চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ সরকারি-আধাসরকারি কর্মচারী, দোতলা-তিনতলা বাড়ির মালিক এবং মাঝারী মানের ব্যবসায়ীদেরকে দশ টাকা কেজির চালের কার্ড দেয়া হয়েছে খুলনায়। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৩১ টি ওয়ার্ডের প্রায় সব কয়টিতেই এমন অনিয়ম স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত প্রাপ্যরা।
সূত্রমতে , করোনা ভাইরাস সংক্রামন মোকাবেলায় সাধারন ছুটি ঘোষনা করায় স্বল্প আয়ের লোকেরা খাদ্য সংকটে না পড়ে সে জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় ১০ টকা দরের চাল বিক্রি শুরু করে। যা দিনমজুর, রিক্সাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) সহ অন্যান্য সকল কর্মহীন মানুষ পাবে বলে পত্র জারি করা হয়। সরকারি এই নিদের্শনা মানা হচ্ছে না খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। নগরীর ৩১ টি ওয়ার্ডের তালিকা এককভাবে তৈরী করছেন স্থানীয় কাউন্সিলরা। তারা এই বিশেষ ওএসএম এর তালিকায় সরকারি- আধাসরকারি কর্মচারীদের তালিকাভুক্ত করেছেন, তালিকাভুক্ত হয়েছেন দোতলা বাড়ির মালিকও এবং বিভিন্ন ধরণের ব্যবসায়ীরাও।ভোক্তা হিসেবে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে নির্ধরন করা যাবে না শর্ত থাকলোও একই পরিবারের একাধিক খানা প্রধান দেখানো হয়েছে। সরেজমিনে নগরীর ১৫ এবং ২৪ নং ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি অনিয়ম – সেখানে আর্থিক সচ্ছল, বাড়ির মালিক এবং সরকারি- আধাসরকারি চাকুরীজীবিদের নামে এই কার্ড ইস্যু হয়েছে। উক্ত ওয়ার্ডের আলমনগর এলাকায় একই পরিবারে একাধিক কার্ড প্রদান করা হয়েছে। ভোক্তা হিসেবে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তিকে পরিবারের প্রধান দেখানো হয়েছে।
এছাড়া নগরীর ১৯, ১৮,১৭ এবং ১০ নং ওয়ার্ডে তৃতীয় লিঙ্গের বসবাস রয়েছে। ঐ ওয়ার্ডগুলোয় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) একজনের নামও এই তালিকাভুক্ত হয়নি। খুলনায় তৃতীয় লিঙ্গের গুরুমা বলে খ্যাত শিমলা হিজড়া বলেন নগরীতে ২২০ জন হিজড়া আছে তার মধ্যে সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে ৭০ জন্য সরকারি কিছু খাদ্য সাহায্য পেয়েছেন কিন্তু ১০ টাকার কোন চাল কেউ পায়নি। খালিশপুর থানা সমাজসেবা কর্মকর্তা জানান, তৃতীয় লিঙ্গের নগারিকদের ১০ টাকা কেজি দরের তালিকায় অন্তর্তভূক্ত করার জন্য কাউন্সিলদের কাছে জানালেও কোন কাজ হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি ওয়ার্ড অফিসের কর্মচারীরা জানান, সময়ের অভাবে একই তালিকার কিছু নাম পরিবর্তন করে সরকারি ত্রান, এনজিও’ র ত্রাণ এমনকি ১০ টাকার চালের নামের তালিকা কাউন্সিলরদের নির্দেশমতে দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলররা কোন নিয়মকানুন মানেন না, তাদের পচ্ছন্দের লোকদেরই বারবার বিভিন্ন তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করতে বলেন, যেখানে তাদের কিছু করার থাকে না।
এদিকে, খুলনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর আলম জনান, সরকারী বরাদ্দ অনুযায়ী খুলনা মহানগরীর ৩১ টি ওয়ার্ডে মোট ১৪ হাজার ৪০০ শত মানুষকে বিশেষ ওএমএস এর অর্থ্যাৎ ১০ টাকার চালের আওতায় আনা হয়েছিল, চলতি মাসে আরো তিন হাজার ছয়শত বাড়ানো হবে। মহানগরীতে মোট ১৮ হাজার পরিবারকে এই চালের আওতায় আনা হবে। চলতি মাসে তারা মোট ২০ কেজি করে চাল পাবেন। তিনি জানান, কেসিসির মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সুবিধাভোগির তালিকা তৈরী করছেন। খাদ্য বিভাগ শুধু ডিলারের মাধ্যমে চাল বিতরন করছে । তালিকা তৈরীতে অনিয়ম হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা তালিকা তৈরী করছেন তারাই বিষয়টি বলতে পারবেন।
তবে কার্ড বিরতণে কোন অনিয়ম হয়নি দাবি করে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক সাংবাদিকদের জানান, তালিকা করেছিলো ওয়ার্ড কাউন্সিলরগণ। তিনি বলেন, এমনও মানুষ আছে যারা দালান বাড়িতে বসবাস করেন, কিন্তু তাদের আয়ের উৎসও নেই। তারা সমাজে কারো কাছে চাইতে পারে না। এমন লোকদেরকেও আমরা কার্ড দিয়েছি।