কঃখুলনার দাকোপ উপজেলার ঢাকি নদীর তীব্র স্রোতে জালিয়াখালি গ্রামের বেড়িবাঁধ ব্যাপক ভাঙনে অব্যাহত রয়েছে। ওই এলাকার ফসলি জমি বাঁচিয়ে মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। শনিবার (৩ আগষ্ট) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়নের জালিয়াখালি গ্রামে ওয়াপদার রাস্তার ওপর মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেন এলাকাবাসি। ঘন্টাব্যাপি কর্মসূচিতে এলাকার প্রায় দুই শতাধিক তরুণ-তরুণী ও স্থানীয় হতদরিদ্র লোক অংশ নেন।বাঁধ ও অভ্যন্তরীণ নিষ্কাশনব্যবস্থার উন্নয়নে উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি-১) কাজ চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩২ নম্বর পোল্ডারের আওতায় চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দ্য ফার্ষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো অব হেনান ওয়াটার কনজারভেন্সি’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি এ কাজগুলো করছে। তবে ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতে ওই পোল্ডারের মানুষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভাঙনরোধে নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য অস্থায়ীভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ওই বাঁধের বাহিরে প্রায় ৩‘শ বিঘা ফসলি জমি বাদ পড়ে যায়।মানববন্ধনে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষত-বিক্ষত কামারখালোর বিলীন হওয়া ছোট জালিয়াখালি গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি রক্ষার জন্য চলমান বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজের প্রোফাইল পরিবর্তন করে বাদ পড়া জায়গাজমি ওয়াপদার রাস্তার ভিতরে নিয়ে আসার দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। শনিবারের মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল বিভিন্ন দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড। যেমন, ‘রিলিফ চাই না, চাই নদীশাসন’, ‘ভাঙলে রাস্তা ডুববে ঘর, ঘুমাচ্ছে কি সরকার’, ‘কর্তৃপক্ষের নাকে তেল, আমাদের মাথায় পাকা বেল’, ‘রাস্তার ওপরে আর কতদিন, আমাদের ঘরে ফিরিয়ে দেন’, ‘মানবতার মা শেখ হাসিনা বেড়িবাঁধ সোজা করে, আমাদের ঘরে ফিরিয়ে দেন’, ‘নদীভাঙন রোধ করুণ, এলাকা রক্ষা করুণ’।মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, কামারখোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পঞ্চানন মণ্ডল, কেন্দ্রীয় হিন্দু, বৌদ্ধ, খীষ্ট্রান, যুব-ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি দেবাশীষ রায়, সাবেক ছাত্রলীগ সম্পাদক রতন মণ্ডল, ইউপি সদস্য আবু ছাত্তার সানা, সুশঙ্কর বাছাড়, সুজিৎ কুমার মণ্ডল, শুধা রাণী হালদার, প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার গোলদার, সহকারি শিক্ষক দ্বীনবন্ধু মণ্ডল, স্থানীয় বাসিন্দা মুকুন্দ রায়, পরিতোষ বাইন, শিক্ষার্থী মোমিতা মণ্ডলসহ আরও অনেকে।বক্তারা বলেন, জালিয়াখালি গ্রাম বেশির ভাগই ঢাকি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়ে কয়েক শ লোক অসহায় জীবন কাটাচ্ছেন। এ বছর বর্ষার শুরু থেকে আবারও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে প্রায় শতাধিক বসতভিটা, কয়েক শ একর কৃষিজমি নদীতে বিলীন হওয়ার আশষ্কা রয়েছে।তাঁরা বলেন, ভাঙনরোধে নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য অস্থায়ীভাবে যে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল তা বর্তমানে ছোট জালিয়াখালির ওয়াপদার রাস্তাটি প্রায় দুই কিলোমিটার আঁকা-বাঁকা রয়েছে। এখন বেড়িবাঁধটি প্রায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবন্ধ রেখে সোজা করে নদীর পাশ দিয়ে মজবুত বাঁধ নির্মাণ করলে এলাকার বাদ পড়া প্রায় ৩‘শ বিঘা ফসলি জমি ফিরে পাওয়া সম্ভব। তাঁরা আরও বলেন, বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙনের ঝুঁকি থেকে ঠেকাতে শিগগির পদক্ষেপ না নিলে এসব জায়গা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। কর্মসূচিতে বক্তারা ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ওয়াপদার রাস্তাটি আঁকা-বাঁকা না করে সোজাভাবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান।