আন্তর্জাতিক ডেস্কঃদুই দিনের বিশেষ সফরে মঙ্গলবার (২৩ জুন) কাশ্মীরের লাদাখে পৌঁছেছেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল এমএম নারাভানে। গত ১৫ জুন এই অঞ্চলেই চীনা সেনাদের হাতে অন্তত ২৩ ভারতীয় সামরিক সদস্যের মৃত্যু হয়েছিল। লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পরিস্থিতি ও পরিকাঠামোর পর্যালোচনা করতেই তার এ সফর। দুই দিন ধরে এখানকার সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন। ইতোমধ্যে লাদাখে প্রায় ১০ হাজার ভারতীয় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
পাহাড়ে যুদ্ধের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিখ, গোর্খা, ইন্দো টিবেট বর্ডার ফোর্সের ব্যাটেলিয়নকে অধিক সংখ্যায় মোতায়েন করা হয়েছে। এমনকি বসানো হয়েছে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র। স্থানীয় স্তরে উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে কিংবা ফের সংঘর্ষ হতে পারে; এমন আশঙ্কা থেকেই এসব ব্যবস্থা নিয়েছে দিল্লি। আর কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর সেনাপ্রধান তা ঠিক করবেন।
ডিডব্লিউ-এর খবরে বলা হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে লাদাখে সেনাদের আর কী কী সাপোর্ট দরকার, কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, সংঘর্ষ হলে কী করা দরকার এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন সেনাপ্রধান। তিনি সম্পূর্ণ সামরিক ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখবেন। তারপর যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবেন। তাই দিল্লির কাছে তার এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এর আগে সোমবার (২২ জুন) চীন-ভারত লেফটেন্যান্ট জেনারেল পর্যায়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে চলে সেই বৈঠক। সেখানে ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিবারই সাত-আটটি বিষয় আলোচনায় তোলা হয়। চীনকে ম্যাপ দিয়ে বলা হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার দুই কিলোমিটারের মধ্যে বেইজিং প্রচুর নির্মাণকাজ করেছে। এটা তারা করতে পারে না। এগুলো ভেঙে দিতে হবে। চীনা বাহিনীকে ৪ মে-র আগের অবস্থানে ফিরে যেতে হবে। অর্থাৎ, তারা যে এগিয়ে এসেছে, সেখান থেকে পিছু হটতে হবে। সেনা সমাবেশ কমাতে হবে।
সোমবারের বৈঠকেও বিষয়গুলো উঠেছিল। কিন্তু কোনও সমাধান মেলেনি। এই সামরিক পর্যায়ে আলোচনায় অবশ্য এমনিতেই খুব বেশিদূর যাওয়া যায় না। তবে এ থেকে কূটনৈতিক পর্যায়ের আলোচনার ভিত তৈরি হয়।
এবারের বৈঠকে চীনা সেনাদের পিছু হটার কোনো ইঙ্গিত দেননি দেশটির কর্মকর্তারা। বরং তারা বারবার ভারতকে লাদাখে সামরিক উপস্থিতি কমাতে বলেছে।
চীনের আরও সুবিধা হয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কথায়। গত শুক্রবার সর্বদলীয় বৈঠকে মোদী বলেছেন, ভারতের ভূখণ্ডে কোনো চীনা সেনা নেই। ভারতের কোনো পোস্টও তাদের দখলে নেই। এরপরই গালওয়ান উপত্যকাকে নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে চীন।
ভারতের পক্ষ থেকে চীনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পরিস্থিতির প্রয়োজনে সেনাবাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে। এর আগে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দিল্লি সিদ্ধান্ত বদল করেছে। চীন অবশ্য এর বিরোধিতা করেছে।
ভারত আবার লাদাখে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রও বসিয়েছে। চীনা বিমান বাহিনীর তৎপরতার পাল্টা জবাব হিসেবেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সোমবারই দিল্লিতে সেনা কর্মকর্তাদের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, চীনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যে রাস্তাগুলো তৈরি করার কথা, তা জরুরি ভিত্তিতে করা হবে। যেসব রাস্তা তৈরি হচ্ছে সেগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।
চীন সীমান্তে ৩২টি রাস্তা তৈরি করছে ভারত। দক্ষ সেনাদের লাদাখে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের রাস্তা তৈরির কাজে নিয়োগ করা হয়েছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে ভারতীয় বাহিনীর এক ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, করোনার কারণে বহু ইঞ্জিনিয়ারকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের অনেককেই ফিরিয়ে আনা আনা হচ্ছে। পাঠানো হচ্ছে রাস্তা এবং পরিকাঠামো তৈরির কাজে।
সূত্র : ডিডব্লিউ