ফকির শহিদুল ইসলামঃ পাটকল শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ পূর্বক বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রিত ২৫টি পাটকলের উৎপাদন বন্ধে চুরান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার । বুধবার স্বরাস্ট্র মন্ত্রনালয়ের বৈঠক শেষে পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী জানান,চলতি বাজেটে পাটকল বন্ধে ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ রাখা হয়েছে । শ্রমিকদের গোল্ডেন হ্যান্ডশেখ এর মাধ্যমে তাদের পাওনা চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে । এ ক্ষেত্রে একজন শ্রমিক ৫ লাখ থেকে ৫১ লক্ষ টাকা পাবে । শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে পরবর্তীতে পাট সেক্টরে অভিজ্ঞদের দ্বারা পিপিপির মাধ্যমে মিলগুলো চালু করা হবে । এমন খবর পেয়ে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৯ পাটকল শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। মিল চালু রাখতে শ্রমিকরা রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন । শুধু খুলনাই নয় দেশের যেসকল জোনে রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল রয়েছে তারাও আন্দোলনের প্রস্তুতি সভা করছে । অপরদিকে আগামী ২৭ জুন বিজেএমসি দফতরে সকল পাটকলের প্রকল্প প্রধানদের নিয়ে উৎপাদন বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্ধ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে প্রস্ততিমূলক পূর্ব নির্ধরিত বৈঠক বাতিল করেছে বিজেএমসি ।
সরকারের পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৯ পাটকল শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা মিল চালু রাখতে শ্রমিকরা রাজপথে নামার প্রস্তুতি হিসাবে বৃহস্পতিবার/ শুক্রবার খুলনার ৯টি পাটকলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে সকাল ১০টায় খুলনার ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, স্টার, দৌলতপুর, আলিম, ইস্টার্ন, যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিল গেটে একযোগে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মিলের উৎপাদন চালু রাখা, নিয়মিত মজুরি প্রদান, পাট ক্রয়ের অর্থ বরাদ্দের দাবি জানান হয়। সমাবেশ শ্রমিক নেতা শাহানা সারমিন, হুমায়ন কবির, দ্বিন ইসলাম, মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন আজাদী, মুরাদ হোসেন, সোহরাব হোসেন, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদসহ, বিল্লাল হোসেন, আলাউদ্দিনসহ অন্যান্যরা বক্তৃতা করেন।
প্লাটিনাম জুটমিলের সিবিএর সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, গত ২৪ জুন প্রতিটি পাটকলে বিজেএমসির সচিব এ এফ এম এহতেশামুল হক স্বাক্ষারিত একটি চিঠি আসে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিজেএমসি নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলের উৎপাদন বন্ধে সরকারি সিদ্ধান্ত সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রস্ততিমূলক সভা আগামী ২৭ জুন বিজেএমসি দফতরে আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে পরিচালক ও পাটকলের প্রকল্প প্রধানদের ডাকা হয়েছে। এ চিঠি এবং মাননীয় পাটমন্ত্রী স্বরাস্ট্র মন্ত্রনালয়ের বৈঠক শেষে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা পাটকল শ্রমিকদের জন্য অতন্ত হতাশাজনক । এমন সংবাদে শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে তারা আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে একযোগে সকল মিলগেটে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। সমাবেশে মিল বন্ধের ষড়যন্ত্র রুখতে আন্দোলনের প্রস্ততি নিচ্ছে বলে জানান তিনি। খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিক জরিনা বেগম বলেন, আমরা সাধারণ শ্রমিক বিনা কাজে কখনও মজুরি নেইনি। কাজ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যা রোজগার করি তাই দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দুমুঠো খেয়ে বেঁচে আছি। মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দিলে আমরা কীভাবে বাঁচব। প্লাটিনাম জুটমিলের শ্রমিক কওছার আলী বলেন, শ্রমিক বান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি বলেন তোমাদের সকল অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তোমাদের আর মিলের কাজে আসতে হবে না। সেদিন বুঝব পাটকল বন্ধ করা হয়েছে। আর অন্য কেউ বললে তা বিশ্বাস করবো না। প্লাটিনাম জুটমিলের শ্রমিক খলিলুর রহমান বলেন, আদমজী জুট মিল বন্ধ করে বিএনপি ডুবেছিল, আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি।
খালিশপুর জুট মিলের সাবেক সাধারন সম্পাদক সরদার আলী আহমেদ বলেন, যে মিলের হুইসেল সুইচ বঙ্গকন্যা নিজহাতে চালু করে বলে দিলেন আলো জ্বালীয়ে দিলাম এ আলো যেন কখনো নিভে না যায় । প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সে আলো আমরা ধরে রেখেছি । কোন ষড়যন্ত্র করে খালিশপুর জুটমিল বন্ধ করা যাবেনা। তিনি আরো বলেন,বিজেএমসি অন্যান্ন মিলের মত এ মিল নয় । আমাদের পদ্ধতির মিলগুলো লাভজনক মিল । খালিশপুর জুট মিলের পদ্ধতিতে যেসব পাটকল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা চালু করেছেন তা সবই লাভজনক মিল । লাভজনক মিল বন্ধে নিশ্চই বিজেএমসির গভীর ষড়যন্ত্র করছে । সেই শুরু থেকেই বিজেএমসি আমাদের সাথে বৈষম্য মূলক আচারন করে আসছে । অন্য মিলের শ্রমিকরা বিপুল অংকের টাকা পাবে আমরাতো কিছুই পাবোনা । আমরা কাজ করলে পয়সা পাই । কাজ না করলে পাইনা তাহলে অন্যের দায় আমরা কেন । দেশে চলমান করোনার এই মহামারীর মধ্যেও খালিশপুর,দৌলতপুর,জাতীয় জুট মিলসহ এ পদ্ধতির চালুকৃত পাঁচটি পাটকল শুরু থেকেই লাভ জনক ভাবে উৎপাদন দিয়ে যাচ্ছে । কিন্ত বিজেএমসির নিয়ন্ত্রীত অন্যান্ন পাটকলের সাথে এ মিলগুলো নিয়ে তালগোল পাকাচ্ছে বিজেএমসি নামক দানব প্রতিষ্ঠান। আমরা প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে চালুকরা মিল কোনভাবে বন্ধ হতে দিবোনা । আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিবন্ধী সন্তান ।
ক্রিসেন্ট জুটমিলের শ্রমিক নেতা মুরাদ হোসেন বলেন, যে হাতে বঙ্গবন্ধু কন্যা মিল চালু করেছেন, সেই হাতে তিনিই মিল বন্ধ করবেন- এমনটা মিকরা বিশ্বাস করেন না।
বিজেএমসির চেয়াম্যান মোঃ আব্দুর রউফ বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন না পেলে বিস্তারিত বলা সম্ভব না। তবে সরকার সিদ্ধান্ত অফিশিয়ালি জানালে বলতে পারবো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে বলে তিনি জানান।