মোঃ এনামুল হক :: করোনাভাইরাস সমগ্র বিশ্বের জন্য এখন এক আতঙ্কের নাম। শুরু থেকেই করোনা ভাইরাস ও এর ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছে অনুশীলন মজার স্কুল নামে সেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। কখনও স্কুলের শিশুদের সচেতনতা নিয়ে, কখনও জীবাণু নাশক স্প্রে, সাবান ও মাস্ক বিতরণ আবার কখনও শিশু ও হতদরিদ্র বেকার শ্রমজীবী পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরণ নিয়েই সমাজের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছিলো সংগঠনটি।
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট বৈশ্বিক এই মহামারী অচলাবস্থা সৃষ্টি করেছে দেশের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে। দীর্ঘদিন ধরে সম্পূর্ণ বাংলাদেশজুড়ে লকডাউন চলছে ফলে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে এবং চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। কর্মহীন হতদরিদ্র এই শ্রমজীবী মানুষদের হাহাকার দেখে অনুশীলন মজার স্কুলের নির্বাহী পরিচালক অলোক চন্দ্র দাস বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন এবং তাগিদ অনুভব করেন নতুন কিছু করার। তিনি ভাবলেন এভাবে যদি অনির্দিষ্ট কালের জন্য লকডাউন চলতে থাকে তবে অচিরেই বাংলাদেেশ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হবে। আর তাই আসন্ন খাদ্য সংকট মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে অলোক চন্দ্র দাস সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং প্রকল্পটির নাম দিয়েছেন “আঙ্গিনা কৃষি” প্রকল্প। অলোক চন্দ্র দাস মনে করেন এই প্রকল্পের মাধ্যমে যদি কৃষক সহ কৃষি কাজে উৎসুক সকল শ্রেনী-পেশার মানুষদের উদ্বুদ্ধ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ বীজ ও কীটনাশক বিনামূল্যে সরবরাহ করা যায় এবং সকল সামাজিক সংগঠন গুলোকে উদ্যোগ গ্রহণ ও উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করা যায় তবে পতিত জমির যথাপোযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধি করে এই বৈষ্যিক মহামারিতে আসন্ন খাদ্য সংকট মোকাবেলায় সহায়ক হবে। কেননা অনেকের বাড়িতেই রয়েছে চাষাবাদযোগ্য খালি জায়গা। লকডাউনের কারণে প্রায় সকলেই অবসর সময় পার করছেন।বাড়ির পাশের পতিত এই সকল ভূমিতে সবজি চাষের জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছে প্রতিষ্ঠানটি। যারা আগ্রহী হয়ে এগিয়ে আসছেন তাদের কাছে “অনুশীলন মজার স্কুল”এর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় বীজ। ইতোমধ্যে নানান শ্রেণী পেশার মানুষদের মধ্যে প্রকল্পটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে নিজ উদ্যোগে যোগাযোগ করছেন। প্রতিষ্ঠানটিও যথাসম্ভব চেষ্টা করছে বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদি সরবরাহের। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক অলোক চন্দ্র দাস জানান এই প্রকল্পে বেশ কয়েকটি দিক দিয়ে মানুষ লাভবান হবে। সকলে এগিয়ে আসলে এই কার্যক্রমের মাধ্যমে আসন্ন খাদ্য সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব। যেহেতু বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ আর তাই এই প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতির মতন একটি বড় জায়গা সমৃদ্ধ হবে।ঘরে বসে থেকে অনেকের মধ্যেই কাজ করছে হতাশা ও বিষন্নতা। এসময় নিজ বাড়িতে কৃষি উদ্যোগ নিলে সকলে কাজে ব্যস্ত থাকবে এবং মানসিক অবসাদ কমবে। এছাড়া সবজি বাড়িতেই উৎপাদিত হলে কাঁচা বাজার করতে বার বার বাজারে যেতে হবেনা। ফলে করোনা ছড়ানোর মাত্রা কমবে। নিজ বাড়িতে সাস্থ্যকর উপায়ে চাষাবাদের কারণে এসকল খাদ্যে থাকবেনা ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কীটনাশক। এজন্য তারা একই সাথে পাবে পুষ্টিকর এবং সাস্থ্যসম্মত খাদ্য।
এ পর্যন্ত অলোক চন্দ্র দাস বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন এবং প্রায় ৫০ জন তরুন ও যুবককে কৃষি উদ্যোগ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করছে। এছাড়াও শতাধিক বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ এই প্রকল্পের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পতিত জমিতে কৃষি কাজ শুরু করেছেন।
সামাজিক সংগঠন ” বন্ধু সংঘ স্পোর্টিং ক্লাব” এর সভাপতি মাহাবুব খন্দকার বলেন অলোক চন্দ্র দাসের উদ্যোগে “আঙ্গিনা কৃষি” প্রকল্পটি সত্যি অসাধার! আমি প্রথমে ফেসবুকে কার্যক্রমটি দেখতে পায়। তখন আমি নিজ উদ্যোগে তার সাথে যোগাযোগ করি। তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শুনে আমার খুব ভাল লাগে এবং আমি সকলের সাথে মতবিনিময় করি। সবাই এই কাজে উদ্বুদ্ধ হলে অলোক চন্দ্র দাস তার প্রকল্পের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় উপকরণ আমাদের সরবরাহ করেন ও আমরা কাজ শুরু করে দেয়। আমরা আশাবাদী এক মাস পর এই প্রকল্পের আওতাধীন সকল পরিবার সবজির চাহিদা পূরন করতে পারবে।
টি.এস.বি ইউনিয়নের ০৪ নং ওয়ার্ডের শাখারী পাড়া গ্রামের হৃদয় বর্ধন বলেন লকডাউনের ফলে দীর্ঘদিন শাখার কাজ বন্ধ আছে। আয় বলতে এখন কিছুই নেই শুধু ব্যায় আর ব্যায়। একদিন ফেসবুকের মাধ্যমে অনুশীলন মজার স্কুলের “আঙ্গিনা কৃষি” প্রকল্পের বীজ বিতরণের পোস্টটি দেখতে পায়। তখন আমি আমার বাড়ির পাশের পতিত জমিতে সবজি চাষের কথা চিন্তা করি এবং জমি খননও করি কিন্তুু দীর্ঘদিন বেকার থাকার কারনে বীজ কিনতে পারছিলাম না। তখন আমি প্রকল্পের ঐ পোস্টটিতে “আমার বীজ লাগবে” বলে একটা কমেন্ট করি এবং আমাকে বীজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে। পরের দিন দুপুরে হঠাৎ তিনি বীজ নিয়ে আমাদের বাড়িতে হাজির। তিনি বীজ দিলেন এবং বোঝালেন আসন্ন খাদ্য সংকটের কথা ও আমার কাজের অনেক প্রশংসা করেন। আমি খুব উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম এবং বীজ বপন করেছিলাম। এখন ঐ জমিতে বীজ গুলো অঙ্কুরোধগম হয়েছে।
এই প্রকল্পটিতে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন রূপসা উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা ফরিদুজ্জামান ফরিদ এবং অবগত আছেন ইউএনও