অনলাইন ডেস্কঃআন্তর্জাতিক বাজারে রাবারের দাম কমছে, কিন্তু দেশে রাবার উৎপাদন খরচ বাড়ছে। এতে করে দেশীয় রাবারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত রাবারের দামের চেয়ে অনেক কমে বিদেশ থেকে আমদানি করা যাচ্ছে। ফলে উদ্যোক্তারা দেশি রাবারের চেয়ে আমদানি করা রাবার ব্যবহার করছেন। ফলে দেশীয় রাবার শিল্প ধ্বংসের মুখে পড়েছে। উদ্যোক্তারা বলেছেন, এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশীয় রাবার শিল্প টিকিয়ে রাখা যাবে না। রাবার বাগান মালিকরা জানান, ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিকেজি রাবারের দাম ছিল ১২০-১৩০ টাকা। গত নভেম্বরে তা প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় নেমে আসে। বর্তমানে প্রতিকেজি রাবার বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। অথচ দেশের বাগানগুলোয় রাবার উৎপাদনের পর তা প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে বিক্রির উপযোগী করতে খরচ পড়ে প্রায় ১৬০ টাকা, যা আন্তর্জাতিক বাজার দরের চেয়ে গড়ে ৪০ থেকে ৬০ টাকা বেশি। রাবার আমদানিতে বর্তমানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৭ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। সব মিলে ২২ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। শুল্ক ও আমদানি ব্যয় মিলে দেশের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিদেশ থেকে আমদানি করা যাচ্ছে। যে কারণে এখন দেশীয় রাবার উদ্যোক্তারা না কেনায় সেগুলো উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিদেশে রপ্তানি করতে হচ্ছে। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন রাবার বাগান মালিকরা। রাবার সংগ্রহের উৎকৃষ্ট সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কম হওয়ার কারণে ওই সময়ে দেশের বাগান মালিকরা রাবার সংগ্রহ বন্ধ রেখেছিলেন। এপ্রিলে এসে দাম কিছুটা বাড়ার পর তারা আবার রাবার সংগ্রহ শুরু করেন। বাংলাদেশ রাবার বাগান মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ওয়াহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, একসময় রাবার সম্ভাবনাময় খাত হলেও সরকারের অবহেলা ও উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতার অভাবে বর্তমানে শিল্পটির অবস্থা খুবই করুণ। রাবার বাগান ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি হলেও এখানে কোনো ধরনের সরকারি প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা নেই। এ খাতে বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন পাওয়া সময়সাপেক্ষ বলে অনেকেই অপেক্ষা করতে চায় না। বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের সূত্র জানায়, দেশে রাবার শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। রাবারের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে আশির দশকে একে ‘সাদা সোনা’ হিসেবে অভিহিত করা হতো। কিন্তু দেশে রাবার চাষ আধুনিকায়ন না করায় এ শিল্প এগুতে পারছে না। বর্তমানে দেশে রাবারের চাহিদা রয়েছে ২৫ হাজার টন। প্রতিবছর এই চাহিদা ৩ শতাংশ হারে বাড়ছে। দেশে বছরে উৎপাদিত হচ্ছে ২৪ হাজার টন রাবার। কিন্তু তারপরও দেশীয় রাবার এখন উদ্যোক্তারা কিনছেন না। উৎপাদিত রাবারের ৬০ শতাংশ দেশীয় উদ্যোক্তারা কিনছেন, বাকি ৪০ শতাংশ বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ২ হাজার ৬৮২ একর জমিতে রাবার চাষ করা হচ্ছে। এগুলোতে গাছ রয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৬১৬টি। এর মধ্যে উৎপাদনশীল গাছের সংখ্যা ৯৪ হাজার ৫৬৮টি। বর্তমানে রাবারের ব্যবহার বেড়েছে। প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার পণ্যে রাবার ব্যবহৃত হচ্ছে। রাবার দিয়ে প্রধানত গাড়ির চাকার টায়ার, টিউব, জুতার সোল, স্যান্ডেল, ফোম, রেক্সিন, হোসপাইপ, গাম, খেলনা, কারখানার পণ্য সামগ্রী, চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের এক সমীক্ষায় বলা হয়, দেশ থেকে বর্তমানে ৯ হাজার ৫০০ টন রাবার রপ্তানি হচ্ছে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। কিন্তু অর্জিত হয়েছে ২ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। বাংলাদেশ রাবার বাগান মালিক সমিতির সাবেক মহাসচিব জাফরুল আলম বলেন, রাবার চাষ কৃষিভিত্তিক প্রকল্প হলেও একে গণ্য করা হয় শিল্প হিসেবে। ফলে কৃষি খাতের সুবিধাগুলো এই শিল্প পায় না। তিনি একে কৃষিভিত্তিক শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়ে এই খাতের সব প্রণোদনা দেওয়ার দাবি করেন।