আন্তর্জাতিক ডেস্কঃবিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫ লাখ ছাড়িয়ে যাওয়ায় সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এর ভ্যাকসিন অথবা প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলো। মানবদেহে কয়েকটি ভ্যাকসিনের প্রাথমিক পরীক্ষা সফল হলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে এখনও পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের ক্ষমতাসীন সরকার ভ্যাকসিন তৈরি, পরীক্ষা এবং উৎপাদনের কাজ সহজ করার জন্য দেশটির ১৯৪০ সালের ওষুধ ও কসমেটিকস আইনে শিথিলতা এনেছে। ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো যাতে করোনার ভ্যাকসিন দ্রুত বাজারে আনতে পারে সে কাজে সহায়তা করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেছেন, আগামী তিন থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে ভারতের ১৪টি ভ্যাকসিনের মধ্যে অন্তত চারটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শতাধিক ভ্যাকসিন পরীক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। তবে এসব ভ্যাকসিনের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীনের ক্যানসিনোর ভ্যাকসিন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিন, মডার্নার এমআরএনএ ভ্যাকসিন এবং নোভাভ্যাক্সের ভ্যাকসিন।
সম্প্রতি ভারতের পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি) ৩০টি নারী বানরের দেহে করোনাভাইরাসের একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি পেয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার ভারতে ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত ২ ঘণ্টায় ভারতে ৯ হাজার ৩০৩ জন আক্রান্ত এবং ২৬০ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার জনে; যাদের মধ্যে এখনও চিকিৎসাধীন ১ লাখ ৬ হাজার। বাকিরা ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া করোনায় ভারতে মোট ৬ হাজার ৭৫ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি গিলিয়াডের তৈরি রেমডেসিভিরই প্রথম ওষুধ; যা করোনা রোগীদের চিকিৎসায় চমৎকার ফল দেয়। গত মে মাসে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় জরুরি মুহূর্তে রেমডেসিভিরের ব্যবহারের অনুমতি দেয়। জাপানের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাও দেশটিতে এই ওষুধটি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের বিজ্ঞানীরা পাঁচটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন; ইতোমধ্যে এসব ভ্যাকসিন মানবদেহেও পরীক্ষা চালানো হয়েছে।
সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা ইলি লিলি বলছে, তারাই বিশ্বে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য অ্যান্টিবডি চিকিৎসার ট্রায়াল শুরু করেছে। প্রথম বেশ কয়েকজন রোগীর শরীরে তারা প্রাথমিক পর্যায়ের ডোজ প্রয়োগ করেছে। ইলি লিলি বিশ্বে প্রথম সংস্থা হিসেবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি চিকিৎসা শুরু করেছে।
অন্যদিকে, মার্কিন আরেক ওষুধ কোম্পানি ফাইজার তাদের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বিএনটি১৬২ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে ট্রায়াল চালিয়েছে। রাশিয়াও করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। সূত্র: বিজনেস ট্যুডে।