চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ করোনার উপসর্গ, যেমন- জ্বর, হাঁসি-কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ এ ধরণের অসুস্থ্যতাজনিত রোগীদের খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডের ফ্লু কর্ণারে ভর্তি করা হয়। খুলনায় করোনা উপসর্গের প্রাদুর্ভাবের আধিক্যের কারণেই ২৪ মার্চ থেকে বিশেষ এ কর্ণারটি চালু করেন খুমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এ ফ্লু কর্ণারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত প্রায় তিন মাসে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (২০ জুন) একজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে শুক্রবারই (১৯ জুন) এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ৭জন। এটাই এ কর্ণারে একদিনে মারা যাওয়া সর্বোচ্চ সংখ্যা। তবে, ফ্লু কর্ণার চালুর আগে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান আরও ৫জন। সবমিলে খুমেক হাসপাতালে ৫৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
মৃতদের মধ্যে মৃত্যু পরবর্তী নমুনা পরীক্ষায় কয়েকজনের করোনা পজিটিভ, কয়েকজনের নেগেটিভ এবং অনেকেরই নমুন পরীক্ষার রিপোর্ট মেলেনি এখনও।
এদিকে, খুমেক হাসপাতালের এ ফ্লু কর্ণারে চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি এবং চিকিৎসকদের অবহেলাজনিত অভিযোগ রয়েছে রোগীর স্বজনদের।
শনিবার শুক্রবার ফ্লু কর্ণারে মারা যান নগরীর খালিশপুরস্থ নিউজপ্রিন্ট মিল এলাকার শাহাদাত হোসেনের স্ত্রী আলেয়া বেগম (৪০)। এর আগে শুক্রবার ফ্লু কর্ণারে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- খুলনা মহানগরীর খালিশপুরের কাশিপুর এলাকার মৃত আব্দুল গনি সরদারের স্ত্রী জরিনা বেগম (৬০), নগরীর ৫নং ঘাট এলাকার আহমেদ’র পুত্র জামশেদ আলম (৬০), মোহাম্মদ নগর এলাকার মফিজ উদ্দিন আহমেদ’র পুত্র নাসিম আহমেদ (৬০), রূপসা উপজেলার খাজাডাঙ্গার মৃত আরশাদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী (৬০), যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাবুল ফরাজীর স্ত্রী রুমা বেগম (৩৫), নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া গ্রামের মৃত নিতাইয়ের পুত্র কার্তিক (৪০) এবং নগরীর দক্ষিণ টুটপাড়াস্থ সরকারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত মৌলভী আহমেদ হোসেনের পুত্র আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ আহমেদ তারু (৬৯)।
খুলনায় করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রথম মৃত্যু : খুমেক হাসপাতালের সূত্র জানান, চলতি বছরের ১৯ মার্চ খুলনায় করোনার উপসর্গ নিয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওইদিন দুপুর ১২ টা ৫৫ মিনিট মোঃ বাবুল (৫২) নামে একজন কৃষকের মৃত্যু হয়। তিনি বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার জয় বাংলা গ্রামের বদরুল আলমের পুত্র। তিনি সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসার জন্য খুমেক হাসপাতালে আসেন। কিন্তু করোনার উপসর্গ থাকায় তাকে ভর্তি করতে গড়িমসি করেন সংশ্লিষ্টরা। যে কারণে জরুরী বিভাগেই তার মৃত্যু হয় বলে ওই সময় অভিযোগ করেছিলেন তার স্বজনরা। বিষয়টি পত্রিকার শিরোনামও হয়।
এদিকে, ২৪ মার্চ ফ্লু কর্ণারটি চালুর পর থেকে প্রায়শঃই সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগীরা মারা যাচ্ছেন। শুক্রবার (১৯ জুন) পযন্ত এখানে ৫৭জন রোগীর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এইদিনই করোনার উপসর্গ নিয়ে সর্বোচ্চ রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
ফ্লু কর্ণারে চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ : খুমেক হাসপাতালের ফ্লু কর্ণারে চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি এবং চিকিৎসকদের অবহেলাজনিত অভিযোগ উঠেছে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে। বিশেষ করে এখানে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের জন্য জরুরী অক্সিজেন, সিলিন্ডার এমনকি অক্সিজেন মিটারের সরবরাহও না থাকা এবং প্রয়োজনের সময় চিকিৎসক ও নার্সদের পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগে উঠে এসেছে।
ফ্লু কর্ণারে ১২ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ব্যবসায়ী শারাফাত হোসেন বাবলুর স্ত্রী জেসমিন সুলতানা অভিযোগ করেন, তার মুমূর্ষ স্বামীকে হাসপাতালের বেডে রেখে তাকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের মিটার এবং হিস্টাসিন ট্যাবলেট কিনে আনতে হয়েছে। ভিতরে একজন ওয়ার্ডবয় বসে থাকে। কোনো চিকিৎসক-নার্সকে ডেকেও পাওয়া যায় না। এমনকি ইন্টারনি কোন চিকিৎসক ২/১ বার আসলেও প্রয়োজনের সময় তাদেরও পাওয়া যায় না।
মৃত স্কুল ছাত্রী মীমের স্বজন আবির হাসান অনিকের অভিযোগ, ফ্লু কর্ণারে অক্সিজেনের স্বল্পতা রয়েছে। আমি চাইলেও সময়মত পাইনি। এছাড়া ওয়ার্ডবয় স্যালাইন লাগাতে পারে না। কিন্তু ডাক্তার-নার্স ঠিকমত রোগীর কাছে আসে না। ফলে এখানে ভর্তি রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পায় না।
কর্তৃপক্ষ যা বললেন : খুমেকের ফ্লু কর্ণারের ফোকাল পার্সন ও হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মিজানুর রহমান জানান, ২৪ মার্চ ফ্লু কর্ণার চালু হয়। ২০ জুন পযন্ত ৩২৯জন সুস্থ্য হয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের। ভর্তি আছেন ২৯জন।
চিকিৎসাজনিত অবহেলার বিষয়ে তিনি বলেন, রোগীদের চাহিদা অনেক। কিন্তু তাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু চাহিদা শতভাগ পূরণ করা সম্ভব হয় না।
অবশ্য খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সি মো. রেজা সেকেন্দার বলেন, রোগীরা অভ্যাস থেকেই চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ করে থাকেন। এটা আমরা মেনে নিতে রাজি না। ফ্লু কর্ণারে রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার চেষ্টা করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি করা হয় না বলেও দাবি করেন তিনি।