চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃকোভিড-১৯-এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত রেমিডেসিভির গ্রুপের ইনজেকশনের দাম কমানোর জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যে দাবি, তার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
মঙ্গলবার ( 0২ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে মান্না বলেন, করোনা পজিটিভ হওয়ার পর থেকে সমগ্র জাতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর আরোগ্যের জন্য প্রার্থনা করছে। যে মুহূর্তে সরকারদলীয় প্রভাবশালীরা বিদেশ গমন এবং বিভিন্ন বেসরকারি ও সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন, সেই মুহূর্তে অনেক সুযোগ থাকার পরও তিনি নিজ বাড়িতে এবং দেশের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য নিজের গড়ে তোলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বিবৃতিতে মান্না আরও বলেন, এমনকি অতি উচ্চ মূল্য হওয়ায় করোনা চিকিৎসার ইনজেকশন যা সর্বসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে, তিনি সেই চিকিৎসা নিতে অসম্মতি জানিয়েছেন। কেননা তিনি নিজে অতি উচ্চ খরচে এই ইনজেকশন নিতে পারলেও সাধারণ জনগণের পক্ষে তা সম্ভব হবে না। এজন্য এই ওষুধের মূল্য কমাতে তিনি সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। তিনি অনেক বছর যাবত সরকারের কাছে ওষুধের দাম কমাবার জন্য ঔষধ প্রস্তুতকারকদের স্বার্থরক্ষা করে বিভিন্ন সুপারিশ করেছেন যাতে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কখনোই এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। জীবন সংকটে থাকা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ওষুধের দাম কমানোর দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।
মান্না আরও বলেন, অন্যথায় দেশের সাধারণ জনগণের কথা মাথায় রেখে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী চিকিৎসা না নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে এই মহান ব্যক্তির কিছু হলে জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না এবং তা হবে ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ্যায়গুলোর একটি।
মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে হলেও জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এই দাবির সঙ্গে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি উল্লেখ করে মান্না বলেন, তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি এবং জনগণের কাছে তাঁর রোগমুক্তির জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি।
প্রসঙ্গত যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) সার্স ভাইরাস প্রতিরোধে বানানো রেমিডেসিভির ওষুধ করোনাভাইরাস প্রতিরোধেও কার্যকরী তবে বুলেট প্রুফ নয় এই ঘোষণা দেয় গত এপ্রিলের শুরুতে। তবে যেহেতু করোনা প্রতিরোধে এখনও সরাসরি কোনও ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি তাই এই ওষুধটিই গুরুত্ব পায় সারা বিশ্বে। এরপর গিলিড সায়েন্সেস-এর তৈরি এই ইনজেকশনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি আইনের সুযোগ নিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোও তৈরি করতে শুরু করে। বাংলাদেশ সরকার এই ওষুধটি তৈরির জন্য দেশের ৮টি প্রখ্যাত ওষুধ কোম্পানিকে অনুমতি দেয়। প্রথমে ৪ মে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর রেমডেসিভির উৎপাদনের জন্য বেক্সিমকো, এসকেএফ, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসকে অনুমতি দেওয়ার কথা জানায়। পরে আরও দুটি প্রতিষ্ঠান পপুলার এবং অপসোনিনও এ ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি পায়। এরইমধ্যে বেক্সিমকো ও এসকেএফ ওষুধটি তৈরি করে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরে জমা দিয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোও উৎপাদনের কাছাকাছি রয়েছে। তবে দেশে উৎপাদিত এই ইনজেকশনের দাম অত্যধিক বেশি। প্রতিটির দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মতো। আর একজন রোগীর কমপক্ষে ৭টি ইনজেকশন ব্যবহারের দরকার হতে পারে। ফলে এই ব্যয়বহুল ওষুধটি সাধারণদের নাগালে যে নেই সেটা নিয়েই রাজনীতিবিদরাসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই উদ্বিগ্ন।