নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মহান মে দিবস আজ। এ দিন শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণার উৎস এই দিন। এদিকে বকেয়া মজুরি প্রদানের আশ্বাসে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের শ্রমিকদের আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। রবিবার শ্রমিকদের বকেয়া ৪ সপ্তাহের মজুরি এবং শিগগিরই আরও ৪ সপ্তাহের মজুরি প্রদান করা হবে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে বিকেলে বিজেএমসির চেয়ারম্যানের আশ্বাসে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
পাটকলের কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতারা জানায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে টানা একমাস বন্ধ থাকার পর খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো আংশিকভাবে চালু হয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল থেকে পাঁচ দিন ধরে খুলনার স্থানীয় বা আবাসিক শ্রমিকদের নিয়ে মিলগুলো উৎপাদন শুরু করেছে। খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, দিঘলিয়ার স্টার, আটরা শিল্পাঞ্চলের আলীম ও ইস্টার্ণ এবং যশোরের জেজেআই জুট মিল মিলগুলো আংশিক চালু রয়েছে। পাটকলগুলোতে স্থায়ী এবং বদলি মিলিয়ে প্রায় ২৪ হাজার শ্রমিক থাকলেও বর্তামানে সাড়ে তিন হাজারের মতো শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছেন। তবে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ সপ্তাহ মজুরি বকেয়া থাকায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মোঃ দ্বীন ইসলাম বলেন, আমরা ভেতরের শ্রমিকদের কাজে যেতে উৎসাহিত করেছিলাম। তবে শ্রমিকরা আর কাজে যেতে চাচ্ছে না। সরকার ৮ সপ্তাহের মজুরি দেওয়ার জন্য টাকা ছাড় দিয়েছে সেখানে বিজেএমসির চেয়ারম্যান দুই সপ্তাহের মজুরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বকেয়া দেওয়ার কথা ছিল। এখন রবিবার দেওয়ার কথা বলছে তাও দুই সপ্তাহের। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।
প্লাটিনাম জুট মিল সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক মোঃ হুমায়ূন কবীর জানান, শ্রমিকদের ১৫ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। দোকানীরা এখন শ্রমিকদেরকে বাকিতে চাল-ডাল দিচ্ছে না। তিনি বলেন, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় বিজেএমসিকে ১১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এই টাকা দিয়ে শ্রমিকদের বকেয়া ৮ সপ্তাহের মজুরি দেওয়ার কথা। কিন্তু মিল কর্তৃপক্ষ রোববার ২ সপ্তাহের মজুরি দিতে চায়। সে কারণে বৃহস্পতিবার সকালে ৯টি পাটকলের সিবিএ নেতাদের নিয়ে সভা করে তারা ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
প্লাটিনাম জুট জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন জানান, বিকেলে বিজেএমসি চেয়ারম্যান তাকে ফোন করে জানান যে, আগামী রোববার বকেয়া ৪ সপ্তাহের মজুরি প্রদান করা হবে। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও ৪ সপ্তাহের মজুরি দেওয়া হবে। তিনি কর্মসূচি পালন না করার আহ্বান জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে শনিবার ও রবিবারের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তবে আজ শুক্রবার সিবিএ-ননসিবিএ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করা হবে।
প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ভোর ৫টায় কাজে গিয়ে ৮ ঘণ্টা কাজ হয়। ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বিরতি থাকে। শ্রমিক কলোনি থেকে মাস্ক পরেই বের হতে হয়। গেট দিয়ে ঢোকার সময় থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। এরপর সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ভেতরে ঢুকতে হয়। শ্রমিক সংখ্যা অনেক কম থাকায় বেশ ফাঁকা ফাঁকা অবস্থায় থেকে কাজ করা যাচ্ছে। তিনি বলেন, শ্রমিকদের আগের ১০ সপ্তাহ এবং সাধারণ ছুটি থাকাকালীন সময়সহ ১৫ সপ্তাহের মতো মজুরি বকেয়া রয়েছে। শুনেছি ১১৬ কোটি টাকা আমাদের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো টাকা হাতে পাইনি।
প্রকল্প প্রধান রইশ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিজেএমসির নির্দেশনা অনুযায়ী সীমিত পরিসরে মিল কলোনীতে থাকা শ্রমিকরা ভোর ৫টা থেকে কাজে যোগ দিচ্ছেন। মিলে প্রায় ৩ হাজার ২০০ জন শ্রমিক রয়েছেন। বৃহস্পতিবার কাজে যোগ দেন ৩৩২ জন শ্রমিক। প্রথম পর্যায়ে ২০০ শ্রমিক নিয়ে কাজ শুরু করে এখন কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। সবাই শ্রমিক কলোনির বাসিন্দা। তাঁদেরকে মাস্ক দেওয়া হয়েছে। পিপিই দিতে পারলে ভালো হতো, তবে সে সামর্থ নেই। মুখে মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই তারা কাজ করছেন। শ্রমিকরাও অনেক সচেতন হয়েছেন।
প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ গোলাম রব্বানী জানান, মিল কলোনীতে অবস্থানরত শ্রমিকরাই মিলের কাজে যোগ দিয়েছেন। স্বল্প পরিসরে শ্রমিক নিয়ে মিল চলছে। স্বাভাবিক সময়ে দুই হাজার ৪০০ থেকে আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বৃহস্পতিবার ২২১ জন শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। শ্রমিকদের জন্য থার্মাল স্কানার, মিল গেটে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, জীবাণু নাশক স্পে করে পা ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাস্ক অবশ্যই ব্যবহার করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এখনও বিজেএমসি থেকে কোনো চিঠি পাননি। শনিবার নির্দেশনামূলক চিঠি পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা করছেন। তবে রোববার মজুরি প্রদান করা হবে এটা নিশ্চিত।
বিজেএমসির আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মোঃ বণিজ উদ্দিন মিঞা বলেন, বিএডিসি ও খাদ্য অধিদপ্তরের বস্তা তৈরির জন্য সীমিত পরিসরে কার্পেটিং জুট মিল ব্যতীত এই অঞ্চলের বাকী ৮টি পাটকল চালু করা হয়েছে। এ অঞ্চলে প্রায় ১১ হাজার স্থায়ী শ্রমিক এবং ১২-১৩ হাজার বদলি শ্রমিক রয়েছেন। যার মধ্যে ৩০ শতাংশের মতো অর্থাৎ সাড়ে তিন হাজারের মতো শ্রমিক কাজে যোগ দিয়েছে বলে বিভিন্ন মিলের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শ্রমিকদের বকেয়া মজুরির বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার শ্রমিকদের জন্য যে টাকা দিয়েছে তার পুরোটাই শ্রমিকদের মজুরি খাতে ব্যয় করা হবে। এই টাকা অন্য কোনো খাতে ব্যয়ের সুযোগ কোনোভাবেই নেই। সুষ্ঠ আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রেখেই তাদের মজুরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। রবিবার থেকে মজুরি প্রদান করা হবে।